সঞ্জয় রায়। —ফাইল চিত্র।
আপাতদৃষ্টিতে কোনও পরিবর্তন নেই হাবভাবে। প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের ‘পহেলা বাইশ’ ওয়ার্ডের তিন নম্বর সেলের আবাসিকটিকে দেখে বোঝার জো নেই, তার জীবনে সদ্য কী পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে।
কোর্টে নিয়ে যাওয়ার পথে সংবাদমাধ্যমের সামনে বা এজলাসে পুলিশের সঙ্গে টুকটাক বাক্য বিনিময়ে যে সঞ্জয় রায়কে দেখা গিয়েছে, সংশোধনাগারের অন্দরে সে যেন খোলসের ভিতরে গুটিয়ে বলে মত কারারক্ষীদের। সোমবার নিম্ন আদালতের বিচারক তাকে আমরণ কারাদণ্ড দেওয়ার পরেও সেই খোলস ভেঙে সঞ্জয়ের মধ্যে কোনওরকম মানবিক আবেগের ছোঁয়াচ দেখা যায়নি।
শনিবার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার এবং সোমবার সাজা ঘোষণার আগে-পরে জেলের অন্দরে সে ছিল কার্যত নির্বিকার। শুধু রবিবার দুপুরে সঞ্জয়ের তরফে স্পষ্ট প্রতিক্রিয়ার কিছুটা আভাস মিলেছে। জনৈক কারারক্ষী বলেন, “দুপুরে খাওয়ার সময়ে ওকে (সঞ্জয়) আমরাই জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তোমার ফাঁসির সাজা হতে পারে বলে শুনছি। ও উত্তরে বলে, আমি নির্দোষ। সেটা আমার থেকে ভালো কে আর জানে! আমার আইনজীবীরাই যা কিছু দেখবে। আমার কোনও প্রভাব-প্রতিপত্তি বা টাকা-পয়সা নেই। আমি আর কী করতে পারি।" মঙ্গলবার সঞ্জয়ের আইনজীবী কবিতা সরকার বলেন,"নিম্ন আদালতের আমরণ কারাবাসের সাজার প্রেক্ষিতে আমরা হাইকোর্টে আবেদন করতে চলেছি।"
কারা আধিকারিকদের একাংশের মতে, “সঞ্জয়ের আপাত নির্বিকার হাবভাবের মধ্যে একটা নাছোড় ভাবও আছে। মাপা কথাবার্তা। আবেগ লুকোতে জানে। মোটেই সরল সাদাসিধে আসামি বলা যায় না।” বিচার পর্ব বা রায় ঘোষণার আগে-পরে সঞ্জয়ের মধ্যে আবেগের বহিঃপ্রকাশ এতটা নিয়ন্ত্রিত দেখে কারারক্ষীদের একাংশ বেশ বিস্মিত। জেল সূত্রের খবর, সঞ্জয় রোজই চুপচাপ রাতের খাবার খেয়েছে। আগ বাড়িয়ে কাউকে কিছু বলা বা বেশি কথায় কারও প্রশ্নের জবাব দেওয়ায় তার কোনও বাড়তি উৎসাহ দেখা যায়নি। সোমবার বেশি রাতে কোর্ট থেকে ফিরেও সে চুপচাপ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
কারারক্ষীদের একাংশ বলছেন, কোর্টে নিয়ে যাওয়ার পথে যে সঞ্জয় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছে বা যে সঞ্জয় আদালতে বিচারকের সামনে আত্মপক্ষ সমর্থনে সচেষ্ট তার সঙ্গে জেলের সঞ্জয়ের আকাশ-পাতাল ফারাক। প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের সেলে এত দিন বিচারাধীন বন্দি হিসেবেও নিঃসঙ্গ ভাবে সে থাকত। অগস্ট থেকে সেলে একাই রয়েছে সঞ্জয়। 'হাই-প্রোফাইল' বিচারাধীন বন্দির জন্য বিশেষ পাহারার ব্যবস্থা ছিল। সেলের ভিতরে সিসি ক্যামেরা ছিল। স্পর্শকাতর মামলার অভিযুক্ত বলে সঞ্জয় কারও সঙ্গে বেশি মেলামেশা করে বা যত্র তত্র ঘুরে বেড়ায় তা খুব একটা পছন্দ ছিল না জেল কর্তৃপক্ষের। কারারক্ষীদের একাংশের কথায়, পুলিশ হেফাজত থেকে জেলে আসার পর প্রথম কয়েকদিন সে একটু চেঁচামেচি করেছিল। তখনই কারা আধিকারিকেরা বুঝিয়ে দেন, এত দিন কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার থাকলেও জেলে তার কোনও রকম পুলিশসুলভ হামবড়ামি বরদাস্ত করা হবে না। এর পর থেকেই সঞ্জয় কার্যত গুটিয়ে যায় বলে জানাচ্ছেন কারারক্ষীরা। তার বাড়ির লোকেদের সঙ্গে কয়েক মাসে সঞ্জয়ের কার্যত যোগাযোগ ঘটেনি বলেও সূত্রের খবর। খাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের সঙ্গে যা সঞ্জয়কে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। তবে আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে কখনও তার মুখে কি়ছু শোনা যায়নি।
সংশোধনাগারের অভ্যন্তরীণ সূত্রের খবর, কয়েক জন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়ের জন্য কয়েকটি পোশাক দিয়ে যায়। অন্য কোনও বন্দির বাড়ির লোকের মতো, ক্যান্টিনের খাবার কিনে খেতে সঞ্জয়ের জন্য কেউ টাকা দিয়ে যায়নি। গত কয়েক মাসে জেলের ক্যান্টিনে সে কিছু কিনেও খায়নি। সঞ্জয়ের মধ্যে তেমন বায়নাক্কা দেখা যায়নি বলেই জানাচ্ছেন কারাকর্তারা।
কারা দফতর সূত্রে খবর, সাজাপ্রাপ্ত বন্দি হিসেবে সঞ্জয়কে এখন দিনমজুরি করতে হবে। এ বিষয়ে কয়েক দিন পরে তার সঙ্গে কথা বলা হবে। সঞ্জয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক। জেল সূত্রের খবর, লেখালিখির কাজ সঞ্জয়কে দিয়ে হবে না। তবে বাগানের কাজে তার মধ্যে কিছুটা আগ্রহের আভাস মিলেছে। সঞ্জয়ের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সংশোধনাগারের নিয়ম অনুযায়ী, রোজকার কাজে ১১০ থেকে ১৩৫ টাকা মজুরির নিয়ম। সঞ্জয়ের কাজ অনুযায়ী মজুরি ঠিক হবে। এক কারাকর্তা বলেন, "এখন সঞ্জয়ের জন্য একটি 'নোটবুক চালু হবে। তাতে সঞ্জয়ের সব আচার-আচরণ নথিভুক্ত করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy