নির্ধারিত সময়ের থেকে পরীক্ষা বারবার পিছিয়ে যাবে। কবে ফল বেরোবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। চাকরি হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় ভুগবেন পড়ুয়ারা। এমন অস্বাস্থ্যকর অনিয়মই ‘নিয়ম’ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এই অবস্থায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা ৯৫টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়ারা অসহায়। বারবার বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনও সুরাহা হয়নি। রাজ্য সরকারেরও বিশেষ হেলদোল নেই। মুশকিল আসানে এ বার আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর শরণাপন্ন হয়েছে শিক্ষক সংগঠন। স্মারকলিপি জমা পড়েছে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও।
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন থেকে পরীক্ষায় এমন অবস্থা কেন?
রাজ্যের শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, শুরু থেকেই ওই বিশ্ববিদ্যালয় খুঁড়িয়ে চলছে। কেননা ধড়টা থাকলেও প্রতিষ্ঠানের মাথা কার্যত বেপাত্তা। উপাচার্য অস্থায়ী। অবসরের পরে মেয়াদ বাড়িয়ে রেজিস্ট্রারকে রেখে দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ামকের কাজটাও জোড়াতালি দিয়ে চালাচ্ছেন এক শিক্ষক। এত বড় প্রতিষ্ঠানের মস্তিষ্ক নিরুদ্দেশ থাকলে যা হয়, সেটাই হচ্ছে।
শুধু ৯৫টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নয়, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে ম্যানেজমেন্ট, কারিগরি বিদ্যা, ফার্মাকোলজির দুই শতাধিক কলেজ। বিবিএ, বিসিএ, এমসিএ, এমবিএ, এমটেক, বিটেক, বিফার্ম, হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট, বি স্পোর্টস ম্যানেজমেন্টের মতো কোর্স পড়ানো হয় ওই সব কলেজে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে বলা হয়, প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম সেমেস্টারের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল ২৬ নভেম্বর। কিন্তু সেই পরীক্ষা পিছিয়ে জানুয়ারিতে নেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে। এতেই বিষম সঙ্কটে পড়ে গিয়েছেন পড়ুয়ারা। বিশেষ করে সপ্তম সেমেস্টারের পড়ুয়ারা। কারণ, এর জেরে অষ্টম বা চূড়ান্ত সেমেস্টারের পঠনপাঠন ও পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বিভিন্ন শিল্প সংস্থায় নিয়োগ হাতছাড়া হওয়ারও।
এই অনিশ্চয়তা বা আশঙ্কা কেন?
‘‘জানুয়ারিতে পরীক্ষা হলে ফল বেরোতে মার্চ হয়ে যাবেই। তার পরে শুরু হবে অষ্টম সেমেস্টারের পাঠ। একটি সেমেস্টার শেষ করতে ছ’মাস লাগে। ওই সময়ে ক্লাস শুরু হলে কোর্স শেষ হতেই অগস্ট পেরিয়ে যাবে,’’ বললেন একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এক ছাত্র। সেই দেরির পরিণাম কী, তা ব্যাখ্যা
করলেন এক ছাত্রী। তিনি জানান, দেশের সর্বত্র এপ্রিলের পর থেকেই বিভিন্ন শিল্প সংস্থা ‘প্লেসমেন্ট’ বা নিয়োগের জন্য ‘ক্যাম্পাসিং’ শুরু করে দেয়। তাতে চাকরি পেলে অধিকাংশ জায়গায় জুলাইয়ের প্রথম দিকেই অষ্টম সেমেস্টার পাশ করার শংসাপত্র পেশ করতে হয়। নইলে নিয়োগ বাতিল হয়ে যেতে পারে। ‘‘কিন্তু এ ভাবে দেরি হতে থাকলে জুলাইয়ের প্রথমে ফলপ্রকাশ তো দূরের কথা, সেমেস্টারের কোর্সই শেষ হবে না। ফলে চাকরি হাতছাড়া হওয়া প্রায় নিশ্চিত,’’ বললেন ওই ছাত্রী।
নিয়ম অনুযায়ী অষ্টম সেমেস্টারের পরীক্ষা হওয়ার কথা মে-জুন নাগাদ। ২০১৫ পর্যন্ত জুলাইয়ের প্রথমেই অষ্টম সেমেস্টারের ফল প্রকাশ করা গিয়েছিল বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা। গত বছর ওই সেমেস্টারের ফল বেরোয় ৬ জুলাই। কিন্তু এ বার পরীক্ষাই হয়েছে ১৪ জুলাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে-ডামাডোল চলছে, তাতে ২০১৭-য় অষ্টম সেমেস্টারের পরীক্ষা কবে হবে, তা নিয়ে সংশয়ে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবক-সহ সকলেই। ‘‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক সময়েই পরীক্ষা হচ্ছে। সেখানকার পড়ুয়ারা অনায়াসেই চাকরি পেয়ে যাবে। কিন্তু বঞ্চিত হবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী এবং আচার্যকে চিঠি দিয়েছি,’’ বললেন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসানসোল-দুর্গাপুর টিচার্স অ্যান্ড স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক চন্দ্রশেখর কুণ্ডু।
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য সুব্রত দে অবশ্য ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের মতো হতাশ নন। তিনি বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে চাকরি হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে, এমন কেউ নেই। এ বারেও ঠিক সময়েই পরীক্ষা হবে। কোনও অসুবিধে হবে না।’’
কিন্তু রাজ্য সরকার হাত গুটিয়ে বসে আছে কেন?
‘‘স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। পরীক্ষা বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে কেন, পরীক্ষা নিয়ামক আর রেজিস্ট্রারকে ডেকে পাঠিয়ে সেটা জানতে চাইব। তার পরে যা করার করব। পড়ুয়াদের ভোগান্তি কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না,’’ বলছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy