কোভিড জয় চন্দনের নিজস্ব চিত্র।
টানা ১০১ দিন হাসপাতালে এবং ৬৮ দিন ভেন্টিলেটর সাপোর্টে জীবনমরণ লড়াই। করোনা সংক্রমণে দু’টি ফুসফুসই ফুটো হয়ে গিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার বাসিন্দা চন্দন মণ্ডলের। ক্ষতিগ্রস্ত ওই অংশ দিয়ে হাওয়া বেরিয়ে জমে যাচ্ছিল ফুসফুসের বাইরের পর্দায়। অবশেষে শুক্রবার বাড়ি ফিরলেন করোনা জয়ী চন্দন।
মে মাসে রাজ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ছিল তুঙ্গে। জুলাই মাসে করোনায় সংক্রমিত হয়ে কলকাতার ঢাকুরিয়ায় এক বেসরকারি হাসপাতালে ৪২ দিন ভেন্টিলেটর এবং একমো সাপোর্টে থেকে করোনা জয় করেছিলেন রাঁচির বাসিন্দা গণেশ সিংহ। কিন্তু করোনা আক্রান্ত হয়ে ৬৮ দিন ভেন্টিলেটর সাপোর্টে থেকে চন্দনের এই লড়াইকে নজিরবিহীন বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক দেবরাজ যশ।
পূর্ব মেদনীপুরের ময়নার বাসিন্দা চন্দন করোনা উপসর্গ নিয়ে ১৮মে স্থানীয় সেবা নার্সিংহোমে ভর্তি হন। শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়াই ২৫ মে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। ওই দিনই করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে বলে জানান চন্দনের ভাই নন্দন মণ্ডল। হাসপাতালে প্রথম কয়েক দিন সে রকম কোনও শারীরিক সমস্যা না হলেও যত দিন যায় চন্দনের শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়তে থাকে। এইচডিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। দিন কয়েকের মধ্যেই সেখান থেকে আইসিইউ-তে পাঠানো হয়। কিন্তু চন্দনের শ্বাসকষ্ট বাড়তেই থাকে। পরীক্ষা করে দেখা যায়, করোনার কবলে পরে চন্দনের ফুসফুস ‘ছিবড়ে’ হয়ে গিয়েছে।
৩ জুন চন্দনকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে দেওয়া হয়। তারপর থেকে ৯ অগস্ট পর্যন্ত ৬৮দিন ভেন্টিলেটরেই ছিলেন চন্দন। কিন্তু এতেও রেহাই মেলেনি চন্দনের। ভেন্টিলেটরে থাকলেও ‘বাইল্যাটারাল নিউমোথোরাক্স’ অর্থাৎ চন্দনের দুটো ফুসফুসই ফুটো হয়ে যায়। ওই ফুটো দিয়ে হাওয়া বেরিয়ে জমে যায় ফুসফুসের বাইরের পর্দায়। শুধু তাই নয়, ত্বকের নীচে টিস্যুতে হাওয়া জমে গিয়ে চন্দনের অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে।
করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরও ফুসফুসের সংক্রমণ থেকে যায়। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের মতোই চলতে থাকে ‘পোস্ট কোভিড’ সমস্যার চিকিৎসা।
চিকিৎসক দেবরাজ বলেন, ‘‘এই অবস্থা থেকে বেঁচে ফেরাকে মিরাকল বলা যেতে পারে। তবে ওঁর বয়স কম হওয়ার জন্যই ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুস নিয়েও সমানে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের রোগীর ফুসফুস প্রতিস্থাপন ছাড়া উপায় থাকে না।’’ চন্দনের মতো সঙ্কটজনক রোগীর চিকিৎসায় চিকিৎসদের পাশাপাশি নার্সদের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান এক চিকিৎসক।
বছর ৩৯-এর চন্দন পেশায় ব্যবসায়ী। ১০০ দিনের উপর হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়ি ফেরায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশির হাওয়া ময়নার বাড়িতে। শারীরিক দুর্বলতা থাকায় এখনও অবলম্বন ছাড়া হাঁটাচলা করতে অসুবিধা হচ্ছে চন্দনের। তাই আপাতত ফিজিওথেরাপি চলবে। “দাদা পুর্নজন্ম পেয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে এর থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে! চিকিৎসকরা যা করেছেন কী বলে যে ধন্যবাদ দেব ভেবে পাচ্ছি না” বললেন নন্দন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy