সিদ্ধার্থনাথ সিংহ
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ এবং তার পরবর্তী ঘটনা পরম্পরার প্রেক্ষিতে তৃণমূল (টিএমসি)-কে তৃণমূল মুজাহিদিন কংগ্রেস বলে কটাক্ষ করলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক এবং এ রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। শাসক দলের অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, বিজেপি রাজ্যে বিভাজনের রাজনীতি করছে।
সারদা কাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে ১০ দফা প্রশ্ন পেশ করেছিলেন সিদ্ধার্থনাথ। যার উদ্দেশ্য ছিল মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর দলের সারদা-যোগ জনমানসে স্পষ্ট করা। এ বার মুখ্যমন্ত্রী তথা শাসক দলকে ‘দেশদ্রোহী’ প্রমাণ করতে নাছোড় বিজেপি একই কৌশল নিল। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ এবং রাজ্যে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ নিয়ে সিদ্ধার্থনাথ বৃহস্পতিবার ফের ১০ দফা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন মমতার উদ্দেশে। আগের বার সারদা-প্রশ্নের জবাব পাননি। তা হলে ফের কেন সন্ত্রাস-প্রশ্ন? সিদ্ধার্থনাথের জবাব, “আমাদের বিধায়ক এক জনই। কিন্তু আদতে আমরাই এ রাজ্যে বিরোধী দল। তাই সন্ত্রাসের মতো বিষয়ে রাজ্য সরকারের জবাবদিহি তো আমাদের চাইতেই হবে।”
তিনি এ দিন যে ১০ দফা প্রশ্ন তুলেছেন, সেখানে তাঁর অভিযোগ, খাগড়গড় বিস্ফোরণের আগে এ রাজ্যকে বাংলাদেশের জামাত মুজাহিদিনের নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র করে তোলা হয়েছিল, যাতে তারা সীমান্ত লাগোয়া জেলাগুলির সাতটি মাদ্রাসায় জঙ্গি জাল ছড়াতে পারে। সোহেল মেহফুজ, মহম্মদ বিলাল এবং মহম্মদ হবিবুর রহমান খাগড়াগড় বিস্ফোরণে অভিযুক্ত এই তিন জনের নাম ২৪ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারকে জানিয়ে তাদের উপর নজরদারি চালাতে বলা হয়। রাজ্য তা করেছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
পাশাপাশি, বিস্ফোরণের তথ্যপ্রমাণ লোপাট, স্থানীয় পুলিশ শিমুলিয়ার মাদ্রাসায় তল্লাশি চালাতে চাইলে রাজ্য প্রশাসন কেন তাদের অনুমতি দেয়নি, বিস্ফোরণে নিহত শাকিল আহমেদ এবং অন্য দু’ জন শেখ হবিবুর এবং ইউসুফ শেখ কী ভাবে পুলিশি অনুসন্ধান এড়িয়ে পাসপোর্ট পেল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সিদ্ধার্থনাথ। তাঁর আরও প্রশ্ন, ফেসবুকে মমতার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু অনুপ্রবেশকারীদের মদতদাতা পুলিশদের বিরুদ্ধে প্রশাসন নিষ্ক্রিয় কেন? এ ছাড়াও, খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণে রাজ্য সরকার এনএসজি-কে ডাকতে চায়নি কেন-সহ আরও তিনটি প্রশ্ন তিনি করেন।
খাগড়াগড় কাণ্ডের প্রেক্ষিতে সিদ্ধার্থনাথের মন্তব্য, “এই প্রথম একটা ঘটনায় ভারতকে বিদেশের কাছে বিব্রত হতে হয়েছে।” যদিও এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে চাননি বিজেপি-র ওই কেন্দ্রীয় নেতা। শুক্রবার দলীয় বৈঠকে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ নিয়ে আত্মসমীক্ষা করতে তৃণমূল নেতাদের প্রতি আবেদন জানান সিদ্ধার্থনাথ।
তৃণমূল ভবনে বৈঠকের প্রস্তুতি প্রস্তুতি এ দিন সরেজমিনে দেখেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সিদ্ধার্থনাথের অনুপ্রবেশকারী নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পার্থবাবু এ দিনও প্রশ্ন তোলেন, “সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব কার হাতে? সিদ্ধিনাথবাবু তো নিজের অজান্তে নিজের দলের সরকারকেই দোষারোপ করলেন! অনুপ্রবেশ হচ্ছে কেন, তার উত্তর ওঁর দেওয়া উচিত। বিস্ফোরণের রিপোর্ট রাজ্য পাঠানোর পরও কেন্দ্র কয়েক দিন চুপচাপ বসেছিল কেন?” তাঁর তির্যক মন্তব্য, “বিজেপি নেতারা রাজ্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায়মুক্ত হতে চান। ওঁদের বলছি, এ সব খেলা বন্ধ করুন।”
সিদ্ধার্থনাথ পাসপোর্ট বিষয়ে যে প্রশ্ন তুলেছেন তা নিয়ে পার্থবাবুর মন্তব্য, “রাজ্য আবার পাসপোর্ট দেয় নাকি?” ২৪ সেপ্টেম্বর জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে কেন্দ্রের সতর্কতাকে রাজ্য গুরুত্ব দেয়নি বলে সিদ্ধার্থনাথের অভিযোগ নিয়ে পার্থবাবু বলেন, “উনি সরকারের কেউ নন! যেটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের জানার কথা, তা উনি জানলেন কী ভাবে?” তাঁর আরও অভিযোগ, “এ সমস্ত দেখেই মনে হচ্ছে, বিজেপি কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে প্রভাবিত করছে এবং এ ভাবেই তারা রাজ্যের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আঘাত করছে।”
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট এ দিনই কলকাতায় বলেন, “খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ স্থানীয় ঘটনা নয়। রাজ্য এবং দেশের বাইরেও এর যোগ আছে। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই এনআইএ-র মতো উপযুক্ত কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত প্রয়োজন। এর মধ্যে রাজ্যের এক্তিয়ারে অনধিকার প্রবেশের প্রশ্ন আসছে না।” বর্ধমান কাণ্ডের প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে জামাতের যোগের অভিযোগ সামনে আসছে বলে দাবি করে এ দিন কোচবিহারে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও বলেন, “তৃণমূলের দম ফুরিয়ে এসেছে। ওদের আর ভয় পাবেন না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy