শিক্ষাবর্ষ পার। কয়েকটা রাত পেরোলেই পরীক্ষা। তবু বহু পরীক্ষার্থীর হাতে পৌঁছল না বই। ‘বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃৃতির ইতিহাস’ বইটি না পেয়েই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে চলেছে জেলার কয়েকশো পড়ুয়া।
১৩ মার্চ, শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। প্রথম দিনেই রয়েছে প্রথম ভাষার পরীক্ষা, বেশির ভাগ পড়ুয়ার ক্ষেত্রেই যা বাংলা। জেলার নানা স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, চলতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে মে মাসে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তালিকায় থাকা বাংলা বইটি বাজার থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা কিনে নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে। কিন্তু দিন কয়েকের মধ্যেই সমস্যা দেখা দেয়। কবীর সুমন প্রসঙ্গে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় রাজ্য সরকার বইটি বাতিল করে। জুলাইয়ের শেষ দিকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, বইটির পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। স্কুলগুলি তা সংগ্রহ করতে পারে।
এর পরে জেলা সর্বশিক্ষা অভিযানের মাধ্যমে তা পৌঁছয় সহকারী স্কুল পরিদর্শকদের দফতরে। সেখান থেকে অগস্টের মাঝামাঝি বই সংগ্রহ করে স্কুলগুলি। কিন্তু, স্কুলে যে সংখ্যক পড়ুয়া, তার মাত্র অর্ধেক বা তা থেকে সামান্য বেশি বই দেওয়া হয় অধিকাংশ স্কুলকে। ফের বই এলে তা বাকি পড়ুয়াদের জন্য দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু সেই বাকি বই আর মেলেনি বলে স্কুলগুলির অভিযোগ। ফলে, বহু পড়ুয়াই বাংলা পরীক্ষায় বসতে বাধ্য হচ্ছে হাতে বইটি না পেয়েই।
দুর্গাপুর মহকুমায় নতুনডাঙা হাইস্কুল, সিলামপুর হাইস্কুল, মলানদিঘি হাইস্কুল, অন্ডাল হাইস্কুল-সহ নানা স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, দ্বাদশ শ্রেণির বহু পড়ুয়াই বইটি হাতে পায়নি। পড়ুয়ারা জানায়, সহপাঠীদের সঙ্গে ভাগ করে বইটি পড়তে হয়েছে। এর ফলে পড়াশোনায় সমস্যা হয়েছে। পরীক্ষায় তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা অনেকেরই। এক পরীক্ষার্থীর কথায়, “বই হাতে থাকলে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তা কাজে লাগানো যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই। বাংলায় খারাপ ফল হলে সার্বিক ফলে তার ছাপ পড়তে পারে।” পড়ুয়াদের অধিকাংশই সহপাঠীদের কাছ থেকে বইটি নিয়ে প্রতিলিপি করে নিয়েছে। তাদের কথায়, “টেস্ট পরীক্ষাও দিয়েছিলাম বইটি ছাড়া। খুব অসুবিধা হয়েছিল। উচ্চ মাধ্যমিকের আগে তাই বাধ্য হয়ে টাকা খরচ করে প্রতিলিপি করিয়েছি।”
দুর্গাপুরের সহকারী স্কুল পরিদর্শক সুকুমার সেন অবশ্য এর জন্য খানিকটা দোষারোপ করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষগুলিকেই। তাঁর দাবি, প্রথম পর্যায়ে যা বই এসেছিল তা বিভিন্ন স্কুলের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এর পরে টেস্ট পরীক্ষার পরে আরও এক দফা বই আসে। কিন্তু কোনও স্কুল সেই বই নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি। বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা যদিও পাল্টা দাবি করেছেন, দ্বিতীয় দফায় বই আসার খবর তাঁদের কাছে পৌঁছয়নি। তা ছাড়া, টেস্ট পরীক্ষার পরেই পড়ুয়ারা আর বসে না থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের কথা ভেবে বিকল্প ব্যবস্থা করে নিয়েছিল।
বই না মেলা নিয়ে এমন চাপানউতোর চলছেই। পড়ুয়াদের সমস্যার অবশ্য তাতে কোনও সুরাহা হল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy