‘চাইল্ড লাইন ১০৯৮, ডে অ্যান্ড নাইট’— দেশের সব ক’টি থানা, শিশুকল্যাণ সমিতি কিংবা বাসে-ট্রেনে এই বিজ্ঞাপনী পোস্টার সকলেই হয়তো দেখেছেন। শিশু সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলে, তাদের উপরে কোথাও কোনও নির্যাতন হলে কিংবা কোনও নিখোঁজের ঘটনা ঘটলেই এই নম্বরে ফোন করতে হবে। তারাই মুশকিল-আসান।
কিন্তু, সরকারি তরফে এত প্রচারের পরেও সমাজের সর্বস্তরের লোকজন চাইল্ড লাইন কী, কারা চালান অথবা সেখানে কী হয়, তা ভাল করে জানেন না। গত শনিবার পুরুলিয়ার নির্যাতিতা, তিন বছরের শিশুকন্যাটিকে বাঁকুড়া থেকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে আনার পরে যে খামতির ছবিটা ফের প্রকট হল। ওই দিন বাঁকুড়ার চাইল্ড লাইন অ্যাম্বুল্যান্সে করে ওই শিশু ও তার মাকে হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে কলকাতার চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধিরা হাসপাতালে যান শিশুটির খোঁজ নিতে। কিন্তু বাধা পান তাঁরা। কারণ, কলকাতার শিশু কল্যাণ সমিতির কোনও লিখিত চিঠি বা নির্দেশ তাঁদের কাছে ছিল না।
হাসপাতালের এক সূত্রের খবর, সোমবার সকালে শিশু কল্যাণ সমিতির চিঠি নিয়ে সুপারের অফিসে জমা দেওয়ার পরেও শিশুটিকে না দেখেই ফিরে আসতে হয় চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধিদের। পরে কলকাতা শিশু কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা যায়, চিঠির বয়ানে ত্রুটি ছিল। যদিও সমিতির বিশেষ এক সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালে চিকিৎসক এবং পুলিশের নিচুতলার কর্মীদের অজ্ঞতার কারণেই সে দিন চাইল্ড লাইনের লোকজন শিশুটিকে না দেখে এবং চিকিৎসকের সঙ্গে কোনও কথা না বলে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন। কারণ, চাইল্ড লাইন কী, সেটা তাঁদের বোঝানো গেলেও কর্মীদের পরিচয়পত্র দেখার পরে সংশ্লিষ্ট আইসিইউ-এর চিকিৎসকদের বক্তব্য ছিল, ‘‘এটা তো বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কার্ড। আপনি তো চাইল্ড লাইনের লোক নন!’’
শুধু চিকিৎসক নন, সেখানে উপস্থিত ওই হাসপাতালে পুলিশ ফাঁড়ির এক মহিলা কর্মীও জানেন না চাইল্ড লাইন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও সেটি চলে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে। যার ফলে হয়রানির শিকার হন চাইল্ড লাইনের কর্মীরা। তাই মেয়েটির অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ‘‘আমরা ঢুকতে পারিনি। জানি না।’’
পরে কলকাতার বিভিন্ন থানায় ফোন করে চাইল্ড লাইন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে শুধু নম্বরটি বলেন পুলিশকর্মীরা। কিন্তু, এই চাইল্ড লাইন কারা চালায়, তা বেশির ভাগই জানেন না। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, চাইল্ড লাইনের কর্মীরা পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও যদি নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছতে না পারেন বা বাধা পান, তা হলে শিশু সংক্রান্ত সমস্যা সামলাবেন কী করে? রাজ্যের শিশু সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সচেতনতা বাড়া দরকার। ওঁরা তো সরকারের হয়ে কাজ করেন। দফতরে কিংবা কমিশনে জানালে আমরা সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করব।’’
পুলিশের এই অজ্ঞতার আরও প্রমাণ একাধিক থানায় ফোন করে বোঝা গিয়েছে। থানা চাইল্ড লাইনের নম্বর দিলেও সেটা কারা চালায়, সে সম্পর্কে কোনও তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের নিচুতলার কর্মীদের এমন অবস্থা কেন? অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (তৃতীয়) ও যুগ্ম কমিশনারের (সদর) সুপ্রতিম সরকারকে ফোনে পাওয়া যায়নি। জবাব মেলেনি এসএমএস-এরও।
কলকাতা শিশু কল্যাণ সমিতি সূত্রে খবর, সুপ্রতিমবাবুর নেতৃত্বে সব থানার অফিসার ইন-চার্জদের নিয়ে প্রায়ই বৈঠক হয়। শিশু সংক্রান্ত সমস্যায় থানার কী করণীয়, তার বিশদ আলোচনাও হয়। তার পরেও অজ্ঞতা কেন, তা সমিতিরও অজানা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy