Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Asansol Durgapur Commissionerate

পুলিশের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পড়ছে মোহিতেরা

জামুড়িয়ায় সাতটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালানোর কথা জানিয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট।

এমনই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চলছে পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র

এমনই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চলছে পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:২৩
Share: Save:

কারও বাবা-মা, দু’জনেই দিনমজুরের কাজে সকাল হতেই বেরিয়ে পড়েন। কারও বা বাড়িতে পড়ানোরই কেউ নেই। এই পরিস্থিতিতে স্কুলের বাইরে পড়া বুঝতে সমস্যায় পড়ে আদিবাসী পড়ুয়াদের বড় অংশ। এই সমস্যার দিকে তাকিয়ে বছর খানেক ধরে জামুড়িয়ায় সাতটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালানোর কথা জানিয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট।

কমিশনারেট সূত্রে জানা যায়, শিরিষডাঙা, হুড়মাডাঙা মাঝিপাড়া, পরাশিয়ার ঘোষপুকুর মাঝিপাড়া, আদিবাসী মাঝিপাড়া, ইকড়ার রাজারামডাঙা ও বাহাদুরপুরের ধসল, দিগুলি গ্রামে সাতটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চলছে। এগুলির পোশাকি নাম, ‘প্রেরণা বিদ্যালয়’। এমন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালুর পরিকল্পনা কেন? এ বিষয়ে আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈন বলেন, ‘‘আদিবাসীদের মধ্যে অনেক অভিভাবকই রয়েছেন, আর্থিক কারণে যাঁরা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় নজর দিতে পারেন না। আমাদের লক্ষ্য, সমাজের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশিক্ষণ।’’

পুলিশের সূত্রে জানা যায়, এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে এই মুহূর্তে মোট ২৯৩ জন ছাত্র এবং ২৮৬ জন ছাত্রী রয়েছে। প্রশিক্ষক তথা শিক্ষক রয়েছেন ১৮ জন। রবিবার বাদে সপ্তাহে ছ’দিনই বিকেল ৪টে, কোথাও বা ৫টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে নানা বিষয়ের পাঠ দেওয়া হয় পড়ুয়াদের।

পুলিশের এই উদ্যোগে খুশি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই। পরাশিয়ার বাসিন্দা সুনীল মুর্মু, শিবুধন হাঁসদারা জানান, ছেলেরা যথাক্রমে প্রথম ও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বাড়িতে পড়ানোর মতো কেউ নেই। আবার গৃহশিক্ষক দেওয়ার মতো আর্থিক স্বচ্ছলতাও নেই তাঁদের। তাঁরা বলেন, ‘‘বিনা খরচে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ার সুযোগ হচ্ছে ছেলেমেয়েদের। এর থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে না।’’ প্রশিক্ষণ পেয়ে খুশি বহলা শশী স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির পড়ুয়া মোহিত মাণ্ডি, ইকড়া বাসন্তী বিজয় বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া শিশির মুর্মু, চুরুলিয়া নবকৃষ্ণ উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির পড়ুয়া গোরানাথ মারাণ্ডিরাও। তারা বলে, ‘‘স্কুলের শিক্ষকদের ক্লাস এবং এই প্রশিক্ষণের কারণে আমরা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছি না।’’ বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন শৈলবালা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিলা চক্রবর্তী, চুরুলিয়া নবকৃষ্ণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাপ্পাদিত্য রায়েরাও।

আদিবাসী সোসার গাঁওতার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক সুনীল হাঁসদা, তামর মুর্মুরা জানান, আদিবাসীদের পড়ুয়াদের মধ্যে অনেক সময়েই অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব, আর্থিক কারণ, পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ার মতো নানা কারণে স্কুলছুট হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এই ধরনের প্রশিক্ষণ সেই প্রবণতায় লাগাম পরাবে বলেই মনে করছেন সুনীলবাবুরা।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই ১৮ জন প্রশিক্ষকের সাম্মানিকের ব্যবস্থা কমিশনারেট থেকেই করা হয়। এই কাজ করতে পেরে খুশি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক দীপালি আকুড়িয়া, লক্ষ্মীকান্ত ঘাঁটিরা। তাঁরা বলেন, ‘‘এই কাজ করতে পেরে আমাদেরও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। পড়ুয়ারাও খুশি। ওদের মধ্যে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy