এত দিন যা বলে আসছিলেন উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার।
পরীক্ষা পিছনো নিয়ে সাম্প্রতিক আন্দোলনের কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ইতিমধ্যেই একাধিক কলেজের অধ্যক্ষরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষা আর না পিছনোর অনুরোধ জানিয়ে ই মেল করেছেন। হুগলি মহসিন কলেজের একদল পড়ুয়া রেজিস্ট্রারকে মেল করে জানিয়েছেন, পরীক্ষা পিছোলে স্নাতোকোত্তরে ভর্তি হতে তাঁদের সমস্যা হবে। সকলেই একমত, ফের পরীক্ষা পিছোলে ফল প্রকাশে দেরি হবে। তাতে আখেরে ক্ষতি হবে পড়ুয়াদেরই।
বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের অধ্যক্ষ ফটিকবরণ মণ্ডল, ওই জেলারই সম্মেলনী কলেজের সিদ্ধার্থ গুপ্তরা অকপটে বলছেন, “এরপর পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে ফল বেরোতে দেরি হবে। তাতে পড়ুয়ারা দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হারাবে।” তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন গত বছরের উদাহরণ। ২০১৫ সালে ফল বেরোতে দেরি হওয়ার জন্য অনেক পড়ুয়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হারিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, “উপাচার্য ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোন করে ভর্তি নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কয়েক’টি বিশ্ববিদ্যালয় সেই অনুরোধ রাখলেও অনেকে তা রাখেনি। এ বার সে রকম পরিস্থিতি তৈরি না হলে সকলেরই মঙ্গল।” বীরভূম মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়, বর্ধমানের শ্যামসুন্দর কলেজের শিক্ষক সুশান্ত বারিকরা বলেন, “আর পরীক্ষা পিছনো একেবারেই যুক্তির কথা নয়। অধিকাংশ পড়ুয়ারাও পরীক্ষা পিছনোর দাবিতে সহমত নয়।”
ছাত্র-শিক্ষক মহলে এমন জনমত তৈরি হচ্ছে দেখে আশ্বস্থ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রসায়ন বিভাগের ডিন বিমলেন্দু রায় বলেন, “পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে ফল বের হবে না। ফল প্রকাশ না হলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে না। তখন আমাদের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল পড়ুয়াদের হারাতে হবে।” রেজিস্ট্রার প্রচারপত্র দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও মতেই পরীক্ষা পিছনো সম্ভব নয়। এ দিনও একই কথা বলেছেন উপাচার্য।
গত সপ্তাহ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু কলেজের পড়ুয়ারা একজোট হয়ে প্রথমে রেজাল্ট বিভ্রাট, পরে পরীক্ষা পিছনোর দাবিতে সরব হয়। এর মধ্যেই গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এসএফআই রেজাল্ট বিভ্রাট ও নিয়োগে দুর্নীতির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢোকে। উপাচার্যের ভবনের সামনে সিঁড়ির কাছে পুলিশের সঙ্গে এসএফআইয়ে ধ্বস্তাধস্তি হয়। পরে পুলিশ তাঁদের উপরে লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ করে এসএফআই। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআইয়ের নেতৃত্বে ‘বহিরাগত’রা ঢুকেছে বলে বর্ধমান থানায় অভিযোগ করেছিল রেজিস্ট্রার। এই ঘটনার পরের দিন অর্থ্যাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারি তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরীক্ষা পিছনো-সহ একাধিক দাবিতে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয়। তারপরেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১০ দিন পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়। ঠিক হয়, ১৮ মার্চের পরিবর্তে ২৮ মার্চ থেকে স্নাতকস্তরের পার্ট-৩ পরীক্ষা হবে।
২৬ ফেব্রুয়ারি ‘হোক প্রতিবাদ’ নামে এক দল পড়ুয়া বেলা ১১টা থেকে ১০ দিন নয়, ন্যূনতম এক মাস পরীক্ষা পিছনোর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-সহ অন্য দফতরের গেটে তালা দিয়ে আন্দোলনে নামে। ১৩ জন পড়ুয়া অনশন শুরু করে। অভিযোগ, সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের সমস্ত আলো নিভিয়ে তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষাবন্ধু সমিতির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম মুখোপাধ্যায় ও সদস্য অংশুমান গোস্বামীর নেতৃত্বে অনশনরত পড়ুয়াদের উপর হামলা চালানো হয়। পেরেক দেওয়া কাঠের তক্তা দিয়ে মারা হয় বলেও অভিযোগ।
ঘটনার তিন দিন পর, থানায় অভিযোগ হলে পুলিশ ওই দুই নেতাকে গ্রেফতার করে। সে দিনই তাঁরা জামিন পেয়ে যায়। গত মঙ্গলবারও ওই পড়ুয়ারা রেজিস্ট্রারকে স্মারকলিপি দিয়ে পরীক্ষা পিছনোর দাবি জানিয়েছেন। সেই প্রেক্ষিতেই ছাত্র-শিক্ষক মহলের ওই সওয়াল।
এ দিকে, শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসমিতির নিয়মমাফিক বৈঠক ছিল। ২০ জন সদস্যের মধ্যে ছ’জন উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বেশির ভাগই বাইরে গিয়েছেন বা শরীর খারাপ। সরকারি প্রতিনিধিরাও ছিলেন না। উপাচার্যের বক্তব্য, ‘‘বৈঠকে যোগ না দেওয়ার পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই। পুরোটাই কাকতালীয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy