চলছে পদ্ম সংরক্ষণ।—নিজস্ব চিত্র।
সীতা উদ্ধারে দুর্গার অকালবোধন করেছিলেন রামচন্দ্র। পূর্বী রামায়ণ অনুযায়ী শরতে দুর্গাপুজোর রেওয়াজ তখন থেকেই। সেই পুজোয় ১০৮ নীলপদ্মে (কারও মতো ১০০) দেবীকে তুষ্ট করতে চেয়েছিলেন রামচন্দ্র। কিন্তু বিধি বাম! ১০৭টি নীলোত্পলের বেশি কিছুতেই জোগাড় করতে পারলেন না রাম। তখন প্রতিশ্রুতি পূরণে নিজের নীলপদ্মের মতো চোখ উত্সর্গ করলেন দেবীকে। দেবীও ভক্তের ভক্তির টানে সাক্ষাত্ দেখা দিলেন রামচন্দ্রকে।
দুর্গাপুজোর সঙ্গে পদ্মের যোগ বোধহয় সেই তখন থেকেই। দেবীপক্ষের শুরুতেই তাই পদ্মফুলের চাহিদার কথা মাথায় রেখে তা সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছেন বর্ধমানের চাষিদের একাংশ। জেলার নানা প্রান্তের পুকুর, দিঘি থেকে ঝুড়ি ঝুড়ি পদ্ম তুলে হিমঘরে জড়ো করছেন তাঁরা। চাষিদের কথায়, ষষ্ঠী থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে পদ্মের বিপুল চাহিদা দেখা যায়। তখন বাজারহাটে হিমঘর থেকে পদ্ম নিয়ে গিয়েই পসরা সাজা ফুল ব্যবসায়ীরা। তবে হিমঘরে মূলত সংরক্ষণ করা হচ্ছে পদ্মের কুঁড়ি। চাষিদের কথায়, হিমঘরের ঠাণ্ডা থেকে বের হলেই লাল বা গোলাপি হয়ে ফুটে উঠবে ওই কুঁড়ি।
বর্ধমানের অদূরে তালিত গ্রামের বাসিন্দা রাজু রায় প্রতি বছরই স্থানীয় একটি দিঘিতে পদ্ম চাষ করেন। গত কয়েক বছর ধরেই পুজো মরসুম শুরু হতেই পদ্মের কুঁড়ি তুলে হিমঘরে সংরক্ষণ করেন তিনি। রাজুবাবু বলেন, “দিঘি বা জলাশয়ের মালিককে কিছু টাকা দিয়ে চাষ শুরু করি। জ্যেষ্ঠ মাস নাগাদ পদ্ম চাষ শুরু হয়। চলে কার্তিক পর্যন্ত। বাকি ছ’মাস জলাশয় ফাঁকাই পড়ে থাকে। হিমঘরের ভাড়াও খুব বেশি নয়।” জানা গেল, এক ঝুড়ি (১৫০০-২০০০ পিস) পদ্ম কুঁড়ি রাখতে হিমঘরের ভাড়া লাগে ১০০ টাকা। ১৫ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত রাখা যায়। আর শারদীয়া মরসুম ছাড়া বাকি সময় আরও কম দামে পদ্ম রাখা যায়। হিমঘর থেকেই সরাসরি হাটে পাইকারি বা খুচরো বিক্রি হয় সেগুলি। রাজুবাবু বলেন, “এ বার পদ্মের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। পাইকারি বাজারে এক একটি সাদা পদ্ম ৫ টাকা ও লাল পদ্ম ৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরো বাজারে দাম ৮ টাকা ও ১০ টাকা।”
শহরের আরেক পদ্ম চাষি মিতুল রায় বলেন, “পদ্ম কুঁড়ি হিমঘরে রাখার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। কলকাতা, হলদিয়া, হাওড়া থেকে উদ্যোক্তারা পাইকারি দরে পদ্মফুল কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। একসঙ্গে ১০৮টি পদ্মের গোছারও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।” বর্ধমানের হাটগোবিন্দপুর, খণ্ডঘোষের চা গ্রাম, গলসির গ্রামগুলিতে ভালই পদ্ম চাষ হয়। অনেকে সারা বছর অন্য শাকসব্জি চাষ করলেও বছরের এই সময় পদ্মচাষ করেন। পুজোর মরসুমে পদ্মের চাহিদা দেখে আশায় বুক বাঁধছেন তাঁরাও।
বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাপতি দেবু টুডুও জানান, জেলার হিমঘরগুলিতে ফল ও শাকসব্জি রাখার সমস্যা রয়েছে। সে জন্য জেলার বিভিন্ন ব্লকে বহুমুখী হিমঘর তৈরির জন্য আমরা কৃষি দফতরের কাছে আবেদন জানিয়েছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy