অস্ত্র তৈরির মেশিন। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
কাঁকিনাড়ার লাড্ডু কারখানার পরে এ বার আগরপাড়ার লেদ কারখানা! কিন্তু আড়ালে সেই একই জিনিস। বুধবার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ফের বেআইনি অস্ত্র কারখানার হদিস পেল কলকাতা পুলিশের ‘স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স’ (এসটিএফ)। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৮০টি অর্ধসমাপ্ত পিস্তল এবং দু’টি যন্ত্র-সহ নানা যন্ত্রাংশ। মূলত ৭ এমএম এবং ৯ এমএম পিস্তল তৈরি হত সেখানে।
এসটিএফ জানিয়েছে, সোমবার রবীন্দ্র সরণি থেকে মহম্মদ আসফাক ওরফে সোনু এবং মহম্মদ আসলাম নামে বিহারের দুই অস্ত্র কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়। আসফাকের বাড়ি সাহেবগঞ্জে এবং আসলাম মুঙ্গেরের বাসিন্দা। তাদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জেরা করতেই আগরপাড়ার উসুমপুরে ওই অস্ত্র কারখানার হদিস মেলে। কাঁকিনাড়ার মতো এখানেও মুঙ্গের থেকে অস্ত্র কারিগরদের আনা হয়েছিল।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গত ৩০ জুলাই ধর্মতলা থেকে জাল নোট ও অস্ত্র-সহ সুকু শেখ, মহম্মদ আমজাদ ও মহম্মদ আবদুল্লা নামে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জেরা করেই কাঁকিনাড়ার লাড্ডু কারখানার আড়ালে অস্ত্র কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। গ্রেফতার করা হয় আরও ৬ জনকে। ধৃত ৯ জনকে জেরা করে জানা গিয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে জাল নোট আমদানি এবং এ দেশ থেকে অস্ত্র রফতানির ব্যবসা করত তারা। এর আগে এমন বেআইনি ব্যবসার যুগলবন্দি দেখা যায়নি।
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছিল, মালদহের কালিয়াচক-সহ পাঁচটি জায়গায় ‘ইউনিট’ খুলেছে ওই দুষ্কৃতীরা। অস্ত্র বাংলাদেশে পাচার করা হত। কিন্তু সেই সময়েই আগরপা়ড়ার কারখানা বন্ধ করে পালিয়ে গিয়েছিল সকলে। তবে তারা যন্ত্রপাতি সরাতে পারেনি।
কিন্তু আসফাক ও আসলামের কথা জানা গিয়েছিল। সেই থেকে তক্কে তক্কে ছিল এসটিএফ। সোমবার কলকাতায় ঢুকতেই দু’জনকে পাক়ড়াও করা হয়। এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ এসটিএফের দল উসুমপুরে পৌঁছয়। পাড়ায় অত পুলিশের গাড়ি দেখে হকচকিয়ে যান এলাকার বাসিন্দারা। কারখানাটি তালাবন্ধ ছিল। তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন এসটিএফের গোয়েন্দারা। ভিতরে ইস্পাতের পাত ও যন্ত্রগুলি ছিল। তবে এখানে অস্ত্র তৈরির কাজ শেষ করা হত না। এখান থেকে কালিয়াচকে চলে যেত অর্ধসমাপ্ত অস্ত্র। সেই কারখানার হদিস এখনও পাননি গোয়েন্দারা। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতেরা সেই কারখানা চেনে না। ক্যারিয়ারেরা এসে সেটি নিয়ে চলে যেত। সেই ক্যারিয়ার কারা, তা জানতে চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। ওই ক্যারিয়ারদের ধরতে পারলে কালিয়াচকের কারখানার হদিসও মিলবে।
পুলিশ জেনেছে, বাড়িটিতে বেশ কিছু অপরিচিত মুখের আনাগোনা ছিল। গভীর রাতে ঘর থেকে বেশ কয়েক জনকে বেরোতেও দেখেছেন এলাকার বাসিন্দারা। এত কিছুর পরেও কেন স্থানীয় থানা খবর পায়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এলাকায়। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে পুলিশের ‘নেটওয়ার্ক’ কি ঢিলে হয়ে গিয়েছে? নাকি প্রভাবশালী কারও মদতে শিল্পাঞ্চলে এমন কারখানা চলছে? ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন-২) আনন্দ রায় শুধু বলেন, ‘‘এসটিএফ অভিযানে আমাদের সাহায্য চেয়েছিল। এর বেশি এটা নিয়ে কিছু বলতে পারব না।’’ এসটিএফ জানিয়েছে, আসলাম ও আসফাককে জেরা করে কামারহাটির একটি প্লাস্টিক কারখানা ও সংলগ্ন গুদামে হানা দিয়ে অস্ত্র তৈরির আরও চারটি যন্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy