বৃহস্পতিবার বাংলা সফরে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
বড় সভা হবে। কিন্তু সেটা সংখ্যায় বেশি নয়। তার বদলে ছোট ছোট সভা করতে হবে বেশি করে। প্রচুর সংখ্যায় মানুষকে জনসভায় হাজির না করে প্রচুর সংখ্যক ভোটারের দুয়ারে যেতে হবে নেতা-কর্মীদের। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার দিনভর কর্মসূচির শেষে শহরের এক হোটেলে গভীর রাত পর্যন্ত রাজ্য নেতাদের নিয়ে বৈঠকে অমিত শাহ এমনই নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন।
প্রতিবারই বাংলায় এসে বা দিল্লিতে রাজ্যের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে অমিত পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করে দেন। রাজ্য বিজেপি নেতাদের মধ্যে যা ‘অমিতভাইয়ের হোম টাস্ক’ বলে পরিচিত। একই সঙ্গে আগের ‘হোম টাস্ক’ ঠিক মতো হয়েছে কি না, সে বিষয়েও বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে থাকেন অমিত। বৃহস্পতিবারও তেমনই করেছেন। তা জানার পর শুক্রবার সকাল থেকেই নতুন করে কর্মসূচি সাজানোর পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর।
বৃহস্পতিবার দিনভর টানা কর্মসূচি ছিল অমিতের। বুধবার রাতেই তিনি দিল্লি থেকে সরাসরি অসমে চলে যান। বৃহস্পতিবার সকাল হতে না হতেই ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপল্স অ্যাসোসিয়েশন’ (জিসিপিএ)-এর নেতা অনন্ত রায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এর পরে উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে জনসভা। তার পর দক্ষিণবঙ্গের ঠাকুরনগরে। সেই জনসভার পর কলকাতায় সায়েন্স সিটি প্রেক্ষাগৃহে দলের তথ্যপ্রযুক্তি শাখার কর্মসূচি। তার পর আরও একটি আলোচনাচক্রে যোগ দিয়ে হোটেলে ফেরেন রাত ১০টা নাগাদ। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করে দেন বৈঠক। জানা গিয়েছে, বৈঠক শেষ হয় মধ্যরাত পার করে। তার পরেই সেই গভীর রাতে দিল্লি রওনা হন অমিত। অমিতের বৈঠকে নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে তৈরি ‘অঘোষিত’ কোর টিমকে ডাকা হয়েছিল। ছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। তা ছাড়াও ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা শিব প্রকাশ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়। শুক্রবার সকাল থেকে মেদিনীপুরে কর্মসূচি থাকায় বৈঠকে ছিলেন না শুভেন্দু অধিকারী। তবে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য বৈঠকের মতোই প্রথমে অমিত আগের ‘হোম টাস্ক’ সম্পর্কে খোঁজ নেন। কৃষক সুরক্ষা অভিযান, রথযাত্রা, জে পি নড্ডার সফরের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে কোথায় কেমন কাজ হয়েছে এবং চলছে তা শোনেন। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার কোচবিহার এবং ঠাকুরনগরের সভা ‘ঠিকঠাক’ হওয়ার জন্য রাজ্যনেতৃত্বের প্রশংসাও করেন। তার পরেই বলে দেন, অতঃপর কী করতে হবে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ যাত্রায় মূলত তিনটি নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন অমিত—
১। রথযাত্রা কর্মসূচিতে বেশি বেশি জায়গায় ছোট ছোট সমাবেশ করতে হবে। আরও বেশি করে শহর বা গ্রামের ভিতরে ‘পরিবর্তন যাত্রা’ নিয়ে ঢুকতে হবে। মাঝে মাঝেই রথ থামিয়ে ওই ছোট ছোট সভা করতে হবে।
২। ভোটারদের দরজায় দরজায় পৌঁছতে হবে। মানুষকে সমাবেশে নিয়ে আসার পরিবর্তে মানুষের আরও কাছে গিয়ে ছোট ছোট সভা করতে হবে। অমিতের বক্তব্য ছিল, একটি বড় সভার আয়োজনের জন্য যে পরিমাণ প্রস্তুতি নিতে হয়, সেই একই সময় ও প্রস্তুতিতে অনেকগুলি ছোট সভা করা সম্ভব। তা অনেক বেশি কার্যকরও হবে।
৩। শুধু রাজ্যনেতাদের নিয়ে কর্মসূচি করলে চলবে না। বুথ স্তরের কর্মীদেরও রথযাত্রা কর্মসূচিতে কাজে লাগাতে হবে। তাঁদের উপরেও দায়িত্ব দিতে হবে। দলে যাঁরা নতুন এসেছেন, তাঁদেরও নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিতে হবে। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে সামিল করতে হবে এই কর্মসূচিতে।
অমিতের ‘দুয়ারে বিজেপি’ নির্দেশ প্রসঙ্গে রাজ্য সভাপতি দিলীপ অবশ্য বলছেন, ‘‘ও সব আপনাদের ভাষা। বলতে চাইলে বলুন। তবে বিজেপি মানুষের দুয়ারেই আছে। অমিত’জি আরও বেশি করে মানুষের কাছে যেতে বলেছেন এটা ঠিক। কিন্তু তার আগে থেকেই রাজ্য বিজেপি ‘গৃহসম্পর্ক অভিযান’ কিংবা ‘কৃষক সুরক্ষা অভিযান’ কর্মসূচি নিয়ে মানুষের দুয়ারে গিয়েছে। খোদ সর্বভারতীয় সভাপতি কৃষকের দুয়ারে গিয়ে মুষ্টিভিক্ষা করেছেন। তার পরে আমরা সকলেও সেটাই করেছি। মানুষের কাছে শুধু নয়, এ বার মানুষের মনে ঢোকার কাজ চলছে।’’ বিজেপি সূত্রের খবর, ফেব্রুয়ারি মাসে আবার বাংলায় আসতে পারেন অমিত। সেই সঙ্গে নড্ডা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরও হতে পারে এই মাসে। তার দিনক্ষণ এবং কর্মসূচি চূড়ান্ত না হলেও সফর নিশ্চিত ধরে নিয়ে শুক্রবার থেকেই অমিতের দিয়ে যাওয়া ‘হোম টাস্ক’-এ মন দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাচ্ছে। শুক্র-সন্ধ্যাতেই হতে পারে জরুরি বৈঠক। বৈঠকে হলে সেখানে অন্য প্রথমসারির নেতাদের সঙ্গে উপস্থিত থাকার কথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy