Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

স্মৃতি আঁকড়ে খুদেদের পাশে সন্তানহারা দম্পতি

বাবা-মায়ের হাত ধরে স্কুলে যেত ছেলেটি। তারপরে এক দিন সকলকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল সে। পুত্রশোকের প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে বাবা-মা ঠিক করলেন, আরও ‘অনেক ছেলে’র পাশে দাঁড়াতে হবে।

খুদেদের সঙ্গে দীপক মণ্ডল। ছবি: বিকাশ মশান।

খুদেদের সঙ্গে দীপক মণ্ডল। ছবি: বিকাশ মশান।

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৫৮
Share: Save:

বাবা-মায়ের হাত ধরে স্কুলে যেত ছেলেটি। তারপরে এক দিন সকলকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল সে। পুত্রশোকের প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে বাবা-মা ঠিক করলেন, আরও ‘অনেক ছেলে’র পাশে দাঁড়াতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের বাচ্চাদের জন্য টিফিন কেনা, বর্ণমালা শেখার রঙিন তালিকা জোগাড়-সহ বিভিন্ন কাজ করে চলেছেন দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার এলাকার বাসিন্দা মণ্ডল দম্পতি।

দীপক মণ্ডল ও সুমনাদেবী নামে ওই দম্পতি জানান, তাঁদের সন্তান অনির্বাণের জন্ম থেকেই বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা ছিল। তবে সে সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই পড়াশোনা করত অনির্বাণ। ২০১৫-য় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ে মারা যায় সে। অনির্বাণের মৃত্যুতে দীপকবাবু, সুমনাদেবী, তাঁদের মেয়ে মধুরিমা প্রথমটায় বেশ ভেঙে পড়েছিলেন।

তারপরে এক দিন দুর্গাপুর শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে আদিবাসীদের গ্রাম তিলকডাঙার কথা জানতে পারেন দীপকবাবু। তিনি জানতে পারেন, বহু প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ওই গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি ও শিশু শিক্ষাকেন্দ্র দু’টিতে মোট ৬০ জন শিশু পড়াশোনা করে।— এই খবর শুনেই দীপকবাবুরা ঠিক করেন, কিছু করতে হবে।

দীপকবাবু লক্ষ করেন, দু’টি কেন্দ্রেই বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে সমস্যায় পড়ছে খুদের দল। এরপরেই বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য তোড়জোড় শুরু করেন দীপকবাবু। শুধু তাই নয়, এখন মাসে মাসে বিদ্যুতের বিলও মিটিয়ে দেন তিনি। পড়াশোনার সুবিধার জন্য অক্ষর ও শব্দ শেখার রঙিন চার্টও কিনেছেন তিনি। এ ছাড়া মাসে দু’দিন পড়ুয়াদের জন্য পাঁউরুটি, কলা আর মিষ্টির ডালা নিয়ে তিলকডাঙায় হাজির হন মণ্ডল-দম্পতি। শিক্ষাকেন্দ্রের সূত্রে জানা গেল, খুদেদের জন্য নতুন কাপড় কেনা, শিক্ষাকেন্দ্রের চারপাশে বেড়া দেওয়া, গাছ লাগানো-সহ বিভিন্ন কাজও করে দিয়েছেন ওঁরা। কেন এ সব করেন? পেশায় একটি বীমা সংস্থার এজেন্ট দীপকবাবুর বক্তব্য, ‘‘বাচ্চাগুলো যখন আনন্দ করে, তখন ওদের মধ্যে আমার অনির্বাণকে দেখতে পাই যেন!’’ আগামী রবিবার বাচ্চাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করানো হবে। থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসরও।

দীপকবাবুদের এমন উদ্যোগে খুশির হাওয়া গ্রামেও। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের তরফে প্রিয়াঙ্কা রায় বলেন, ‘‘আগে বাচ্চাদের স্কুলে আনতে জোর করতে হতো। এখন অনেক শিক্ষা সামগ্রী থাকায় পরিস্থিতির বদল হয়েছে।’’ গ্রামের বাসিন্দা মুখী হাঁসদা, রেখা হাঁসদারা বলেন, ‘‘দীপকবাবুর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

childless couple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE