Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

সরকারি টাকা পাননি, মরণাপন্ন অ্যাসিড আক্রান্ত

গত জুন মাসের শেষ দিকের ঘটনা। তার পর থেকে মেহবুব বেপাত্তা। পুলিশ এখনও তাকে ধরতে পারেনি। তার শাগরেদ হিসেবে ওই তরুণীর ননদাইকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু সে-ও এর মধ্যে জামিন পেয়ে গিয়েছে। 

নিগৃহীতা তরুণী। নিজস্ব চিত্র

নিগৃহীতা তরুণী। নিজস্ব চিত্র

মেহেদি হেদায়াতুল্লা
গোয়ালপোখর শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:১২
Share: Save:

সরকারি ক্ষতিপূরণ পাননি। জমা টাকাও ফুরিয়ে গিয়েছে। তাই বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে পড়ে রয়েছেন অ্যাসিড আক্রান্ত তরুণী। উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপোখর থানা এলাকার বাসিন্দা ওই তরুণীকে তাঁরই স্বামী মেহবুব আলম আক্রমণ করেছিল বলে অভিযোগ। গত জুন মাসের শেষ দিকের ঘটনা। তার পর থেকে মেহবুব বেপাত্তা। পুলিশ এখনও তাকে ধরতে পারেনি। তার শাগরেদ হিসেবে ওই তরুণীর ননদাইকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু সে-ও এর মধ্যে জামিন পেয়ে গিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ঘটিবা়টি বেচে মেয়ের চিকিৎসা করাচ্ছেন তরুণীর বাড়ির লোক। মেয়ের বাবা প্রথমে তাঁকে কিসানগঞ্জে, পরে ভাগলপুরের হাসপাতালে নিয়ে যান চিকিৎসার জন্য। তাতে ক্ষত পুরোপুরি সারেনি। এখন উন্নত মানের পরিকাঠামোযুক্ত হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে প্লাস্টিক সার্জারি করানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু, তরুণীর বাবা বলেন, ‘‘রোজ বাড়িতে চিকিৎসার জন্য দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। ভাল হাসপাতালে নেওয়ার সামর্থ নেই। দিনমজুরি করে সংসার চলে। মেয়েটা বিনা চিকিৎসায় কি মরে যাবে!’’

ওই এলাকার বিধায়ক গোলাম রব্বানি মন্ত্রী। অ্যাসিডে আক্রান্ত হলে সরকারি ভাবে ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ মেলার কথা। সে জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনও করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। কিন্তু, বিডিও অফিসের তরফে তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ তাঁদের। মন্ত্রী কেন উদ্যোগী হচ্ছেন না, তা-ও বাসিন্দাদের প্রশ্ন। এলাকাবাসী নাজমুল হুদা বলেন, ‘‘২১ বছরের মেয়েটিকে বাঁচাতে পুলিশ-প্রশাসন, মন্ত্রী কেউ উদ্যোগী হচ্ছেন না।’’ মন্ত্রী গোলাম রব্বানি বলেন, ‘‘ব্লক প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি।’’ বিডিও রাজু শেরপা জানান, ক্ষতিপূরণের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।

দেড় বছর আগে দক্ষিণদুয়ারি গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব আলমের সঙ্গে বিয়ে হয় ওই তরুণীর। প্রথম থেকেই শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে পণের দাবিতে অত্যাচার করার অভিযোগ ছিল। এই নিয়ে মামলা চলছিল। ওই তরুণী বাপের বাড়ি কামারপুর গ্রামে থাকতেন। গত ২৭ জুন রাতের অন্ধকারে শ্বশুরবাড়িতে ঢুকে মেহবুব স্ত্রীর মুখে অ্যাসিড ঢেলে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ। শাসকদলের স্থানীয় এক নেতার প্রভাবেই মেহবুবকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না বলে বাড়ির অনেকের সন্দেহ।

তরুণীর আত্মীয় মামুদ হোসেন বলেন, ‘‘আক্রান্ত তরুণীর ননদাইকে গ্রেফতার করা হলে জেল থেকে কিছু দিনের মধ্যেই সে ছাড়া পেয়ে যায়। এ দিকে মূল অভিযুক্তকে পুলিশ আড়াল করছে। স্থানীয় ওই নেতা পুলিশের কাছে নিজের প্রভাব খাটিয়ে মামলাটিকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন।’’ যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল গোয়ালপোখর ব্লকের কার্যকরী সভাপতি আব্বাস আলম। তিনি বলেন, ‘‘এমন অভিযোগ ঠিক নয়। আমরা আক্রান্ত পরিবারের সঙ্গে রয়েছি।’’ জেলা পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘কেন এত দিনে অভিযুক্তকে ধরা হয়নি, তা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Acid Attack Victim Donation Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE