Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Dhupguri

Durga Puja 2021: আনন্দবাজার অনলাইনে খবরের পর বহু ফোন, উৎসবের উপহার পেল ‘জলপাইগুড়ির জিশু’

সোদপুরের শুভেন্দুবাবু উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত রাজদীপের পড়াশোনার ভার নেবেন। রাজদীপের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও।

নতুন জামা পাওয়ার খুশি।

নতুন জামা পাওয়ার খুশি। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২১ ১৫:৫৯
Share: Save:

পুজোয় নতুন জামা কিনবে বলে ধূপগুড়ির ছোট্ট রাজদীপ ফুটপাতে বসে শাক বিক্রি করছিল। এই খবর শুক্রবার প্রথম প্রকাশিত হয় আনন্দবাজার অনলাইনে। তার পর থেকেই ওই খুদের জন্য শুভেচ্ছা ও সাহায্যের একাধিক হাত এগিয়ে এসেছে। কেউ পুজোয় তাকে নতুন জামা কিনে দিতে চেয়েছেন। কেউ বা আবার নিতে চেয়েছেন তার পড়ার ভার। নতুন জামার জন্য ফুটপাথে শাক বিক্রি করতে বসা রাজদীপের জীবনে এখন উৎসবের আমেজ।

জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির বাসিন্দা ছোট্ট রাজদীপের বাবা সঞ্জয় তরফদার ফুটপাথে চা বিক্রি করেন। বাড়িতে মা ছাড়াও আছেন ঠাকুরমা আর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া দাদা সন্দীপ। রাজদীপ পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। ক’দিন আগে নতুন জামার বায়না করেছিল সে। কিন্তু দিন আনি দিন খাই সংসারে পুজোর জামা দেওয়ার সাধ থাকলেও সাধ্য ছিল না সঞ্জয়ের। সে কথা বোঝার মতো বয়স না হলেও পরিস্থিতি বুঝতে ভুল করেনি বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাওয়া রাজদীপ। কিন্তু পুজোয় নতুন জামা যে চাই-ই। অগত্যা বাজারের রাস্তায় হরেক শাকের আঁটি নিয়ে বসে পড়া। শাক বেচেই পুজোর জামা গায়ে তোলার ভাবনা ছিল।

সাতসকালে ধূপগুড়ি বাজারে খুদে দোকানিকে দেখতে রীতিমতো ভিড়। শনিবারও শাক নিয়ে বসেছিল সে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ২০ টাকার শাক বিক্রি হয়েছে। খুদে রাজদীপ বলছে, ‘‘কাল রাতেই পুজোর জামা পেয়েছি। এক কাকু বলেছে, আমার পড়াশোনার খরচ দেবেন। কিন্তু গতকাল কয়েক জন আমার কাছে কিছু শাক চেয়েছিলেন। কাল সেগুলো আমার কাছে ছিল না। আজ সেগুলো কিনে এনেছি। ওঁরা এসে কিনেওছেন।’’ কী কী শাক পাওয়া যাচ্ছে রাজদীপের দোকানে? চতুর্থ শ্রেণির রাজদীপের গলায় সাময়িক ব্যস্ততা। কচি স্বরে বলে, ‘‘কচুর শাক, কুলেখাড়া, লাল শাক, বক ফুল, লাউ শাক, হাতির শুঁড়ের মতো বাঁকানো ঢেঁকি শাক... আরও কত কী আছে।’’ তবে তার মধ্যে জানাতে সে ভোলে না, ‘‘বড় হয়ে আমি ডাক্তার হতে চাই।’’

শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনে জামা কিনতে শাক বিক্রি করার খবর প্রকাশিত হতেই রাজদীপদের পাশে দাঁড়াতে সহৃদয় মানুষের ঢল। ধূপগুড়ির স্থানীয় বাসিন্দা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে শুরু করে দেশবিদেশের একাধিক শুভাকাঙ্ক্ষী— সবাই চান রাজদীপের মুখে একটুখানি হাসি ফুটুক। এই খবর পড়ে ধূপগুড়ির শপিং মলে নিয়ে গিয়ে দুই ভাইকে নতুন জামা কিনে দিয়েছেন কয়েক জন। রাজদীপের বাড়িতে গিয়ে ধূপগুড়ি বারঘরিয়া বিদ্যাশ্রম হাইস্কুলের শিক্ষক অশোকতরু বসু দুই ভাইয়ের হাতে নতুন পোশাক তুলে দিয়েছেন। ধূপগুড়ি হাসপাতালের দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসকও ফুটপাতে বসে শাক বিক্রি করা শিশুটির হাতে নতুন পোশাক উপহার হিসেবে তুলে দেন। এতগুলো নতুন পোশাক পেয়ে আনন্দে আত্মহারা দুই ভাই।

উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরের বাসিন্দা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় আনন্দবাজার অনলাইনে রাজদীপের খবর পড়ার পরই সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। রাজদীপের সঙ্গে কথা বলার পর শুভেন্দুবাবু বলেন, ‘‘শিশুটি সম্পর্কে আমি আনন্দবাজার অনলাইনেই পড়েছি। খুব খারাপ লাগল। তাই ওর পাশে দাঁড়াতে চাই। আমি চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া রাজদীপের উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে চাই। এ ভাবেই ওদের পাশে থাকব।’’

আর এ সব শুনে-দেখে আনন্দ আর ধরে না ছোট্ট সন্দীপ-রাজদীপের। সাত সকালে শপিং মলে গিয়ে নতুন জামা কেনা হয়েছে। ক্যালেন্ডারে চতুর্থী। কবে আসবে ষষ্ঠী, সপ্তমী... নতুন জামা গায়ে তোলার আর তর সইছে না যে দুই ভাইয়ের।

অন্য বিষয়গুলি:

Dhupguri jalpaiguri DurgaPuja Vegetable Stall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy