করবী ঘোষ
সরকার পক্ষ প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ দাখিল করতে পারেনি। তাই দুর্ঘটনায় মৃত সঙ্গীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের গাড়িচালক অর্ণব রাওকে জামিন দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
কালিকাপ্রসাদের শিল্পী-পরিচয়ের উল্লেখ করে অর্ণবের জামিনের বিরোধিতা করায় মঙ্গলবার সরকার পক্ষকে সতর্ক করে দেয় বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। ‘‘শিল্পীর নামোল্লেখ করে আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন না। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কী তথ্যপ্রমাণ আছে, দেখান,’’ সরকারি কৌঁসুলিকে বলেন বিচারপতি রায়। সরকার পক্ষ সেই তথ্যপ্রমাণ পেশ করতে পারেনি।
ডিভিশন বেঞ্চ যে-ভাবে সরকারি কৌঁসুলিকে সতর্ক করেছে, সেটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে আইনজীবী মহল। কেননা সম্প্রতি মাস দেড়েকের ব্যবধানে দু’টি দুর্ঘটনায় দু’রকম আইনি ব্যবস্থাকে ঘিরে প্রশ্ন উঠছিল, ঘনিয়ে উঠছিল বিতর্ক। গাড়ি-দুর্ঘটনায় মডেল সোনিকা সিংহ চৌহানের মৃত্যুর পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে সঙ্গে সঙ্গেই জামিনে মু্ক্তি পেয়ে যান গাড়িচালক, অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। অথচ গাড়ি-দুর্ঘটনায় কালিকাপ্রসাদের মৃত্যুর পরে তাঁর চালক অর্ণব দু’মাসেরও বেশি জেলবন্দি। একই রকমের দু’টি ঘটনা বা দুর্ঘটনায় দু’রকম আইনি ব্যবস্থা কেন, বিতর্ক সেই প্রশ্নকে ঘিরেই।
‘‘গরিব বলেই কি আমার ছেলের জন্য আইনি ব্যবস্থা অন্য রকম হবে,’’ প্রশ্ন তুলেছিলেন অর্ণবের মা। নিম্ন আদালতে দু’-দু’বার জামিনের আর্জি খারিজ হওয়ার পরে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ওই অভিযুক্তের পালিয়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। তিনি কোনও তথ্যপ্রমাণ লোপাট করে দেবেন, নেই এমন আশঙ্কাও।
৭ মার্চ হুগলির গুড়াপে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে কালিকাপ্রসাদের গাড়ি উল্টে যায় নয়ানজুলিতে। কালিকাপ্রসাদের মৃত্যু হয়। আহত হন তাঁর দলের অন্য পাঁচ জন।
পুলিশের বক্তব্য, বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্যই অর্ণবের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। ১৩ মার্চ চুঁচুড়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান অর্ণব। আদালত জামিন না-দিয়ে তাঁকে দু’দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠায়। ১৫ মার্চ ফের আদালতে তোলা হয় অর্ণবকে। সেই থেকে তিনি চুঁচুড়া জেলে আছেন। ছেলের জামিন চেয়ে ১২ মে হাইকোর্টে মামলা করেন অর্ণবের মা করবী ঘোষ।
এ দিনের শুনানিতে সরকারি কৌঁসুলি প্রসূন দত্ত অভিযোগ করেন, অর্ণব বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ধীরে চালানোর জন্য তাঁকে বারবার অনুরোধ করছিলেন আরোহীরা। কিন্তু চালক তাতে কান দেননি। পরিণামে দুর্ঘটনা ঘটে।
অর্ণবের আইনজীবী অপলক বসু আদালতে দাবি করেন, তাঁর মক্কেল গাড়ি চালাচ্ছিলেন ঠিকই। কিন্তু যা ঘটেছে, সেটা নেহাতই দুর্ঘটনা। এতে চালকের কোনও অভিসন্ধি ছিল না।
করবীদেবী এ দিন আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘গরিব বলে চুঁচুড়া আদালত জামিন দেয়নি। সুবিচারের আশাতেই হাইকোর্টে এসেছিলাম। সুবিচার পেয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy