জল কমে শীর্ণ চেহারা আত্রেয়ীর। ছবি: অমিত মোহান্ত।
‘‘...শক্তিবাবু তাঁর নৌকো লাল রং ক’রে দিলেন। তার নাম দিলেন রক্তজবা। তিনি মাঝে মাঝে নৌকোয় ক’রে কখনো তিস্তা নদীতে কখনো আত্রাই নদীতে কখনো ইচ্ছামতীতে বেড়াতে যান।...’’
সহজ পাঠ দ্বিতীয় ভাগে বাংলার অনেক নদীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের এই নদীর কথাও। তা জেলা সদর বালুরঘাটের শ্লাঘার বিষয়ও। কারণ, বালুরঘাটের পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে এই নদী। তবে এখন বর্ষাকাল ছাড়া আত্রেয়ী নদীতে নৌকা করে বেড়াতে যাওয়া কঠিন। কারণ, নদীর উৎসমুখে বাংলাদেশের দিকে কংক্রিটের সেচবাঁধ দিয়ে জলধারা আটকে দেওয়ায় নদী দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শহরবাসী গত কয়েক মাস ধরেই দাবি তুলছেন, আত্রেয়ীর শীর্ণ দশা ঘোচাতে উদ্যোগী হোক কেন্দ্র-রাজ্য। তাই ঢাকা সফরের মুখে আত্রেয়ী নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর তৎপরতায় কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছে বালুরঘাট।
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কোনও রকম আলোচনা ছাড়া কী করে বাংলাদেশ সরকার আত্রেয়ী নদীর উপর বাঁধ দিল, সেই প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি দিয়ে অবহিত করেছেন। তাতে আত্রেয়ী রক্ষায় আন্দোলনে সামিল বালুরঘাট শহরের একাধিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা খানিকটা স্বস্তিতে। তাঁরা জানান, বিষয়টি দুই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনার বিষয় হলে সমস্যার কিছু একটা সুরাহা হতে পারে। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, ‘‘কুমারগঞ্জে সীমান্তের ওপারে আত্রেয়ীতে বাঁধ দিয়ে জল আটকে দেওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী দেখছেন।’’
জেলা সদর বালুরঘাটে গত কয়েক মাস ধরেই আত্রেয়ীকে বাঁচানোর দাবি উঠছিল। এলাকার চাষিরা জানান, আত্রেয়ী জলহীন হয়ে পড়ায় নদী থেকে জল তোলার সেচ প্রকল্পগুলি অকেজো হয়ে যাচ্ছে। এমনকী, শহরের বাড়িতে পানীয় জল সরবরাহের মতো কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আত্রেয়ী নদী থেকে জল তুলে শোধন করে বাড়িতে সরবরাহের ওই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার তিন বছর আগে বালুরঘাট পুরসভাকে ৪২ কোটি টাকা দিয়েছিল। সম্প্রতি ইনটেক পয়েন্ট তৈরির জন্য নদীর জল মেপে খতিয়ে দেখতে গিয়ে পুর ইঞ্জিনিয়ারেরা জলহীন আত্রেয়ীর শীর্ণ রূপ দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। নদী থেকে প্রকল্পটির জন্য রোজ ১ লক্ষ ২৫ হাজার গ্যালন জল দরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই পরিমাণ জল আত্রেয়ী থেকে মিলবে না বলে ইঞ্জিনিয়ারেরা জানিয়ে দেন।
নদী রক্ষায় পদক্ষেপ চেয়ে এরপর বালুরঘাট পুর কর্তৃপক্ষের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। ‘আত্রেয়ী সত্যাগ্রহ মুভমেন্ট’ নামের মঞ্চ গড়ে আন্দোলনে নামেন বাসিন্দারাও। মঞ্চের তরফে মানববন্ধন, মোমবাতি জ্বালিয়ে মিছিল, নাটক হয়েছে। আত্রেয়ীতে কাগজের নৌকা ভাসিয়ে প্রতিবাদও করেছেন তাঁরা। সোশ্যাল নেওয়ার্কিং সাইটেও জনমত গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই খবরও পৌঁছয় নবান্নে। বালুরঘাটের পরিবেশপ্রেমীদের তরফে বুধবারই মুখ্যমন্ত্রীকে ফ্যাক্স মারফত আত্রেয়ীর বিপন্নতার বিষয় জানিয়ে হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়। তার পরেই আত্রেয়ী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানোয় খুশি ওই সংস্থার সম্পাদক তুহিনশুভ্র মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘দুদেশের যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকের মাধ্যমে আত্রেয়ীর জলবন্টন নিয়ে আলোচনা জরুরি।’’ শহরের নাট্যকর্মী জিষ্ণু নিয়োগীর কথায়, ‘‘অবশেষে আত্রেয়ীর সমস্যা বুঝে মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ায় আমরা আশাবাদী।’’ আশাবাদী পুরসভাও। চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে শহরের জলপ্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরাও আশাবাদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy