জয়ের পরে মমতাজ সঙ্ঘমিতা।—নিজস্ব চিত্র।
পুরভোটের ফল ছিল ৩৫-০। তৃণমূলের দাপটে কার্যত খুঁজেই পাওয়া যায়নি বিরোধীদের। কিন্তু তার মাত্র আট মাসের মধ্যে লোকসভা ভোটে সেই দাপট অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছে বর্ধমান পুরসভায়। তৃণমূল জিতেছে ঠিকই, তবে জয়ের ব্যবধান কমেছে অনেকটাই।
গত পুরভোটে বর্ধমানের ৩৫টি ওয়ার্ডে বিরোধী সিপিএমের চেয়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার ৩৩২ ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। সে বার অবশ্য সিপিএম অভিযোগ তুলেছিল, প্রায় সমস্ত বুথ দখল করে ছাপ্পা দিয়েছে তৃণমূলের কর্মীরা। এ বার লোকসভার ভোটের দিনও প্রায় একই সুরে অভিযোগ তুলেছিল সিপিএম। তাঁদের দাবি ছিল, পুরসভার ২৯৪টি বুথের মধ্যে অন্তত ৩০টি সম্পূর্ণ দখল করে দিনভর ছাপ্পা দিয়েছে তৃণমূল। সিপিএমের বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রের প্রার্থী সাইদুল হক এই ৩০টি কেন্দ্রেই পুনর্নিবাচন দাবি করেছিলেন কমিশনের কাছে। কিন্তু শুক্রবার ভোটের ফল প্রকাশিত হতে দেখা গেল, গত বিধানসভা ও পুরসভা ভোটের তুলনায় তৃণমূলের ভোট কমেছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে ১,০৬,৮৬৯ ভোট পান।
আট মাস আগে গত পুরভোটে তৃণমূল ওই ৩৫টি ওয়ার্ডে পেয়েছিল ১,৪১,২৬৬টি ভোট। এ বারের লোকসভা ভোটে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের জয়ী প্রার্থী তৃণমূলের মমতাজ সঙ্ঘমিতা বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে পেয়েছেন ৮৫,২৩৪ ভোট।
বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রের এই কেন্দ্রেই সিপিএমকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে এগিয়ে এসেছে বিজেপি। পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি ২২টিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। সিপিএম দ্বিতীয় হয়েছে ১৩টি ওয়ার্ডে। বুথের দিক থেকে দেখতে গেলে, ২৯৪টি বুথের মধ্যে বিজেপি ২৭টি বুথে প্রথম স্থানে রয়েছে সিপিএম রয়েছে ৯টি বুথে। অর্থাত্ এই ৩৬টি বুথে তৃণমূল হেরেছে। বাকি ১৩০টি বুথে বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। শহরের তৃণমূল নেতারা অবশ্য এ সব পরিসংখ্যান উড়িয়ে দিয়ে দাবি করছেন, “আমাদের জয়ের ব্যবধান গত বিধানসভার তুলনায় সামান্য হলেও বেড়েছে। গত ২০১১ বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ছিল ৩৭,৪৫৪। এ বার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭,৫২৮। তৃণমূল পেয়েছে ৮৫,২৩৪ ভোট। অন্যদিকে বিজেপি পেয়েছে ৪৭,৭০৬। গত বিধানসভার তুলনায় এ বার তৃণমূলের ব্যবধান বেড়েছে মাত্র ৭৪ ভোট। শহরের এক তৃণমূল নেতার কথায়, “এই বাজারে, যেখানে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রে দল পিছিয়ে পড়ছে, সেখানে গত বিধানসভার তুলনায় ৭৪ ভোটে এগিয়ে যাওয়া তো স্বর্গ!”
গত পুরভোটে বর্ধমানের ১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ছিল ৬৭০৩। এ বার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৯৫। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পুরভোটে ব্যবধান ছিল ৬০৫৬, তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২৪৭। খোদ পুরপ্রধান স্বরূপ দত্তের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচ বুথের মধ্যে ৯০ ও ৯১ নম্বরে তৃণমূল হেরেছে। যদিও সমস্ত বুথ মিলিয়ে মাত্র ২৩৫ ভোটে ওই ওয়ার্ডে জিতেছে তৃণমূল। পুরভোটে তা ছিল ১০৭২। উপপুরপ্রধান মহম্মদ খোন্দেকার শাহিদুল্লাহের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে গত পুরভোটে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ছিল ৩৭১২। এ বার তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭৭২। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে পুরপিতা পরিষদ সদস্য অরূপ দাস ছিলেন মমতাজ সঙ্ঘমিতার ভোটের অনতম কাণ্ডারী। তাঁর ওয়ার্ডে ব্যবধান কমেছে ১৬৪২। তৃণমূলের অন্যতম নেতা তথা পুরপতির ঘনিষ্ঠ খোকন দাসের ওয়ার্ড, ২৩ নম্বরে পুরভোটের তুলনায় লোকসভা ভোটে ব্যবধান কমে দাঁড়িয়েছে ২৬১৩। ১০ নম্বরের পুর কাউন্সিলার পরেশ সরকারের ওয়ার্ডে এই ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ১৪৬৮। এছাড়া পুরসভার দলনেতা শৈল ঘোষ, বিশিষ্ট কাউন্সিলার শিখা দত্ত-সহ প্রত্যেকের ওয়ার্ডেই ব্যবধান কমেছে মাত্র আট মাসের ভেতর। অর্থাত্ বর্ধমান শহরে বিজেপি আর সিপিএমের ভোট কাটাকাটির লড়াইয়ে সুবিধা পেয়েছে তৃণমূল।
কিন্তু মাত্র আট মাসের মধ্যেই মানুষের মুখ ফেরানোর কারণ কী? শহরে উন্নয়নের ঘাটতিই কী মূল কারণ? বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান স্বরূপ দত্তের জবাব, “এ বার চর্তুমুখি লড়াই হয়েছে। গোটা দেশের মতো এই শহরেরও বিজেপি প্রচুর ভোট পেয়েছে। তাই মনে হচ্ছে আমরা একটু যেন পিছিয়ে পড়েছি। দু’বছর পরে বিধানসভা ভোটে দেখবেন, বিজেপির এই ভোট আর নেই। ফের তৃণমূলই রাজত্ব করছে।” বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক তথা মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এটা ঠিকই যে আমরা কোয়ান্টিটি হারিয়েছি। কিন্তু কোয়ালিটি রাখতে পেরেছি। আগামী দিনে বর্ধমান শহরের নানা উন্নয়নের দিকে মন দিতে অনুরোধ করব দলের নেতাদের।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy