খেলাপাগল বর্ধমানের রাধানগর পাড়ার যুবক সৌম্যজিৎ মুখোপাধ্যায়। রাত পর্যন্ত বাড়ির টিভিতে এইচডি চ্যানেলে খেলা দেখেছেন তিনি। কিন্তু সকালে উঠে ভারত-নিউজিল্যান্ডের খেলা দেখতে গিয়ে দেখেন, চ্যানেলটাই বন্ধ। খোঁজ নিয়ে জানলেন, ট্রাইয়ের নতুন নিয়মে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে এইচডি চ্যানেল কিনতে হবে।
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকাতেই এই পরিস্থিতির ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা। যদিও ট্রাইয়ের নতুন নির্দেশিকা যে ফেব্রুয়ারির গোড়া থেকেই বলবৎ হবে তা জানিয়েছিল আদালত। স্থানীয় কেব্ল অপারেটরদের সেই মতো নতুন প্যাকেজ বা প্রত্যেক চ্যানেলের আলাদা দামের তালিকা গ্রাহকদের দেওয়ার কথা। অনেক চ্যানেল পছন্দ করে তা জমাও করেছেন। তার পরেও কিছু বিভ্রান্তির জায়গা রয়ে গিয়েছে বলে গ্রাহকদের দাবি। আগের থেকে খরচ বাড়বে না কমবে তা নিয়েও দ্বিমত রয়েছে।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া শুক্তি মজুমদারের কথায়, “কোনও এইচডি চ্যানেল চলছে না। সিনেমার চ্যানেলগুলি অধিকাংশ বন্ধ। গত কয়েকদিন ধরে মায়ের সঙ্গে রিমোট নিয়ে কাড়াকাড়িও বন্ধ।’’ কলকাতার অফিস পাড়া থেকে ফিরে বাড়িতে খবরের চ্যানেল দেখা দীর্ঘদিনের অভ্যাস ষাট ছুঁই ছুঁই অমরেশ দত্তের। তিনি জানান, গত ক’দিন ধরে টিভি চালালেই পর্দা কালো। নীল রঙের বাক্সে মেসেজ দিয়ে জানানো হচ্ছে, এই চ্যানেল দেখা যাবে না।
গ্রাহকদের মতো কেব্ল ব্যবসায়ীরাও চিন্তায়। তাঁদের অনেকেরই ধারণা, নতুন নিয়মে মার খাবে ব্যবসা। একটি কেব্ল সংস্থার বর্ধমানের ব্যবসায়ী শেখ মঞ্জুর আলমের দাবি, “আগে কেব্ল টিভির পিছনে খরচ ছিল ১০০ থেকে ১৮০ টাকা। এখন সেখানে পছন্দমত চ্যানেল দেখতে গেলে কমপক্ষে ৩০০ টাকা খরচ করতে হবে।’’ প্রতিদিন টিভি খুললেই বিভিন্ন চ্যানেলে দৈনিক বা মাসিক দাম ফুটে উঠছে। কোনওটি দিনে ৫০ পয়সা তো কোনওটি মাসে খরচ ৩০ টাকা। ঘোষণা করা হচ্ছে—প্যাকেজের দিন ফুরিয়ে গেছে। পছন্দের সিরিয়াল, সিনেমা বা নাচ-গানের অনুষ্ঠানের কোন চ্যানেলকে ‘অগ্রাধিকার’ দেওয়া হবে তা নিয়ে প্রতিটি বাড়ির সদস্যদের মধ্যে জোর তর্ক-বিতর্কও চলছে। সঙ্গে চাই খেলা, খবরের চ্যানেলও। খোসবাগানের বাসিন্দা মালতি হাজরা বলেন, “সিরিয়াল দেখাটাই একমাত্র বিনোদন। সেখানেও কোপ পড়ে গেল!’’ হতাশ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী কেকা মণ্ডলও। তাঁর কথায়, “এইচডি আসার পর থেকে সাধারণ চ্যানেলে সিনেমা দেখি না। ঝকঝকে ছবি দেখার দিন কী ফের ফুরিয়ে এল, বুঝতে পারছি না।’’ বর্ধমান জেলা ভলিবল ও বাস্কেটবল সংস্থার কর্তা অরিজিৎ সেনও বলেন, “এই নতুন নিয়মের জেরে অনেক ক্রীড়াপ্রেমীকেই এইচডিতে খেলা দেখার ঝোঁক ছাড়তে হবে।’’
কেবল অপারেটরদের দাবি, সেট-টপ বক্স বাজারে আসার সময় ট্রাইয়ের নির্দেশ ছিল, মেট্রো শহর, শহরতলি ও গ্রামীণ এলাকায় চ্যানেলের পৃথক দাম হবে। কেব্ল চ্যানেলের প্যাকেজের থেকে ডিটিএইচের দাম ৩০ শতাংশ বেশি রাখার কথাও বলা হয়। কিন্তু নতুন নিয়মে সব মিলেমিশে একাকার। কেবল টিভি সংস্থার বর্ধমানের কর্তা আফতাবউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এই নিয়মে পাঁচতারা হোটেলে বসে কেব্ল টিভি দেখার জন্যে যে টাকা দিতে হবে, গ্রামের চালাঘরেও বসে টিভি দেখলে একই দাম লাগবে গ্রাহকের। এতে ডিটিএইচের দিকে ঝোঁক বাড়বে। কেব্ল ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’’
জানা গিয়েছে, নতুন নিয়মে বাধ্যতামূলক ১০০টি চ্যানেল দেখার জন্য জিএসটি নিয়ে ১৫৩.৪০ টাকা দিতে হবে গ্রাহককে। তার পরের ২৫টি চ্যানেল দেখার জন্য নেটওয়ার্ক ফি বাবদ ২০ টাকা লাগবে। টাকা দিতে হবে প্রতিটি চ্যানেলের জন্য আলাদা ভাবে বা প্যাকেজ হিসেবে। সংস্থার ম্যনেজারের কথায়, “পুরোটাই ফেল কড়ি দেখ চ্যানেল!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy