প্রতীকী ছবি।
বন্ধের গেরো পুরো কাটেনি। ব্যাঙ্ক খুললেও ইন্টারনেট না থাকায় লেনদেন স্বাভাবিক নয়। কিন্তু, পুজোর মুখে হাতে টাকা না থাকলে হয়! সে জন্য পাহাড়ে এখন ভীষণ কদর ‘এটিএম-দাজু’ বা ‘এটিএম-ভাই’দের।
পাহাড়েও বয়সে ছোটরা ‘ভাই’। আর নেপালিতে দাদা হল ‘দাজু’। পাহাড়ে এটিএম অকেজো হয়ে যাওয়ায় তাঁদের দিয়েই শিলিগুড়ি থেকে টাকা তোলাচ্ছেন পাহাড়বাসী।
দাজু-ভাইরা রোজই গাড়ি ভাড়া করে আসছেন শিলিগুড়িতে। এলাকার পরিচিতরা নাকি নিজেদের এটিএম কার্ড তুলে দিচ্ছেন তাঁদের হাতে। সঙ্গে কাগজে লিখে দিচ্ছেন পিন-ও। শিলিগুড়িতে পৌঁছে কার্ডের গোছা নিয়ে তাঁরা ঢুকছেন এটিএম কিয়স্কে। প্রায় ২০ টি এটিএম কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলে যখন বার হচ্ছেন, বাইরে তখন দীর্ঘ লাইন। অপেক্ষারতদের মুখে বিরক্তি।
তবে ‘এটিএম দাজু-ভাই’দের কাছে সব শুনে তাঁদের অনেককেই বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘সত্যিই তো! এ ভাবে কতদিন চলতে পারে?’’ দার্জিলিং মোড় থেকে শুরু করে চম্পাসারি, হিলকার্ট রোড, সেবক রোডের এটিএম গুলিতে সকালের দিকে এমন ছবি দেখা যাচ্ছে প্রায় দিনই। নানা এটিএমে ঘুরে টাকা সংগ্রহ করে ফিরে গিয়ে তা পরিচিতদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ‘দাজু-ভাইরা’।
আরও পড়ুন: বন্ধের আগেই লম্বা ছুটিতে রোশনের স্ত্রী
কার্শিয়াঙের লোগেন ছেত্রী, দার্জিলিঙের সুপেন লামারা স্নাতক হওয়ার পরে বেকার বসে রয়েছেন। ব্যাঙ্ক খোলার পরেও টাকা তোলা যাচ্ছে না দেখে পরিচিতরা তাঁদের অনুরোধ করেন, শিলিগুড়ি গিয়ে টাকা তুলে এনে দেওয়ার জন্য। লোগেন বললেন, ‘‘সারা দিনে ৫০ জনের এটিএম কার্ড নিয়ে টাকা তুলে দিলেই কিছু বাড়তি টাকা আয় হচ্ছে। লোকের উপকারও হচ্ছে।’’
কিন্তু, এটিএমের পিন একেবারেই ব্যক্তিগত। তা কাউকে জানালে সমস্যা হতে পারে। কার্শিয়াঙের এক প্রবীণ জিএনএলএফ কর্মী সন্তোষ প্রধান বলেন, ‘‘নিরুপায় হয়েই দিচ্ছেন। ব্যাঙ্কের লেনদেন স্বাভাবিক হলে পিন পাল্টে নেবেন।’’ তিনি জানান, যান চলাচল আগের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক হলেও সবার পক্ষে গাড়ি ভাড়া করে ২-৫ হাজার টাকা তুলতে শিলিগুড়িতে যাতায়াত সম্ভব নয়। সে জন্যই সাময়িক ব্যবস্থা। আর
তাকে ঘিরে অনেকেরই নতুন রোজগারের ব্যবস্থা।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শর্মিলা রাই, সামদেন ভুটিয়ারা বললেন, ‘‘পাহাড়ে পুজো হবেই। ভাইটিকাও হবে। নতুন পোশাক, পুজোর খরচের জন্য হাতে বাড়তি টাকা দরকার। তাই কার্ড, পিন দিতে বাধ্য হচ্ছি। সব স্বাভাবিক হলে না হয় পিন পাল্টে নেব।’’
আলোচনাপন্থী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রথম সারির এক নেতা জানান, নানা সময়ে শিলিগুড়িতে যাতায়াতের সময়ে পড়শিদের অনুরোধে তাঁর গাড়ির চালককেও একেক দিনে ৩০-৪০ জনের কার্ড দিয়ে টাকা তুলে দিতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পরিষেবা বাবদ কোনও টাকা লাগেনি। কিন্তু, নেতারা তো রোজ শিলিগুড়িতে যাতায়াত করছেন না। তাই লোগেন, সুপেনের মতো এটিএম দাজু-ভাইরাই এখন ভরসা অনেকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy