পানাগড়ে বহিরাগত সন্দেহে মার যুবককে। নিজস্ব চিত্র
বহিরাগতদের জড়ো করেছে শাসক দল, ভোটের আগের দিনই অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। সোমবার, ভোটের সকালে পানাগড়-সহ কাঁকসার নানা এলাকায় প্রতিরোধের মুখে পড়ল ‘বহিরাগত’রা। কোথাও তির-ধনুক হাতে তাড়া, কোথাও বাঁশ, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হল। আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয় চার জন।
সকালে প্রথম গোলমালটি বাধে মলানদিঘি পঞ্চায়েতের কুলডিহা গ্রামে। এই গ্রামে লড়াই হচ্ছে তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপি এবং নির্দলের মধ্যে। ভোটারের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে দু’টি বুথে ভোর থেকেই লম্বা লাইন পড়েছিল। স্কুল থেকে প্রায় দু’শো মিটার দূরে গাছতলায় পরপর সিপিএম, বিজেপি, নির্দল প্রার্থীর ক্যাম্প। অন্য দিকে তৃণমূলের শিবির। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, সকাল সওয়া ৮টা নাগাদ গামছায় মুখ ঢাকা ৩০-৩৫ জন যুবক বুথের দিকে এগিয়ে আসে। তাদের অনেকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। খবর পেয়ে এলাকার কিছু আদিবাসী বাসিন্দা তির-ধনুক নিয়ে পৌঁছে যান। বাধার মুখে পড়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, ‘‘গ্রামে দুষ্কৃতীদের দাপিয়ে বেড়ানো মানা হবে না। ভোট হতে হবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। যারা ওদের এনেছিল, ভোট মিটলে তাদের কাছে কৈফিয়ত চাইব।’’
সিপিএমের অভিযোগ, ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই কাঁকসা হাইস্কুলে দুষ্কৃতীরা ঢুকে ভোটারদের এলাকাছাড়া করে। কাঁকসার নানা প্রান্তে বুথ দখলের অভিযোগ উঠতে থাকে। কিন্তু কুলডিহায় প্রতিরোধের খবর ছড়িয়ে পড়তেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। আমলাজোড়া পঞ্চায়েতের বিহারপুরে বুথ দখলের চেষ্টার অভিযোগে কয়েকজনকে লাঠি, বাঁশ, তির-ধনুক নিয়ে তাড়া করা হয়। বিবেকানন্দ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির বাঁ পা ফুঁড়ে দেয় একটি তির। তাঁকে রাজবাঁধে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, ভোট দিতে গিয়ে সিপিএমের হাতে আক্রাম্ত হয়েছেন তিনি। তা মানতে চায়নি সিপিএম।
পানাগড় হিন্দি হাইস্কুলে সকাল থেকে ভোটগ্রহণ চলছিল নির্বিঘ্নে। সেখানে তৃণমূল ছাড়াও সিপিএম এবং বিজেপি-র প্রার্থী রয়েছেন। বেলা বাড়তেই স্কুলের পাশে পেট্রেল পাম্পে একটি মালবাহী গাড়িতে এসে নামে ১০-১২ জন যুবক। অভিযোগ, তারা বুথের দিকে এগোচ্ছিল। সিপিএম এবং বিজেপি-র পতাকা নিয়ে হাজির কিছু লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে তাদের উপরে চড়াও হয়। জনা পাঁচেক যুবককে ধরে বেধড়ক মারধর করা হয়। বাকিরা পালিয়ে গেলেও গুরুতর জখম হয়ে পড়ে থাকা শ্রীধর মণ্ডল ও রাকেশকুমার সিংহ নামে দু’জনকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। ঘটনার পরে পুলিশের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এলাকার কিছু বাসিন্দা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদীর নেতৃত্বে পুলিশের বড় বাহিনী টহল দেয় এলাকায়।
বিরোধীদের অভিযোগ, এই ঘটনায় আহত দু’জনের কাছে ঠিকা শ্রমিকের পরিচয়পত্র পাওয়া গিয়েছে। আর এক যুবক কারখানায় কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন। সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকার অভিযোগ করেন, শনিবার বিকেলে তিনটি সরকারি ও কয়েকটি বেসরকারি বাসে করে দুর্গাপুর থেকে কারখানার ঠিকা শ্রমিকদের কাঁকসায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রুটি-রুজির ভয় দেখিয়ে ওই যুবকদের এ ভাবে ব্যবহার করছে তৃণমূল। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে।’’ আইএনটিটিইউসি-র প্রাক্তন জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘ওই শ্রমিকেরা দুর্গাপুরে কাজ করেন। তবে বাড়ি কাঁকসা এলাকায়। তাই ওই অভিযোগ মিথ্যে।’’
সিপিএম এবং বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, পিয়ারিগঞ্জেও দলের কর্মীদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে পালায় বহিরাগত দুষ্কৃতীরা। বেশ কিছুক্ষণ ভোট বন্ধ থাকে সেখানে। রাজকুসুমেও একই রকম ঘটনা ঘটে। পানাগড় রেলপাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল থেকে বুথ জ্যামের অভিযোগ ওঠে। বিজেপির অভিযোগ, প্রার্থীকে মারধর করা হয়, পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়। বহিরাগতদের মারে জখম হয়ে কিশোরী রাম নামে এক সমর্থক রাজবাঁধে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি বলে দাবি সিপিএমের। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ বেশ কয়েকজন গিয়ে ব্যালটে কালি ঢেলে দেয়। বন্ধ হয়ে যায় ভোটগ্রহণ।
বিজেপি নেতা রমন শর্মা দাবি করেন, ‘‘বহিরাগতদের পানাগড়ে নিয়ে এসে বুথ দখলের চেষ্টা করেছিল তৃণমূল। পুলিশ-প্রশাসনের উপরে কোনও ভরসা নেই। বাসিন্দারা দুষ্কৃতীদের রুখে দিয়েছেন।’’ তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, ‘‘বিজেপি-র পতাকা সাঁটানো ঝাড়খণ্ডের গাড়ি রবিবার এলাকায় দেখা গিয়েছে। বহিরাগত আমরা নয়, ওরাই এনেছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে সিপিএম। সুযোগ বুঝে আমাদের কর্মীদের মারধর করা হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy