Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Prisoners

Women-Prisoner: ১৬ বছর আলিপুর সংশোধনাগারে, সখীর আশ্রয়ে অবশেষে জেলমুক্ত লক্ষ্মী

২০০৫ সালে উত্তর কলকাতার দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিটে লক্ষ্মীর সঙ্গী এক যুবককে গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়।

অপরাজিতার সঙ্গে লক্ষ্মী  (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

অপরাজিতার সঙ্গে লক্ষ্মী (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৪৭
Share: Save:

কথা ফুরোতে চাইছে না দুই সখীর! তেলুগুভাষী ছিপছিপে লক্ষ্মী চিন্তলপুরী ভাঙা বাংলায় শোনাচ্ছেন, ফেলে আসা জীবনের গল্প! সেই সঙ্গে আর্জি, “শুধু আমি নয়! চৈতালি, নবুলা, মালতীদিরাও তো কম কষ্ট পেল না! আর কত বছর গারদের ভিতরে ভুগবে বলো তো! ওঁদের জন্যও কিছু করো দিদি!”

যাঁকে কথাগুলো বলা, সেই অপরাজিতা গঙ্গোপাধ্যায়ও (মুনমুন) জেলের জীবনটা চেনেন। স্বামীকে খুনের মিথ্যে অপবাদে জীবনের ১৩টা বছর তাঁরও নষ্ট হয়েছে। কচি দুই ছেলে সেই যে কোলছাড়া হল, আর কখনও থাকাই হল না তাদের সঙ্গে। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে কলঙ্কমুক্ত হয়ে সেই অপরাজিতা এখন বহু বন্দিনীর ভরসা! কাজ করেন প্রান্তিকদের একটি মানবাধিকার সংগঠনে। আলিপুর সংশোধনাগারে ১৬টা বছর কাটিয়ে সদ্য মুক্ত লক্ষ্মীর হাতটা ধরে বলছেন, “জানি রে, প্রায় বিনা বিচারে বা বিনা শুনানিতে বছরের পর বছর বন্দি গরিব মেয়েদের লড়াই তো আমারই লড়াই!” মঙ্গলবার জেল থেকে বেরিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের মেয়ে লক্ষ্মী এখন ‘অপরাজিতাদির’ বাড়িতেই। অপরাজিতাই লক্ষ্মীর মুক্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।

২০০৫ সালে উত্তর কলকাতার দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিটে লক্ষ্মীর সঙ্গী এক যুবককে গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। দেহ উদ্ধারের সময়ে লক্ষ্মী সেই ঘরেই ঘুমোচ্ছিলেন। ২০০৬ সালে নিম্ন আদালতে সাজা হয় তাঁর। তবে ঘটনার শেষ এখানেই নয়। সংশোধনাগারে তাঁর একদা সঙ্গী অপরাজিতাই পরে লক্ষ্মীর মুক্তির দাবিতে হাইকোর্টে যান ২০১৯ সালে। হাইকোর্টে লক্ষ্মীর আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘উনি যে দোষী, তা নিশ্চিত বলা যায় না।’’ মামলা শোনার পরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি টি রাধাকৃষ্ণন ও বিচারপতি বিবেক চৌধুরী জেলে লক্ষ্মীর আচরণের খোঁজখবর নেন এবং জানান, তিনি যথেষ্ট সাজাভোগ করেছেন। দু’মাসের মধ্যে সরকারের মাধ্যমে কোনও স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে পুনর্বাসন দিয়ে লক্ষ্মীর মুক্তির সুপারিশ
করে হাইকোর্ট।

৪০ ছুঁই ছুঁই লক্ষ্মীর ক্ষেত্রে সেই দু’মাসই প্রায় দু’বছরে গড়িয়েছে। তাঁর হয়ে লড়াইয়ে নামা ‘হিউম্যান রাইটস ল নেটওয়ার্ক’-এর আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ দে-ও সরকারি মহলে বার বার চিঠি দিয়ে মুক্তির তদ্বির করেন। বন্দিদের ‘বাল্মীকি-প্রতিভা’য় সখীর দলের নৃত্যশিল্পী, লক্ষ্মীর কপালে তবু সহজে শিকে ছেঁড়েনি। হাইকোর্টের সুপারিশ সত্ত্বেও কেন লাগল এতটা সময়? ডিজি (সংশোধনাগার) পীযূষ পাণ্ডের ব্যাখ্যা, ‘‘হাইকোর্টের সুপারিশে লক্ষ্মীর মুক্তি নিয়ে আমরা রিভিউ বোর্ডের কাছে গিয়েছিলাম! ওঁরা রিপোর্ট দিলে তা ফের হাইকোর্টে পাঠাতে হয়। সব মিলিয়ে সময় লেগেছে৷’’ কিন্তু লক্ষ্মীর জীবনের দু’বছর যে নষ্ট হল, তার ক্ষতিপূরণ কে দেবেন? তার সদুত্তর কেউ দিতে পারেননি। তবে জেলের অন্দরে বন্দিদের মুক্তি বিষয়ক রিভিউ বোর্ড নিয়মিত বসে না-বলেও প্রশাসনের একাংশের অভিযোগ।

তা ছাড়া, মুক্তি মঞ্জুর হলেও লক্ষ্মীর পুনর্বাসন নিয়ে স্পষ্ট দিশা নেই। তিনি কলকাতার পুরনো ঠিকানায় থাকতেও চান না। লৌহকপাটের আড়ালে সেলাইয়ের নকশা বোনা থেকে বেকারিতে বিস্কুট, পাঁউরুটি তৈরি বা টুকটাক নার্সিংয়ের কাজ শিখেছেন লক্ষ্মী। এ বার বিশাখাপত্তনামের কাছে বেকারির কাজ করতে চান তিনি। আদরের বোনটিকে নিয়ে অপরাজিতা অবশ্য সাবধানী, বলেন, ‘‘তোর ভাইকে সব বলেছি! কী ভাবে ফিরবি, সেটা আমায় দেখতে দে!’’

জীবনের ঘা-খাওয়া দুই নারী
এখন পরস্পরের হাত আঁকড়ে রেখেছেন যে!

অন্য বিষয়গুলি:

Prisoners Imprisonment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy