বাক্সবন্দি টাকা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
কাগজকুড়ানিরা যেমন রাস্তায় ঘুরে বস্তায় ঠেসে কাগজ ভরে শনিবার সকালে ঠিক সেভাবেই হাওড়ার ঘুসুড়ি থেকে আটটি বস্তা, দু’টি পেল্লায় সাইজের টিনের ট্রাঙ্ক ও তিনটি ট্রলি ব্যাগে করে ভবনী ভবনে কোটি কোটি টাকা নিয়ে এসেছেন রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখার (এসিবি) অফিসারেরা। সেই টাকা রাখা হয়েছে সিআইডি-র হেফাজতে। শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত বালি পুরসভার সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রণব অধিকারীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ওই টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। এসিবি জানিয়েছে, তল্লাশির গোড়াতেই গ্রেফতার করা হয়েছিল প্রণববাবুকে। রাতের দিকে গ্রেফতার করা হয় ধৃতের ছেলে তন্ময়কে। এ দিন দু’জনকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক দু’দিন এসিবি-র হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
শনিবার এসিবি-র তরফে জানানো হয়েছে, প্রণববাবুর বাড়ি থেকে এ পর্যন্ত নগদ ২০ কোটি সাড়ে সাত লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও পাওয়া গিয়েছে ৫৮ লক্ষ টাকার ডাকঘরের ফিক্সড ডিপোজিট এবং উদ্ধার হওয়া সোনা-হিরের গয়নার পরিমাণ প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, প্রণববাবুর দোতলা বাড়িতে ছ’টি ঘর। সেগুলোর দেওয়ালে, মেঝেতে, বক্স খাটে, কমোডের ফ্লাশে, বিছানার গদির তলায়, আলমারিতে মিলেছে টাকার বান্ডিল। তদন্তকারীরা জানান, তন্ময় লিলুয়ার বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বি টেক পাস করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে টাকা রোজগারে সাহায্য করা ও তদন্তকারীদের মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশ জানায়, মালিপাঁচঘড়া ছাড়াও বালি ও লেকটাউনে অনেক সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। প্রণববাবু ও তন্ময়কে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে লাগাতার জেরা করলে আরও টাকার সন্ধান মিলবে বলে অনুমান তদন্তকারীদের।
ইতিমধ্যেই অবশ্য বাবা-ছেলেকে জেরা করে উঠে এসেছে বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতার নাম, যাঁরা বিগত পুরবোর্ডে অতীব প্রভাবশালী ছিলেন। তবে তদন্তকারীদের একাংশ এক রকম নিশ্চিত, প্রণববাবুর বাড়ি থেকে যে টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তা কেবল ওই ইঞ্জিনায়ারেরই নয়, একাধিক রাজনৈতিক নেতার টাকা ছিল তাঁর বাড়িতে। মূলত এই বিষয়টিই এখন অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখতে চাইছে এসিবি। বালি পুরসভার যে এলাকার বাড়ি বা বহুতলের নকশা অনুমোদন করেছেন প্রণববাবু সেখানকার একাধিক কাউন্সিলরের ভূমিকাও খতিয়ে দেখতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
এসিবি সূত্রের খবর, রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখায় যে প্রমোটর প্রণববাবুর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন তিনি বালির প্রাক্তন চেয়ারম্যান অরুনাভ লাহিড়ির বিরুদ্ধেও আঙুল তুলেছেন। প্রমোটর ভানুপ্রকাশ সিংহ এ দিন বলেন, ‘‘ইঞ্জিনিয়ার বারবার টাকা চাইছেন বলে চেয়ারম্যানকে অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু তিনি কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টে প্রণবাবুর দাবি মতো টাকা দিয়ে দিতে বলেন আমাকে।’’ অরুনাভবাবু অবশ্য গোটা ঘটনাটি সাজানো বলে দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমি ওই প্রমোটরকে কখনও দেখিনি। চিনিও না। রাজনৈতিক কারণেই আমার নাম জড়ানো হচ্ছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন কেউ অভিযোগ করলেন না। হাওড়া পুরসভার সঙ্গে বালি যুক্ত হওয়ার পরেই এ সব পরিকল্পিত ভাবে করা হচ্ছে, যাতে বালিতে সিপিএম নেতাদের বিপাকে ফেলা যায়।’’
তদন্তকারীরা জানান, কেবল ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট নয়, ১০০ ও ৫০ টাকার নোটও মিলেছে প্রণববাবুর বাড়ি থেকে। টাকা গুনতে মালিপাঁচঘরা থানার পুলিশের সাহায্যে ব্যাঙ্ক থেকে মেশিন আনানো হয়। টাকা ভরে ভবানী ভবনে নিয়ে আসার জন্য আনানো হয় দু’টি বিশাল টিনের ট্রাঙ্কও। প্রণববাবুর বাড়ি যেখানে সেই নস্করপাড়ার লোকজন শনিবার জানান, অনেক দোকানে ধারে জিনিসপত্র কিনতেন প্রণববাবুর পরিবার। পুজোর চাঁদা চাইতে গেলে অনেক তর্কবিতর্কের পরে পকেট থেকে ৫১ টাকা বার করে দিতেন ওই ইঞ্জিনিয়ার। এখন স্থানীয় লোকজন মনে করছেন, তাঁদের চোখে ধুলো দিতেই এই ভেক ধরেছিলেন প্রণব অধিকারী।
এই সংক্রান্ত আরও খবর...
দেওয়াল-মেঝে-কমোডে ১২ কোটি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy