জামুড়িয়ার প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ফের দাদাগিরির অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। স্কুল কর্তৃপক্ষের বৈঠকের মাঝে ঢুকে জিনিসপত্র লন্ডভন্ড ও প্রধান শিক্ষিকাকে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে বর্ধমানের জামুড়িয়ার দুই তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশে অভিযোগ করেন ওই শিক্ষিকা। রাত পর্যন্ত অবশ্য অভিযুক্তদের ধরেনি পুলিশ।
ভাঙড়ে কলেজে ঢুকে শিক্ষিকার দিকে আরাবুল ইসলামের জগ ছোড়া, রায়গঞ্জে শিক্ষককে মারধর থেকে ঝাড়গ্রামে অধ্যক্ষের গালে চড়— গত তিন বছরে নানা স্কুল-কলেজে ঢুকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপরে হামলার ঘটনা ঘটেছে এ রাজ্যে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল তৃণমূল ও তাদের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দিকে। শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য বন্ধে তৃণমূলের উচ্চ নেতৃত্ব বারবার বার্তা দিলেও নিচুতলা যে তা মানছে না, বৃহস্পতিবার জামুড়িয়ার বনমালিপুর প্রাথমিক স্কুলের ঘটনায় ফের তা সামনে এসেছে।
জামুড়িয়ার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের এই স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা অপর্ণা সাহু নিজেও তৃণমূলের মহিলা সংগঠনের সদস্য। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুরে ওয়ার্ড শিক্ষা কমিটির কয়েক জনের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন অপর্ণাদেবী। তাঁর অভিযোগ, “সামনে পরীক্ষা রয়েছে। সে নিয়ে বৈঠক চলছিল। মাঝপথে সুদীপ মণ্ডল ও আলাউদ্দিন শাহ নামে স্থানীয় দুই যুবক ঘরে ঢুকে জানতে চায়, কেন তাদের এই বৈঠকে ডাকা হয়নি। এর পরেই টেবিল উল্টে, কাগজপত্র ছড়িয়ে দেয় ওরা। আমি পুলিশে খবর দেওয়ার জন্য মোবাইল ফোন বের করলে হাত মুচড়ে সেটি ফেলে দেয়।” এর পরে সুদীপরা গালিগালাজ করতে করতে ফিরে যান বলে জানান তিনি।
ঘটনার পরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বৈঠকে আসা শিক্ষা কমিটির সদস্য ও অভিভাবকেরা। ওয়ার্ড শিক্ষা কমিটির সদস্য আদিনাথ মণ্ডল জানান, স্কুলে একটি ভবন তৈরি হচ্ছে। সেই কাজ দেখভালের জন্য স্থানীয় কয়েক জনকে নিয়ে তদারক কমিটি গড়া হয়েছে। তাতে সুদীপরা রয়েছেন। আদিনাথবাবুর দাবি, “ওরা হয়তো মনে করেছে, বৈঠক করে সেই কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। ভুল ধারণা থেকে এমন গোলমাল পাকাল।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুদীপ ও আলাউদ্দিন ইট-বালি সরবরাহের ব্যবসা করেন। তাঁরা জামুড়িয়া ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি পূর্ণশশী রায়ের অনুগামী বলে পরিচিত। সিপিএমের অজয় জোনাল সম্পাদক মনোজ দত্তের অভিযোগ, “ওই দুই তৃণমূল কর্মী এলাকায় রীতিমতো দাদাগিরি করে বলে শুনেছি। আজ তারা যা করেছে, নিন্দার ভাষা নেই।”
সুদীপ ও আলাউদ্দিনের পাল্টা দাবি, “প্রধান শিক্ষিকা তদারক কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি তৈরি করছেন খবর পেয়ে স্কুলে গিয়েছিলাম। আমাদের না জানিয়ে কেন এরকম করা হল, তা জানতে চাই। কিন্তু উনি হঠাৎ টেবিল উল্টে, মোবাইল ছুড়ে নাটক শুরু করেন। আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে বুঝতে পেরে সঙ্গে-সঙ্গে চলে এসেছি।” তৃণমূল নেতা পূর্ণশশীবাবুর বক্তব্য, “সুদীপরা যেমন আমাদের কর্মী, অপর্ণাদেবীও তেমন আমাদের সক্রিয় কর্মী। কোনও ভুল বোঝাবুঝি থেকে এমন ঘটেছে বলে জেনেছি। তা মিটেও যাবে।”
তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, “শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ রয়েছে, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, এমন কোনও কাজ করা যাবে না। যে-ই গোলমাল করে থাকুক, দোষ প্রমাণ হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “প্রধান শিক্ষিকার অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গণ্য হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy