Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ভারতীর নামে টাকা সরানোর অভিযোগে মামলা হাইকোর্টে

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ এবং তাঁর অধীনস্থ দুই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ৪৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। বারাসতের ফল ব্যবসায়ী ইউনুস আলি মণ্ডল চলতি মাসের গোড়ায় ওই মামলা করেন। তাঁর দাবি, রাজ্য পুলিশের আইজি পদমর্যাদার কোনও অফিসারের নেতৃত্বে তদন্ত হোক।

ভারতী ঘোষ

ভারতী ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩০
Share: Save:

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ এবং তাঁর অধীনস্থ দুই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ৪৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। বারাসতের ফল ব্যবসায়ী ইউনুস আলি মণ্ডল চলতি মাসের গোড়ায় ওই মামলা করেন। তাঁর দাবি, রাজ্য পুলিশের আইজি পদমর্যাদার কোনও অফিসারের নেতৃত্বে তদন্ত হোক।

সোমবার মামলাটির শুনানি ছিল হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে। সেখানে সরকারি কৌঁসুলিই বলেন, ‘‘অভিযোগ গুরুতর। প্রকাশ্যে এই মামলার শুনানি উচিত হবে না।’’ মামলার নথি খুঁটিয়ে দেখে বিচারপতি দত্ত আগামী ১৩ জানুয়ারির মধ্যে রাজ্য সরকারের বক্তব্য হলফনামা আকারে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ভারতীদেবী অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘বিচারাধীন ব্যাপারে মন্তব্য করব না।’’

কেন ভারতীদেবী এবং তাঁর অধীনস্থ দুই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ আনলেন ইউনুস?

মামলার আবেদনে ইউনুস জানিয়েছেন, গত ২৪ সেপ্টেম্বর দাদা সামিদের মাধ্যমে গাড়িতে করে ঝাড়গ্রামের ১২ জন ব্যবসায়ীর কাছে তিনি ৪৫ লক্ষ টাকা পাঠাচ্ছিলেন। গভীর রাতে খড়্গপুর থানা এলাকার সাদাতপুর ফাঁড়ির কাছে গাড়িটিকে অন্য একটি গাড়ি ধাক্কা মারে। জখম হন সামিদ এবং গাড়ি-চালক। সে কথা জানতে পেরে ইউনুস সাদাতপুরের বসন্তপুর এলাকার পরিচিত যুবক সফিককে ফোন করে তাঁর দাদা এবং গাড়ি-চালককে উদ্ধারের জন্য বলেন। এ-ও জানান, গাড়িতে দু’টি ব্যাগে ৪৫ লক্ষ টাকা রয়েছে। সেই টাকাও যেন সফিক উদ্ধার করে। কিন্তু তার আগেই খবর পেয়ে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছন টহলরত সাব-ইনস্পেক্টর চিরঞ্জিৎ ঘোষ। স্থানীয় হাসপাতালে সামিদ ও গাড়ি-চালককে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করান তিনি। তার পরে ওই পুলিশ অফিসার সামিদদের কাছ থেকে ৪৫ লক্ষ টাকার ব্যাগটি নিয়ে নেন এবং খড়্গপুর থানার ওসি রাজশেখর পাইনের কাছে তাঁদের নিয়ে যান। ততক্ষণে থানায় হাজির হন ইউনুসও। কিন্তু টাকা ফেরত পাননি।

ইউনুসের আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেলের দাবি, তিনি যে ব্যবসায়ীদের কাছে ওই টাকা পাঠাচ্ছিলেন, তাঁদের ফোন নম্বর-সহ নানা তথ্য খড়্গপুর থানার ওসি-কে জানিয়েছিলেন। দুর্ঘটনার অভিযোগও করা হয়। সেই অভিযোগ বা ৪৫ লক্ষ টাকার বিস্তারিত বিবরণের নথিতে থানার কোনও সিলমোহর বা ওসি-র সই দেওয়া হয়নি। উল্টে দু’টি সাদা কাগজে ইউনুসকে দিয়ে সই করিয়ে ওসি জানিয়ে দেন, চার দিন পরে থানায় গিয়ে টাকা ও গাড়ি নিয়ে যেতে। কিন্তু ‘সিজার লিস্ট’ দেওয়া হয়নি। চার দিন পরে ইউনুস থানায় গিয়ে শোনেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত টাকা ও গাড়ি ছাড়া যাবে না। দুর্ঘটনাটির তদন্তের জন্য সাব-ইনস্পেক্টর চিরিঞ্জিতের সঙ্গে তাঁকে যোগাযোগ করতে বলা হয়। কিন্তু চিরঞ্জিৎ ফোন ধরেননি বলে ইউনুসের অভিযোগ।

গত ১৭ অক্টোবর ইউনুস ফের ওসি-র কাছে যান। ওসি তাঁকে পুলিশ সুপারের কাছে নিয়ে যান। ইউনুসের দাবি, পুলিশ সুপার তাঁকে জানান, ৪৫ লক্ষ টাকার উৎস জানতে দীর্ঘ ও বিস্তারিত তদন্তের প্রয়োজন। বেশি বাড়াবাড়ি করলে ভারতীদেবী তাঁকে গরু ও নিষিদ্ধ দ্রব্য পাচারের মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দেন বলে ইউনিসের অভিযোগ। শেষমেশ টাকা ফেরতের জন্য তাঁকে পুলিশ সুপারের অফিসের জনৈক সুজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। ইউনুস জানান, সুজিত ফোনে টাকা ফেরত পেতে অনেক অপেক্ষা করার কথা বলেন। ২৪ অক্টোবর থেকে ফোন ধরাও বন্ধ করে দেন।

এই গোটা অভিযোগ গত ২৬ অক্টোবর রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি-র কাছে জানান ইউনুস। তাতেও কাজ না হওয়ায় ডিসেম্বর মাসে মামলা দায়ের করেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের আদালতে।

জেলা পুলিশের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, ইউনুসের বিরুদ্ধে বেলিয়াবেড়া থানায় চোলাচালান-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাঁকে দেখলেই গ্রেফতার করা হবে। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতেই পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা মিথ্যা মামলা। খড়্গপুর থানার ওসি রাজশেখর এবং সাব-ইন্সপেক্টর চিরঞ্জিৎ এমন কোনও ঘটনা বা হাইকোর্টে মামলার কথা তাঁদের জানা নেই বলে দাবি করেছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Corruption HC Bharati Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE