রাজ্য তথা দেশের অন্যতম কৃষিপ্রধান জেলা পূর্ব বর্ধমান। কিন্তু কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত দু’বছর ধরে মাটি পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এই জেলায় মাটিতে অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব রয়েছে। ফলে স্বাভাবিক থাকছে না জৈব কার্বনের হার, মাটিতে মুখ্য, গৌণ ও অণুখাদ্যের পরিমাণ। এর জেরে মাটির উর্বরতা, ফলনের হার কমছে।
দফতর সূত্রে জানা যায়, গত দু’বছর ধরে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ‘নমুনা’ পরীক্ষা হয়েছে। প্রতি আড়াই হেক্টর জমি পিছু একটি করে ‘নমুনা’ সংগ্রহ করে মটি পরীক্ষাকেন্দ্র পাঠানো হয়। পরীক্ষার রিপোর্টেই দেখা গিয়েছে, জেলার সব ব্লকের মাটিতেই অম্লত্ব রয়েছে। কমবেশি জৈব কার্বনের পরিমাণও কমার কথা বলা হয়েছে। মাটি পরীক্ষাকেন্দ্রের (বর্ধমান) দাবি, মুখ্য খাদ্য উপাদানের মধ্যে থাকা ফসফেট জামালপুর, মেমারির মতো আলু-উৎপাদক জায়গায় বেশি পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে, যা মাটির স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়। পটাশও প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রয়েছে মাটিতে। ফলে চাষিদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। গাছে রোগ-পোকা দেখা যাচ্ছে।
পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গৌণ খাদ্য উপাদান সালফার মাটিতে কম পরিমাণে মিলছে। তাই জেলার বেশির ভাগ জমিতে তৈলবীজ, পেঁয়াজ, বাঁধাকপির মতো ফসলের গুণগত মান ভাল নয়। মাটিতে সালফার কম থাকলে গাছের পুষ্টি কম হয়। টান পড়ে ফলনেও। নমুনায় অণুখাদ্য বোরনও কম পেয়েছেন গবেষকেরা। এই উপাদানের অভাবে গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয় না। গবেষকেরা জানান, মাটিতে আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ ও কপার স্বাভাবিক থাকলেও জিঙ্কের পরিমাণ কম থাকায় ফলনে বাধা তৈরি হচ্ছে।
জেলা মাটি পরীক্ষাকেন্দ্রের কেমিস্ট গৌতম সরকার বলেন, “অম্লত্ব, জৈব কার্বন কমার ফলে মাটিতে উপকারী জীবাণুও কম মিলছে।’’ কিন্তু কৃষিপ্রধান জেলার মাটির স্বাস্থ্যের এই হাল কেন? বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, অতিরিক্ত পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োগ, জৈব চাষের প্রয়োগ কমানো, বিরামহীন চাষের জেরে মাটির এই হাল। কমছে ফলনও। তাঁরা জানান, ফি বছর রাসায়নিক সারের পরিমাণ যত বাড়ছে, তত ধান, আলু চাষ বেশি হওয়া ব্লকগুলির কমছে জৈব কার্বনের পরিমাণ। অম্লত্বের জন্য অত্যাবশকীয় খাদ্য উপাদান মাটি থেকে কম পাচ্ছে গাছ।
কৃষি বিশেষজ্ঞরাও জানাচ্ছেন, চাষিরা সাবধান না হলে বিপদ ঘনিয়ে আসছে। গৌতমবাবুরও পরামর্শ, ‘‘বিপর্যয় শুরু হয়ে গিয়েছে। মাটির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে জৈব সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। আমাদের পরামর্শ মেনে মাটি শোধন করা দরকার।’’
জেলার উপ কৃষি আধিকারিক (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নিয়মিত ভাবে মাটি পরীক্ষা করে কোন জমির জন্য কী করতে হবে, চাষিদেরকে নিদান দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু রোগী ওষুধ না খেলে কী হয়, সেটাই মাটির ক্ষেত্রেও হচ্ছে!’’ চাষিদের বড় অংশই এ কথা মেনেও নিচ্ছেন। কিন্তু ভাতার, মন্তেশ্বর, কালনা, গলসি, মেমারি, কাটোয়া-সহ নানা প্রান্তের বহু চাষিরই এক রা, “যে ভাবে মাটি শোধনের কথা বলা হয়, তাতে অর্থ ও সময় দুটোই যায়। পরের চাষ মার খায়। তাই মাটি-শোধন খুব একটা হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy