Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Tea and snacks for free

এক দিনের আয়ে চা বিক্রেতার ভিক্ষুক-সেবা

আনাজ-সহ নানা জিনিসপত্র বিক্রি হয় পারুলিয়া বাজারে। প্রায় তিন দশক ধরে সেখানে চা বিক্রি করছেন তপন।

ভিক্ষুকদের হাতে চা, বিস্কুট দিচ্ছেন পূর্বস্থলীর তপন দেবনাথ।

ভিক্ষুকদের হাতে চা, বিস্কুট দিচ্ছেন পূর্বস্থলীর তপন দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২৪ ০৯:২৫
Share: Save:

দোকান চালিয়ে কোনও দিন মেলে ৪০০ টাকা। বাজার ভাল হলে আয় কিছুটা বেশি হয়। আয় আহামরি না হলেও সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার পূর্বস্থলী ২ ব্লকের পারুলিয়া বাজার এলাকার চা বিক্রেতা তপন দেবনাথ তাঁর দোকানে ভিক্ষুকদের চা, বিস্কুট আর জল খাওয়ান বিনা পয়সায়। আট বছর ধরে এ ভাবেই ভিক্ষুকদের সেবা করে চলেছেন তিনি।

আনাজ-সহ নানা জিনিসপত্র বিক্রি হয় পারুলিয়া বাজারে। প্রায় তিন দশক ধরে সেখানে চা বিক্রি করছেন তপন। বাজার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে তেলিনপাড়া এলাকায় তাঁর বাড়ি। দু’দশক ধরে তিনি কেটলি হাতে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করেছেন। আট বছর আগে বাজার কমিটি তাঁকে ‘শেড-এর নীচে দোকান করার জায়গা দেয়। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, প্রতি মঙ্গলবার বাজারে নবদ্বীপ, পাটুলি, লক্ষ্মীপুর, বেলেরহাট, নিমতলা, সমুদ্রগড়, পোলেরহাট থেকে বহু মানুষ ভিক্ষা করতে আসেন। গত মঙ্গলবার নবদ্বীপ এলাকার বাজার বন্ধ থাকায় বেশি সংখ্যক ভিক্ষুক পারুলিয়া বাজারে এসেছিলেন। তাঁদের বড় অংশই বয়স্ক। কাজ করার তেমন ক্ষমতা নেই তাঁদের। বাজারে ভিক্ষা করে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তাঁরা। ক্লান্ত ভিক্ষুকদের দোকানে ডেকে আনেন তপন। তাঁদের হাতে জলের বোতল দেন। পরে খাওয়ান গরম চা আর বিস্কুট। কিছু ভিক্ষুককে ফলও দেন। আনন্দ বালা, গোপাল মণ্ডল, বন্দনা দাসীদের কথায়, ‘‘ভিক্ষা করতে এসে দলবেঁধে ওঁর দোকান গেলেও বিরক্ত হন না উনি। হাসি মুখে চা আর বিস্কুট এগিয়ে দেন।’’

কত মানুষকে বিনা পয়সায় চা, বিস্কুট খাওয়ান? চায়ের গুমটি থেকে উত্তর আসে, ‘‘কখনও ১০০, কখনও ৮০। হিসাব করিনি। যতক্ষণ ওঁরা আসেন, আমি খাইয়ে যাই। হিসাব করে দেখেছি সপ্তাহে এক থেকে দেড় দিনের আয় চলে যায় ওঁদের সেবায়। তবে এ নিয়ে আক্ষেপ নেই। যাঁরা রোদে পুড়ে ভিক্ষাবৃত্তি করেন, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে ভাল লাগে। যত দিন কর্মক্ষম থাকব, ততদিন এ ভাবেই সেবা করব।’’

তপন জানান, তিনি মাতৃহারা হয়েছিলেন মাত্র দেড় বছর বয়সে। বাবা প্রভাতচন্দ্র দেবনাথ খেতমজুরের কাজ করে ছেলেমেয়েদের বড় করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাবার মৃত্যু হয়েছে বছর আট আগে। ছোট থেকেই পরিবারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। অভাবের সংসারে ভালবেসে কেউ কিছু দিলে আনন্দ হত। তখনই ঠিক করেছিলাম, রোজগার করলে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াব।’’ তপনের দুই ছেলে কর্ণ এবং অর্জুন-সহ পরিবারের সকলেই এই কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেন।

এলাকার বাসিন্দা দীপঙ্কর চক্রবর্তী, অনিল দেবনাথ, শঙ্কর ভৌমিক বলেন, ‘‘প্রতিদিন আমরা ওঁর দোকানে চা খাই। অসহায় মানুষ, যাঁরা ওঁর দোকানে আসেন, তাঁদের পরম যত্নে চা খাওয়ান উনি। অর্থ নেন না। ওঁর মতো মানুষ এলাকার সম্পদ।’’ পারুলিয়া বাজার কমিটির সম্পাদক তথা পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কালীশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে তপনকে চিনি। শুধু সপ্তাহে এক দিন নয়, অন্য দিনও অসহায় কোনও মানুষ ওঁর দোকানে এলে তাঁকে বিস্কুট আর চা খাওয়ান তপন। বড় মন না হলে এত বছর ধরে এই কাজ করতে পারেন না কেউ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Purbasthali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy