গত বার ছিল দুই। এ বার রাজ্যের আরও তিন জেলার সম্পাদককে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দিয়েছে সিপিএম। সদ্যসমাপ্ত পার্টি কংগ্রেসে দার্জিলিঙের সমন পাঠক, হুগলির দেবব্রত ঘোষের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের সৈয়দ হোসেন। আবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা হয়েছে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের। যিনি আদতে পশ্চিম বর্ধমানের ভূমিকন্যা। পাশাপাশি দুই বর্ধমানের প্রতিনিধির কেন্দ্রীয় কমিটিতে যাওয়া নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে সিপিএমের অন্দরে। বিশেষত, পূর্ব বর্ধমানের জেলা সম্পাদকের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া দলের একাংশে বিস্ময় তৈরি করেছে।
এক সময়ে বর্ধমানকে ‘লাল দুর্গ’ বলা হত। একের পর এক নির্বাচনে বামেদের ভান্ডার ভরেছে পশ্চিমবঙ্গের শস্য ভান্ডার। কিন্তু পালাবদলের নির্বাচন থেকে অবিভক্ত বর্ধমান জেলায় সিপিএমের যে রক্তক্ষরণ, শুরু হয়েছে তা এখন কার্যত রক্তশূন্যতায় এসে ঠেকেছে। তার পরেও কেন বর্ধমান দলীয় কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় এতটা গুরুত্ব পেল, সেই প্রশ্ন রয়েছে দলেরই একাংশের মধ্যে। যদিও অন্য অংশের ব্যাখ্যা, শুধু নির্বাচনী ফলাফল দিয়ে দলীয় কমিটি গঠনের সমীকরণ নির্ধারিত হয় না।
দল এই মুহূর্তে মনে করেছে, যে জায়গাগুলিতে বিজেপি তাদের ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে, সেখানকার তুলনায় যেখানে এখনও বাম প্রভাব কিছুটা আছে, সেখানে ফিরে আসার লড়াই করার ক্ষেত্র তৈরির কাজে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেই কারণেই বর্ধমান জেলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, এ বারের সম্মেলন-পর্বে সিপিএম শ্রেণি প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর পক্ষে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েছে। সেই দিক থেকে সৈয়দ কৃষক সভার নেতাও বটে। সব মিলিয়ে তাঁকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সিপিএমের জেলা এবং রাজ্য কমিটির কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কমিটির অন্তর্ভুক্ত না-হয়ে যুব সংগঠন থেকে সরাসরি দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে মীনাক্ষীর অন্তর্ভুক্তিও কার্যত ‘বেনজির’ বলে মেনে নিচ্ছেন সিপিএম নেতাদের একাংশ। তবে অন্য অংশের ব্যাখ্যা, এই মুহূর্তে রাজ্যে বাম আন্দোলন এবং ভিড় টানার ক্ষেত্রে মীনাক্ষীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ফলে, তাঁকে নেতৃত্বের জায়গায় এনে দল তরুণ প্রজন্মকে বার্তা দিয়ে রাখল, নিজেদের জায়গায় ভাল কাজ করলে এবং সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পারলে দল তার ‘মূল্য’ দেবে।
এর পাশাপাশি আবার আগামী ২০ এপ্রিল ব্রিগেডের সমাবেশে বক্তা-তালিকায় অন্যতম নাম কৃষক নেতা অমল হালদার। প্রসঙ্গত, তিনিও অবিভক্ত বর্ধমান জেলা থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে উঠে এসেছেন।
দলের এই বর্ধমান-লাইন নিয়ে মীনাক্ষীর বক্তব্য, ‘‘ভোটের ফল কিংবা জেলা দেখে কমিটি হয় না। দল তার নিজস্ব ভাবনা এবং আগামী দিনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কয়েক জনকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু তার বাইরে বিরাট অংশের নেতা থাকেন, যাঁরা দৈনন্দিন লড়াই-আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যান। রুটি-রুজির লড়াইকে সংহত করতে কমিটির নিশ্চয়ই ভূমিকা থাকে। কিন্তু কমিটি এবং কমিটির বাইরে থাকা বৃহদংশের মানুষকে নিয়েই আন্দোলন-সংগ্রামের গড়ে ওঠে।’’
এই পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মত, ‘‘দীর্ঘ মেয়াদে তাঁরা যাতে কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকতে পারেন, পরবর্তী নেতৃত্ব তুলে আনতে পারেন, সেই কারণেই এই ভাবে প্রতিনিধি বাছা হয়েছে। ’’
সিপিএম নেতৃত্বের ব্যাখ্যা,
জেলার সম্পাদক কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পেলে তাঁকে আরও দ্রুত জেলায় বিকল্প নেতৃত্ব খুঁজতে হবে এবং তার ফলে নেতা তুলে আনার প্রক্রিয়া গতি পাবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)