প্রতীকী ছবি।
করোনার উৎস নিয়ে রিপোর্ট তলব করেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিন মাস ধরে খোঁজ করার পর অবশেষে গত মঙ্গলবার সেই রিপোর্ট জমা পড়েছে তাঁর দফতরে। চিনের উহান শহরের গবেষণাগার থেকেই ভাইরাস ছড়িয়েছে কি না, সে সন্দেহের পক্ষে কোনও স্পষ্ট ইঙ্গিত তাতে নেই বলেই শোনা যাচ্ছে। তবে রিপোর্টের বৃত্তান্ত হোয়াইট হাউস থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে গোটা বিশ্বকে। তার ঠিক আগে আগেই ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে উহানের ভূমিকা নিয়ে বিশ্বজোড়া সন্দেহের প্রতি কটাক্ষ উড়ে এল চিনের পক্ষ থেকে। চিন-বিরোধী শক্তিই ভাইরাসের উৎস নিয়ে এমন রটিয়েছে বলে শুক্রবার দাবি করল সে দেশের এক সংবাদপত্র। যে সূত্রে উঠে এল পশ্চিমবঙ্গের সেই কোভিড-গোয়েন্দার কথাও, যিনি প্রকাশ্যে এনেছিলেন উহানের গবেষণাগারের সঙ্গে করোনাভাইরাসের যোগের তথ্য। প্রতিবেদনে দাবি করা হল, সবটাই মিথ্যা বলেছেন ভারতের (তথা বাংলার) সেই কোভিডাণ্বেষী।
গত বছর করোনা অতিমারি শুরুর পর্বে অনেকে বলছিলেন, উহানের এক গবেষণাগার থেকে ছড়িয়েছিল করোনাভাইরাস। তবে সন্দেহ প্রকাশ করা ছাড়া তেমন কোনও তথ্য বার করে আনতে পারেননি কেউ। সেই তথ্যের অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছিল গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে থাকা গবেষকদের একটি দল। যারা নিজেদের নাম দিয়েছে ‘ড্রাস্টিক’ (ডিসেন্ট্রালাইজড র্যাডিক্যাল অটোনমাস সার্চ টিম ইনভেস্টিগেটিং কোভিড-১৯)।
সেই দলে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের এক ছদ্মবেশী গোয়েন্দা। টুইটারে তাঁর নাম ‘দ্য সিকার’। পুরনো কিছু গবেষণাপত্র ঘেঁটে গত মে মাসে তিনি ফাঁস করেন এমন তথ্য, যাতে করোনা ছড়ানোর ক্ষেত্রে ‘উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির’ ভূমিকার কথা আবার প্রকাশ্যে চলে আসে। ‘সিকার’-এর সেই কাজকে ‘অপেশাদার বিপ্লব’ বলে আক্রমণ করল চিনের সংবাদমাধ্যম। চিনা সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের ‘দ্য সিকার’ হলেন এমন একটি চক্রের অংশ, যারা নিজের স্বার্থের জন্য জনগণের ভাবনার মোড় ঘোরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ভারতের ভূমিকাও যে এ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় নয়, ‘দ্য সিকার’-এর ভৌগোলিক অবস্থানের বিষয়টি বারবার উল্লেখ করে সে কথা প্রমাণ করতে চেয়েছে চিনের সংবাদপত্রটি। পশ্চিমবঙ্গের ছদ্মবেশী গোয়েন্দা মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমেরিকার সংবাদমাধ্যমকে উস্কেছে বলে স্পষ্ট ইঙ্গিতও করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
আমেরিকার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অতিমারির পিছনে ‘উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি’-র ভূমিকা নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। সেখানে করোনা নিয়ে গবেষণা চলাকালীন সেই ভাইরাস বাইরে ছড়িয়ে যায় বলেও দাবি করে কিছু সংবাদপত্র। চিনের সংবাদমাধ্যমের দাবি, এ সব সন্দেহের পিছনেই রয়েছে ‘দ্য সিকার’-এর অবদান। নতুন করে সন্দেহে ঘি ঢেলেছেন তিনিই। তাঁর সব কাজই চিন-বিরোধী শক্তির দ্বারা পরিচালিত বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
নেট জগতের সুপ্ত অলিগলিতে হেঁটে বঙ্গবাসী কোভিডান্বেষী ‘দ্য সিকার’ বার করে এনেছিলেন চিনের ইউনান এলাকার একটি খনির কথা। সেখানে এক ধরনের বাদুড়ের বাস। যার থেকে করোনা ছড়িয়েছে বলে সন্দেহ। ২০১২ সালে সেই খনির কিছু শ্রমিকের মৃত্যুর পিছনে করোনাভাইরাসেরই হাত ছিল বলে ইঙ্গিত দেয় ‘দ্য সিকার’-এর গবেষণা। উঠে আসে শি চেংলি নামে এক বিজ্ঞানীর কথা। বাদুড় নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। গোটা পৃথিবীতে তিনি ‘ব্যাটউওম্যান’ বলে পরিচিত। তিনিই আবার ‘উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি’-র সর্বোচ্চ অধিকর্তা।
উহানের ল্যাবরেটরির সঙ্গে করোনার উৎসের যে যোগসূত্রের আভাস দিয়েছিল ‘দ্য সিকার’-এর অন্বেষণ, তা নিয়ে হইচই পড়ে যায় গোটা দুনিয়ায়। আমেরিকার বহু সংবাদপত্রে লেখা হয় তাঁর কীর্তির কথা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমও প্রশংসা করে তাঁর। চিনের ‘গ্লোবাল টাইমস’ পত্রিকা আবার তখন আমেরিকার ‘ভ্যানিটিফেয়ার’, ‘নিউজউইক’, ‘স্কাই নিউজ’, ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর মতো পত্রিকার নাম করে নিন্দা করেছে সেই প্রতিবেদনে। তোপের মুখে পড়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমও। দাবি করা হয়েছে, গোটা বিষয়টি না জেনেই উহানের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন ‘দ্য সিকার’। আসলে তেমন কোনও তথ্যই তাঁর হাতে ছিল না। চিনা সংবাদপত্রের আরও দাবি, ‘ড্রাস্টিক’-এর পুরো কাজই অপেশাদার এবং চিন-বিরোধী শক্তির দ্বারা চালিত। সেই দলের ৩০ জনের প্রধান সদস্যের অনেকেই ভুয়ো। পাশাপাশি ইঙ্গিত করা হয়েছে, তাদের ওই ‘অনৈতিক’ কীর্তিকে আরও উচ্চতা দিয়েছে আমেরিকা ও ভারতের সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন।
বাদুড় থেকেই সরাসরি ছড়িয়েছে কি করোনাভাইরাস, নাকি তার পিছনে ছিল উহানের গবেষণাগারের চক্রান্ত, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে যে রিপোর্ট পৌঁছেছে, তাতে এ নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা নেই বলেই খবর। তা হলে ‘ড্রাস্টিক’-এর হয়ে ‘দ্য সিকার’-এর কাজটি কি পুরোই অপেশাদার পর্যায়ের? করোনা ছড়ানোর ক্ষেত্রে উহানের গবেষণাগারের যে হাত থাকতে পারে, সে সন্দেহ কি উড়িয়ে দিয়েছে আমেরিকার গোয়েন্দাদের পেশ করা রিপোর্ট? তেমন কিন্তু শোনা যাচ্ছে না। বরং সেখানকার বেশ কিছু সংবাদ সংস্থার দাবি, চিন সরকারের অসহযোগিতার কারণে শেষ করা যায়নি অনুসন্ধান। তাই উহানের ল্যাবরেটরির ভূমিকা সম্পর্কে কোনও স্পষ্ট ধারণা এখনই দেওয়া যাচ্ছে না। তবে তারা এখনও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়।
গোটা বিষয়টি ‘রাজনৈতিক যুদ্ধ’ বলে দাবি করা হয়েছে চিনের সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে। আমেরিকা গোটা বিশ্বের কাছে চিনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য অতিমারির এই সময়টি বেছে নিয়েছে বলেও নিন্দা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে চিনের এক আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ লু শিয়াংয়ের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। তাঁর ব্যাখ্যা, তাদের সঙ্গে যে সব দেশের ভাবনা-চিন্তা মেলে না, তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা বরাবরই করেছে আমেরিকা। এ ক্ষেত্রেও তেমনই হচ্ছে। করোনার উৎসসন্ধান করতে গিয়ে যাঁদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছে আমেরিকা, তাঁরা অনেকেই চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য বলেও দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy