প্রতীকী ছবি
দোকানে দোকানে সামগ্রী মজুত করা থেকে পথে-ঘাটে বিজ্ঞাপনের প্রচার। সবই প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। চলছিল শেষ বেলার প্রস্তুতি। এরই মাঝে করোনা মোকাবিলায় ‘লকডাউন’ ঘোষণা হতেই মাথায় হাত বস্ত্র ব্যবসায়ীদের। দোকান-বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কার্যত মাঠে মারা গিয়েছে এ বছরের চৈত্র ‘সেল’-এর বাজার। কী ভাবে এই ক্ষতি সামাল দেবেন, তা ভেবেই কূল পাচ্ছেন না পশ্চিম বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলের কয়েক হাজার ব্যবসায়ী।
সাধারণত মার্চ মাসের গোড়া থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত চৈত্র ‘সেল’-এর বাজার চলে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে। এ সময় তিল ধারণের জায়গা থাকে না বাজারগুলিতে। কিন্তু এ বারের ছবিটা সম্পূর্ণ অন্য রকম। খাঁ-খাঁ করছে আসানসোলের মূল বাজার-সহ বরাকর, বার্নপুর, রূপনারায়ণপুর, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, উখড়া, বারাবনি—প্রতিটি বাজার।
প্রতি বছরের মতো এ বারও মার্চের গোড়া থেকে চৈত্র ‘সেল’-এর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। বুঝতেই পারেননি করোনা মোকাবিলায় এই কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে তাঁদের, জানালেন আসানসোল বাজারের বিশিষ্ট বস্ত্র ব্যবসায়ী বিমল মেহারিয়া। তিনি বলেন, ‘‘গোটা বছরের আয়ের প্রায় ৩৫ শতাংশ এই সময়েই উঠে আসে। কিন্তু এ বার পুরোটাই বসে গিয়েছে! দোকানে জিনিস মজুত রয়েছে। বিভিন্ন রকম ছাড়ের বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সবই জলে।’’ শুধু চৈত্র ‘সেল’-ই নয়। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসের বিয়ের বাজারও বসে গিয়েছে বলে জানালেন, বার্নপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী ভক্ত দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘চার মাস আগে থেকে চৈত্র সেল ও বিয়ের বাজারের সামগ্রী মজুত করা হয়েছে। সবই তালাবন্ধ হয়ে পড়ে। এ ক্ষতি কী ভাবে মিটবে বুঝতে পারছি না।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর একটি গোষ্ঠী সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে বরাকর এলাকায় উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বেশ কয়েকদিন কেটে যায়। ফলে, সে বারও বরাকরের চৈত্র সেল ও পয়লা বৈশাখের বাজার পুরোপুরি বসে গিয়েছিল। এ বার ব্যবসায়ীরা গত বারের ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু সেই আসায় জল ঢেলে দিয়েছে করোনা এবং ‘লকডাউন’।
ব্যবসায়ী রামমোহন ভরের আক্ষেপ, ‘‘পরপর দু’বার আমরা ক্ষতির মুখে পড়লাম। জানি না, সামনে আর কত কী অপেক্ষা করছে!’’ ক্ষতির সীমা নেই ছোট ব্যবসায়ীদেরও। শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারের ফুটপাত ব্যবসায়ীরা এই সময়ে অনেকটাই লাভের মুখ দেখেন বলে জানিয়েছেন প্রকাশ সেন নামে আসানসোল বাজারের এক ব্যবসায়ী। তিনি জানিয়েছেন, বড় দোকান থেকে ধারে জিনিস কিনে তাঁরা ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে বসেন। তিনি বলেন, ‘‘এ বারও অনেক কাপড় তুলেছিলাম। মহাজনের কাছে অনেক টাকা ঋণ পড়ে আছে। কবে বাজার খুলবে জানি না। কী ভাবে ওই ঋণ মেটানো সম্ভব হবে, বুঝতে পারছি না।’’
সোমবার আসানসোল বাজারে গিয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীর জটলা দেখা গেল। তাঁদের আলোচনাতেও উঠে এসেছে সেই হতাশার সুর। ‘লকডাউন’ উঠতে এখনও ন’দিন বাকি। এর পরেও কি স্বাভাবিক হবে বাজার? শুরু হবে কি কেনাকাটা? না কি আবারও বাড়বে ‘লকডাউন’-এর মেয়াদ, দোকানে দোকানে এই মুহূর্তে ঘোরাফেরা করছে এমনই নানা প্রশ্ন।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy