মানকরের সরকার বাড়ির মূর্তি দেখছে খুদেরা। নিজস্ব চিত্র।
বছর বছর নানা রকম থিমে সাজে না মণ্ডপ। সর্বজনীন পুজোর ভিড় বাড়তে থাকায় সংখ্যার বিচারেও কমে যাচ্ছে তারা। তবু এখনও স্বাতন্ত্র বজায় রেখে এলাকায় সমান জনপ্রিয় বহু পারিবারিক পুজো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সর্বজনীনেরই চেহারা নিয়েছে এই সব সাবেক বাড়ির পুজো। নানা আচার-রেওয়াজ বয়ে নিয়ে চলা এই সব পুজো গ্রামের মানুষের কাছে বড় আকর্ষণ।
বুদবুদের মানকরে রায়পুর বিশ্বাসবাড়ির পুজো তিনশো বছরের পুরনো। এই পরিবারের পূর্বপুরুষ রামমোহন বিশ্বাস ছিলেন অপুত্রক। দুর্গাপুজা শুরু করার পরের বছরই তাঁর পুত্রসন্তান হয়। সেই পুজো চলে আসছে। আগের মতোই এখনও মশাল জ্বালিয়ে বন্দুকের তোপের প্রতিধ্বনি দিয়ে শুরু হয় সন্ধিপুজোর আরতি। নবমীর দিন হাজার চারেক পাত পড়ে। গোটা গ্রাম মাতে এই পুজো নিয়ে। এমনিতে এখন বাড়িতে থাকেন জনা ৩০ সদস্য। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সদস্যেরা ও আত্মীয়স্বজন পুজোয় বাড়ি আসেন। পরিবারের তরফে জানানো হয়, তখন বাড়ির লোকই বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ছ’শো। বর্তমানে বাড়ির অন্যতম কর্তা অরুণ বিশ্বাস বলেন, “আমরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে আয়োজন করি। পুরোনো রেওয়াজ মেনে এখনও দুঃস্থদের কাপড় দেওয়া হয়।”
ভট্টচার্য পাড়ার পুজো প্রায় দেড়শো বছরের পুরানো। এক সময়ে বলির প্রথা থাকলেও তা বন্ধ করতে উদ্যোগী হন পরিবারের সদস্যরা। প্রায় ছ’দশক আগে তা তুলে দেওয়া হয়। পুজোর দিনগুলিতে দৈনিক ২০ সের চালের ভোগ রান্না করা হয়। অষ্টমীর দিন খিচুড়ি, বাকি দিনগুলিতে ভাত, এক ধামা বিভিন্ন সব্জির নিরামিষ পকোড়া, আলু পোস্ত, নানা তরি-তরকারি, পায়েস, বিভিন্ন রকম নাড়ু সহযোগে দেবীর ভোগ হয়। তা বিতরণ হয় দর্শনার্থীদের মধ্যে। বাড়ির সদস্যা কল্যাণী ভট্টাচার্য বলেন, “আয়োজনে যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে, তা দেখতেই ব্যস্ত থাকি আমরা। ভোগ রান্নায় মূল ভূমিকায় থাকেন বাড়ির পুরুষেরা। মেয়েরা সাহায্য করেন।”
নায়েকপাড়ার সরকার বাড়ির পুজো প্রায় দু’শো বছরের। এখানে শিব-দুর্গার পুজো হয়। কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীর বাহন থাকলেও দেবীর কোনও বাহন নেই। বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। আত্মীয়স্বজনেরা পুজোর সময়ে আসেন। এ ছাড়াও কবিরাজবাড়ির পুজো, অন্নপূর্ণাতলার পুজো, মুখোপাধ্যায় পরিবারের পুজোও বেশ জনপ্রিয় এই মানকরে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই সমস্ত পারিবারিক পুজো যা জাঁকজমকের সঙ্গে হয় তাতে সর্বজনীন পুজো নিয়ে তেমন আগ্রহ থাকে না তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy