এক অভিযুক্তের বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র
কারও পরিকল্পনা ছিল, বাড়ি সুন্দর করে সাজার। কেউ ভেবেছিল, অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া বাড়ির ছাদ পাকা করবে। এ সবের জন্য টাকা জোগাড়েই অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়ার ছক কষেছিল তিন যুবক, গলসিতে পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলেকে খুনের ঘটনায় দাবি পুলিশের। গলসির সাঁকো পঞ্চায়েতের সদস্য তথা গলসি ২ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ বুদ্ধদেব দলুইয়ের ৯ বছরের ছেলে সন্দীপকে অপহরণ করে খুনের অভিযোগে গ্রামেরই ওই তিন যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে ওই বালককে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সেচখাল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ছেলেটিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য সিম কার্ড চুরি করেছিল অভিযুক্তেরা। সেই সূত্র ধরেই তাদের ধরা হয়েছে। পুলিশ সুপার (পূর্ব বর্ধমান) ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অপরাধীরা নিজেদের অজান্তেই প্রমাণ ছেড়ে রেখেছিল।’’
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ধৃতদের মধ্যে জয়ন্ত বাগ ওরফে নিরঞ্জনের কাছেই দিনের অনেকটা সময় থাকত সন্দীপ। তার সঙ্গে মোবাইলে গেম খেলত। পুলিশের দাবি, ধৃত জয়ন্ত এবং সুব্রত মাঝি ওরফে বাদশা ও মঙ্গলদীপ দলুইকে জেরা করে জানা গিয়েছে, তাদের পরিকল্পনা ছিল, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে কুলচটি উড়ালপুলের কাছে মুক্তিপণের টাকা নেওয়া হবে। বুদ্ধদেববাবু টাকা নিয়ে এলে উড়ালপুলের নীচ থেকে ছুঁড়ে দিতে বলা হবে। টাকা পাওয়ার পরে ছেলে কোথায় আছে জানিয়ে দেওয়ার ভাবনা ছিল।
শনিবার বুদ্ধদেববাবুর অভিযোগ, ‘‘ক’দিন আগে ধান বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকা পেয়েছি, সে কথা জয়ন্ত জানত। আমি কত জনকে বাংলা আবাস যোজনায় বাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছি, আমার কাছে কী কী আছে সবই জয়ন্তর জানা। ফোন করে টাকা চাওয়ার সময়ে হুমকির সুরে সেই কথাগুলোই বলা হচ্ছিল।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধৃতেরা তিন জনই বাংলা আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছে। পুলিশের দাবি, জেরায় বাদশা তাদের জানিয়েছে, একতলার একটি বাড়ি তৈরি হচ্ছিল। মাঝপথে কাজ বন্ধ রয়েছে। তার দাদা পানাগড়ে কাজ করেন। তিনিই তাকে মোটরবাইক কিনে দিয়েছিলেন। বাড়ির জন্যও খরচ করছিলেন। পড়শি কার্তিক মাঝির দাবি, ‘‘বাদশা কিছু করত না। বাড়ি থেকে কাজ করার জন্যও চাপ ছিল না। কেন এমন করল বুঝতে পারছি না!”
জয়ন্ত আর মঙ্গলদীপের পাশাপাশি বাড়ি। জয়ন্তর অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া দু’কামরার বাড়ি। মঙ্গলদীপদের বাড়ি সবে তৈরি হচ্ছে। তাঁদের পড়শি বচ্চন দলুই, অসীমা মাঝিরা দাবি করেন, ‘‘কয়েকদিন ধরে বাড়ি করা নিয়ে দু’জনই খুব হম্বিতম্বি করছিল। বারবার বলছিল, এ বার পাকা বাড়ি তুলবে। কমবয়সী ওই ছেলেরা এমন কাণ্ড ঘটাবে, ভাবতেও পারিনি!’’ ঘটনার পরেই অভিযুক্তদের বাড়ি ভাঙচুর করেছে জনতা। গ্রামে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, বুদ্ধদেববাবুকে পরপর পাঁচ বার ফোন করা হয়েছিল। শেষ ফোন আসে রাত পৌনে ১০টা নাগাদ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মুক্তিপণ মিলছে না দেখে পরিস্থিতি বুঝতে সেচখালের কাছ থেকে জয়ন্ত গ্রামে এসে লোকজনের সঙ্গে মিশে যায়। তার কিছুক্ষণ পরেই পুলিশের নড়াচড়া দেখে খবর পাঠায় বাদশাকে। বাদশা হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সন্দীপকে জলে ফেলে দেয়। তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় ধৃতেরা তাঁদের জানিয়েছে, সন্দীপ জলে ডুবে মারা গিয়েছে, এমন ধারণা তৈরি করতে চেয়েছিল তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy