২০১৩ সালে তৎকালীন পঞ্চায়েত ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায় দক্ষিণ দিনাজপুরের 'খরা প্রবণ' তপন ব্লকের মানুষের জলকষ্ট মেটাতে পুনর্ভবা নদীতে জল প্রকল্পের শিল্যান্যাস করেছিলেন। বরাদ্দ করা হয়েছিল প্রায় ১৬৬ কোটি টাকা।
এক যুগ পরে তপন ব্লকের করদহ এলাকায় পুনর্ভবা নদী থেকে ওই জল উত্তোলন প্রকল্পের কাজ পঞ্চাশ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি পঞ্চাশ শতাংশ কাজ শেষ করে বাড়ি-বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়া হবে বলে শুক্রবার প্রশাসনিক বৈঠকে দাবি করলেন তৃণমূল বিধায়ক, ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র। কিন্তু ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করতে ১২ বছর লেগে গেল? কারিগরি সমস্যায় ওই প্রকল্পের কাজ শুরুতে দেরি হয় বলে বিপ্লব জানান। তিনি বলেন, ‘‘এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
চলতি গরমের মরসুমেও তপনের জলসঙ্কট মেটাতে সরকার ব্যর্থ বলে অভিযোগ তুলে সরব বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী অভিযোগ করেন, ‘‘কাটমানির জেরে জল প্রকল্পের কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে।’’ এ দিনের প্রশাসনিক বৈঠক আসলে লোক দেখানো। কেন্দ্রের জল জীবন মিশন প্রকল্পের কাজও ঢিমেতালে চলছে বলে তিনি দাবি করেন। গরম পড়তেই এ জেলার তপন ব্লক এবং হরিরামপুর ও বংশীহারি ব্লকের একাংশে তীব্র জলাভাব দেখা দিয়েছে। তপনের একাধিক স্কুল এবং গ্রামে গভীর নলকূপ থেকে জল না ওঠায় পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠেছে। জলের দাবিতে প্রায় রোজ রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বাসিন্দারা। সঙ্কট মোকাবিলায় এ দিন বিকেলে বালুরঘাটের প্রশাসনিক ভবনে মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রের উপস্থিতিতে প্রশাসনের কর্তারা বৈঠক করেন। ওই সভায় জন স্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের (পিএইচই) কর্তৃপক্ষ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও কর্মাধ্যক্ষ, জেলার আটটি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিডিও এবং প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বৈঠক হয়। বৈঠকের পরে মন্ত্রী বলেন, ‘‘বিজেপির অভিযোগের কোনও গুরুত্ব নেই। বৈঠকে জেলার সমস্ত জল প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’’ জল সঙ্কটে পড়া গ্রামগুলিতে জরুরি ভিত্তিতে সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে জল জীবন মিশন প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাড়িতে জল সরবরাহ চালু হবে বলে তিনি জানান। জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণ বলেন, "তপন ও অন্য ব্লকের গ্রামগুলিতে স্ট্যান্ড পোস্ট বসিয়ে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করবে পিএইচই। না হলে সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হবে।" আপাতত এলাকায় জলের ট্যাঙ্ক পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামলানো হবে বলে তিনি এ দিন জানিয়েছেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)