মণ্ডপ জুড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, কবিতা, নাটক আর ছবি। কোথাও ছবি এঁকে, কোথাও হাতে লিখে, কোথাও আবার মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে তাঁর সৃষ্টি। কালনা শহরের অধিকারী পাড়ার যুবক সমিতির সরস্বতী পুজোর মণ্ডপ এ বার রবীন্দ্রময়। থিমের নাম ‘তবু মনে রেখো’।
এ বার এই সরস্বতী পুজো ১০১ বছরে পা দিচ্ছে। শতবর্ষ পেরিয়ে যাওয়া এই ক্লাবের মণ্ডপে ঢুঁ দিয়ে দেখা গিয়েছে অজস্র মডেল এবং ছবি। মাটি, প্লাই, নলি বাঁশ, ঝুড়ি, কাঠ-সহ পরিবেশ বান্ধব উপকরণ দিয়ে মণ্ডপ গড়া হয়েছে। মণ্ডপ গড়ছেন রাজেশ চক্রবর্তী। ভিতরে ঢুকতেই চোখে ভেসে উঠবে কবিগুরুর ‘ছুটি’ কবিতা। বর্ষার মেঘের সঙ্গে কয়েক জন স্কুল পড়ুয়ার ছবি এঁকে তার পাশে লেখা হয়েছে— ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে / বাদল গেছে টুটি, আজ আমাদের ছুটি ও ভাই, আজ আমাদের ছুটি......।’
মণ্ডপে রয়েছে অজস্র ছবি ও মডেল। সে সবের সঙ্গে লেখা হয়েছে কবিগুরুর ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের সংলাপ। বড় বড় অক্ষরে লেখা রহমত আর মিনির কথা। লেখা হয়েছে, ‘আমার পাঁচ বছর বয়সের ছোট মেয়ে মিনি এক দণ্ড কথা না কহিয়া থাকিতে পারে না। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করিয়া ভাষা শিক্ষা করিতে সে কেবল একটি বৎসর কাল ব্যয় করিয়া ছিল ...।’ তরুণী আর ফুলের ছবি এঁকে লেখা হয়েছে ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে ...। সখী যাতনা কাহারে বলে। তোমরা যে বলো দিবস রজনী ......।’
‘চিত্রাঙ্গদা, পুরাতন ভৃত্য’-সহ কবিগুরুর অসংখ্য সৃষ্টি তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপ জুড়ে। মণ্ডপে ঢোকার মুখে রয়েছে একটি গরুর গাড়ির মডেল-সহ কিছু দৃশ্য। সেখানে লেখা রয়েছে, ‘কুমোরপাড়ার গরুর গাড়ি, বোঝাই করা কলসি হাঁড়ি’। এ ছাড়া কবিগুরুর আঁকা ছবির অনুকরনে বেশ কিছু ছবি তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপে।উদ্যোক্তরা জানিয়েছেন, থিম সং হিসেবে মণ্ডপে বাজবে ‘তবু মনে রেখো’ গানটি।
কেন এমন ভাবনা? শিল্পীর বক্তব্য, ‘‘বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা হিন্দি এবং ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনেক সৃষ্টি তাদের অজানা থেকে যাচ্ছে। পাশাপাশি রবীন্দ্রচর্চাও ক্রমশ কমে আসছে। রবীন্দ্রনাথ যে আমাদের কত বড় সম্পদ, তা দর্শকেরা মণ্ডপে এলে অনুধাবন করতে পারবেন।আশা করছি সব বয়সিদের মধ্যে মণ্ডপটি
জনপ্রিয় হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)