ফাইল চিত্র।
প্রতিটি বিভাগকে ‘ডিজিটালাইজ়ড’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। দরপত্র ডেকে আন্তর্জাতিক মানের একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে বিভিন্ন মহল প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। তবে উপাচার্য নিমাইচন্দ্র সাহার দাবি, ‘‘নিয়ম মেনে, স্বচ্ছ্ব ভাবে চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ সংস্থা আমাদের চাহিদা মতো কাজ করতে পারবে কি না, তা দেখার জন্য উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। তাঁদের মতামত নিয়ে আমরা এগিয়েছি। পাঁচ বছরের চুক্তি। এখনও আমরা কোনও টাকা দিইনি।’’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এনআইআরএফের (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র্যাদঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক) মানদণ্ডে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ৮৭ নম্বরে রয়েছে। যাদবপুর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে এ রাজ্যে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান। কয়েক বছর আগে ন্যাকের মূল্যায়নে বর্ধমান ‘এ+’ গ্রেড পেয়েছিল। যদিও তার পরে আর মূল্যায়ন হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, ডিজিটাল ব্যবস্থায় জোর দেওয়া, সময়ের মধ্যে পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ করার মতো বিষয়গুলির দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। বছর দু’য়েক আগে বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নেয়, প্রতিটি বিভাগকে ডিজিটালাইজ়ড করে এক ছাতার তলায় আনা হবে। প্রত্যেক ছাত্র-শিক্ষককেও যুক্ত করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজ়িকিউটিভ কমিটি (ইসি)-র বৈঠকে একাধিকবার আলোচনা হয়। নানা স্তরে কমিটি গঠন হয়। কী ভাবে কাজ হবে, তার খসড়াও প্রকাশিত হয়। শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মানের কোনও সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সাতটি সংস্থা দরপত্র জমা দেয়। বিশেষজ্ঞ কমিটি একটি সংস্থাকে বেছে নেন।
পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পরীক্ষা ও ফল সংক্রান্ত বিষয়ে একটি প্রযুক্তিবিদ সংস্থার সঙ্গে চুক্তি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের। কিন্তু তাতে কিছু গলদ ছিল। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা যাদবপুর-সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহায্যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করি। তারা ওই সংস্থার সঙ্গে কথা বলে, নথি দেখে সন্তুষ্ট হওয়ার পরে চুক্তি করেছি। পাঁচ বছরের এই চুক্তিতে একজন পড়ুয়ার ভর্তির পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সমস্ত তথ্য সরাসরি তাকে দেওয়া হবে। ছাত্র পিছু ১৪৮ টাকার মতো চুক্তি করা হয়েছে।’’
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকস্তরে ৬৪টি কলেজে প্রায় দেড় লক্ষ ও স্নাতকোত্তর স্তরে ১০ হাজারের মতো পড়ুয়া রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ডিন রমেন সর বলেন, ‘‘ছাত্র-শিক্ষকবান্ধব প্রযুক্তির মাধ্যমে সবাইকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা হয়েছে। শিক্ষকেরা ড্যাশ বোর্ডের মাধ্যমে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। সিমেস্টার পদ্ধতিতে দ্রুত ফল বার করতে সুবিধা হবে।’’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, ভর্তির ফর্ম পূরণ করা মাত্র একজন পড়ুয়া অস্থায়ী পরিচয়পত্রের নম্বর ও পাসওয়ার্ড পাবে। মেধা তালিকা অনুসারে ভর্তি হওয়ার পরে স্থায়ী পরিচয়পত্র মিলবে। যাবতীয় তথ্য থেকে ভর্তির টাকাও ড্যাশ বোর্ডের মাধ্যমে জমা করা যাবে। সেখান থেকেই রেজিস্ট্রেশন, অ্যাডমিট কার্ড, মার্কশিট মিলবে। সব তথ্য অনলাইন জমা থাকায় চাকরি পাওয়ার পরে তথ্য-যাচাইয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়মুখীও হতে হবে না।
যদিও এই চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায় সমাজমাধ্যমে অভিযোগ করেছেন, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাডমিট কার্ড ও মার্কশিট ছাপানোর জন্য একটি সংস্থাকে তিন বছরের বরাত দিয়েছে ২১ কোটি টাকা! এসএফআইয়ের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক তথা জেলা সিপিএমের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়েরও দাবি, ‘‘দুর্নীতি নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার।’’ উপাচার্য বলেন, ‘‘২১ কোটি টাকার কোনও প্রশ্ন নেই। মার্কশিট ছাপাও হবে সরকারি প্রেসে। প্রতিটি কাজের পরে বিল খতিয়ে দেখে টাকা দেওয়া হবে। কোনও পর্যায়ে কাজ নিয়ে অসন্তুষ্টি থাকলে চুক্তি বাতিল করে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy