গ্রাফিক: উজ্জ্বল চক্রবর্তী।
পর পর মৃত্যু দুই বিজেপি কর্মীর। দু’টিই পুরুলিয়ার বলরামপুরে। দু’জনের দেহই ঝুলন্ত অবস্থায় মিলেছে। এবং তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়াকে বিরোধীশূন্য করবেন বলার পরেই ঘটনা দু’টি ঘটেছে। বিজেপির টার্গেট অতএব সরাসরি অভিষেক। ‘‘কাঠগড়ায় তুলবই অভিষককে।’’ মন্তব্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের। ‘‘দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ করছেন না কৈলাস?’’ পাল্টা প্রশ্ন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।
ঠিক এক সপ্তাহ আগে মন্তব্যটা করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৯ মে তিনি বলেছিলেন, ১ জুন পুরুলিয়ায় যাবেন এবং জেলাকে বিরোধীশূন্য করে ফিরবেন— এমনই বলেছিলেন অভিষেক। সেই ২৯ মে রাতেই বলরামপুরে বিজেপি কর্মী ত্রিলোচন মাহাতোর দেহ ঝুলে গিয়েছিল গাছে। কয়েক দিনের মাথায় ওই বলরামপুরেই আর এক বিজেপি কর্মী দুলাল কুমারের দেহ ঝুলে গিয়েছিল বৈদ্যুতিক টাওয়ার থেকে।
বিজেপির দাবি, ত্রিলোচন এবং দুলাল খুন হয়েছেন, তৃণমূলই খুন করেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জেলাকে বিরোধীশূন্য করবেন বলার পরেই তৃণমূল খুনোখুনিতে নেমে পড়েছে বলে বিজেপির অভিযোগ। শুধু মৌখিক অভিযোগেই অবশ্য থেমে থাকতে চায় না বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোকে আদালত পর্যন্ত টানার তোড়জোড় শুরু করেছে তারা।
‘‘তৃণমূলকে কত বড় ধাক্কাটা দেব দেখে নিন। খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় টেনে নিয়ে যাব আমরা।’’ বললেন কেন্দ্রীয় বিজেপির তরফে বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। কী ভাবে কাঠগড়ায় তুলবেন অভিষেককে? কৌশল পুরোপুরি ভেঙে বললেন না কৈলাস। শুধু বললেন, ‘‘পুরুলিয়ার ঘটনা নিয়ে আমরা হাত গুটিয়ে বসে নেই। আদালতে যাচ্ছি। অনেক তথ্য একত্র করেই আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছি। মামলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম থাকবে। দেখুন না, কী হয়।’’
আরও পড়ুন: পুজোর আবেগে ঘা লাগলে মানুষ ছেড়ে দেবে? মমতার দিকে আঙুল তুললেন বিস্ফোরক সৃষ্টিধর
ত্রিলোচন মাহাতোর মৃত্যুকে খুন বলে মেনেছে পুলিশ। কিন্তু সে ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে, এমন কোনও প্রমাণ এখনও মেলেনি। আর দুলাল কুমারের মৃত্যুকে খুন বলে পুলিশ মানছেই না। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তুলে ধরে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে, দুলাল আত্মহত্যা করেছেন। কী ভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় তোলা যাবে?
বলরামপুরে হাইটেনশন টাওয়ার থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মিলেছিল দুলাল কুমারের দেহ। বিজেপি বলছে খুন। তৃণমূল, পুলিশ ও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলছে আত্মহত্যা। —ফাইল চিত্র।
কিছুটা ভেঙে বললেন রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র তথা পুরুলিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক সায়ন্তন বসু। ‘‘আদালতে তো আমরা দিশাহীন ভাবে যাচ্ছি না। আমরা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছি সিবিআই তদন্ত চাইতে। সেখানে আমরা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যটা তুলে ধরব। বলব যে, অভিষেকের এই মন্তব্যের পরই দুটো খুন হয়ে গেল। এই ঘটনায় অভিষেককে অবশ্যই জেরা করা উচিত। কিন্তু অভিষেককে জেরার করার সাহস রাজ্য পুলিশ বা সিআইডির নেই। তাই সিবিআই তদন্তই একমাত্র পথ।’’ বললেন সায়ন্তন।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও প্রতিক্রিয়া এ বিষয়ে মেলেনি। তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তারও জবাব দেননি।
আরও পড়ুন: ‘জিতে ফিরলে ওরা হাত কেটে নেবে বলেছিল’
জবাব দিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অভিষেককে কাঠগড়ায় টানার হুঁশিয়ারি শুনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৃণমূল মহাসচিবের। বললেন, ‘‘হ্যাঁ, মামলা করুন না। ওঁরা তো আদালতই চেনেন। জনতার দরবার তো চেনেন না।’’ পার্থবাবুর কথায়, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আপত্তিকর কোনও কথা বলেননি। তিনি যা বলেছেন, তাতে অস্ত্রও নেই, হুমকিও নেই। মামলা হবে কী নিয়ে?’’ এর পরেই পাল্টা আক্রমণে পার্থ। বললেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ তো রোজ বলছেন, মেরে দেব, পুঁতে দেব, বিধবা করে দেব, দেখার লোক থাকবে না। তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা কৈলাস বিজয়বর্গীয় নিচ্ছেন? আমি জানতে চাই।’’
পার্থ চট্টোপাধ্যায় আরও বলেছেন, ‘‘পুরুলিয়ার ঘটনা নিয়ে বিজেপি মিথ্যা প্রচার করছে। আত্মহত্যাটাকে খুন বলে চালাতে চাইছে। আমরা লক্ষ্য রাখছি। সময় মতোই এর উত্তর দেব।’’
বিজেপি মঙ্গলবার থেকে টানা বিক্ষোভ এবং অবস্থান কর্মসূচি নিচ্ছে পুরুলিয়ায়। সায়ন্তন বসুর নেতৃত্বে মঙ্গলবার পুরুলিয়া শহরে মহামিছিল। তার পর থেকে জেলায় টানা অবস্থান চলবে বলে রাজ্য বিজেপি জানিয়েছে। সিবিআই তদন্তের দাবি তীব্র করতে প্রয়োজনে পুরুলিয়া থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হবে বিক্ষোভ কর্মসূচি। খবর রাজ্য বিজেপি সূত্রের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy