গ্রেফতার ভুয়ো ডাক্তার। প্রতীকী চিত্র।
ডাক্তার সেজে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ঘরে বসে থাকতেন তিনি। তাঁর মাধ্যমেই ডাক্তারি পড়ার ব্যবস্থা করা হয় বলে ফাঁদ পাততেন প্রতারকেরা। তারপরে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের হাতে ভর্তির নথি তুলে দেওয়া হত। নির্দিষ্ট দিনে কলেজে এলে পড়ুয়া ও তাঁর অভিভাবকেরা বুঝতে পারতেন, প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পড়ে কয়েক লক্ষ টাকা নষ্ট হয়ে গিয়েছে তাঁদের। শুক্রবার রাতভর বর্ধমান, কলকাতা ও দুই ২৪ পরগণায় তল্লাশি চালিয়ে ওই চক্রের চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ের বিক্রম ঠাকুর নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় কয়েকজনের নাম। তার পরেই কলকাতা ও দুই ২৪ পরগণায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। দত্তপুকুর থানার বামনগাছি থেকে রহমান শেখ ওরফে রাজু, কলকাতার কসবা থেকে শেখ সন্টু ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার নরেন্দ্রপুর থেকে পীযূষকান্তি ঘোড়ুইকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের শনিবার আদালতে তোলা হলে বিচারক ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠান।
পুলিশের দাবি, তদন্তে নেমে মেডিক্যাল কলেজের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ় সংগ্রহ করা হয়। অভিযোগকারীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে তাঁদের ছবি সংগ্রহ করা হয়। তাঁদের মধ্যে থেকে শক্তিগড়ের ওই প্রতারকের খোঁজ পায় পুলিশ। পুলিশের দাবি, ধৃত জেরায় তাঁদের জানান, পীযূষই ডাক্তার সেজে প্রতারণার ফাঁদ পাততেন। সেই ফাঁদে পা দিয়ে কসবার শুভাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক লক্ষ টাকা হারিয়েছেন। বর্ধমান থানায় অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, ৭ জানুয়ারি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের একটি ঘরে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ডাক্তারিতে ভর্তি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয় পীযূষের। ১৭ জানুয়ারি চূড়ান্ত কথাবার্তা হওয়ার পরে তাঁদের ভর্তি সংক্রান্ত নথি দেওয়া হয়। নথি নিয়ে প্রথম দিন কলেজে ক্লাস করতে গিয়ে তাঁর মেয়ে বুঝতে পারে, পুরোটাই প্রতারণা।
জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, বর্ধমান থানায় এই সংক্রান্ত পাঁচটি অভিযোগ হয়েছে। বর্ধমানের এক বাসিন্দা যাদবপুরের একটি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন বলেও থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। পুলিশের দাবি, আট লক্ষ টাকা থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হাতানো হয়েছে। চক্রের বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে, অনুমান পুলিশের। থানা সূত্রে জানা যায়, কসবার শুভাশিসের মতোই প্রতারিত হয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগণার বারুইপুরের তাপস পুরকাইত। তাঁকে মেডিক্যাল কাউন্সিলের সদস্যের কোটায় ভর্তির আশ্বাস দেওয়া হয়। কলকাতার বড়িশা ও বেহালার দুজনও প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ কৌস্তভ নায়েকের দাবি, ‘‘আমার কাছে এ নিয়ে তিনটি অভিযোগ এসেছিল। বর্ধমান থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলাম। মেঘালয় রাজ্যের কোটায় ভর্তির নাম করে আমার সই জাল করে প্রতারণা করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছিলাম।’’ কলেজ কর্তৃপক্ষ মনে করেন, ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে কলেজের কোনও হাত নেই, এটা না জানার কারণেই প্রতারণা হচ্ছে। অধ্যক্ষের দাবি, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি ছাড়া কাউকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা যায় না। ওই চিঠিতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা ও স্বাস্থ্য অধিকর্তার অনুমোদনথাকতে হবে।’’
পুলিশ জানিয়েছে, বর্ধমান মেডিক্যাল ছাড়াও কলকাতার বেশ কয়েকটি কলেজে ভর্তির নামে প্রতারণা করা হয়েছে। ধৃতরা ওই সব প্রতারণায় জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy