(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
ভোট-পর্বের মধ্যেই রাজনৈতিক চর্চার কেন্দ্রে উঠে এসেছে নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ। কলকাতা হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে আপাতত পূর্ণ স্থগিতাদেশ পায়নি স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। সর্বোচ্চ আদালতে শুনানির দিনই এই প্রশ্নে ফের তরজা বাধল শাসক ও বিরোধীদের। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সিপিএম এবং বিজেপি বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজেরা দুর্নীতি করে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব বিরোধীদের ঘাড়ে দায় চাপাতে চাইছেন বলে পাল্টা সরব হল সিপিএম। আর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তথ্য দিয়ে দাবি করলেন, নিয়োগ পরীক্ষার ওএমআর শিট বাতিল করে সরকার এবং এসএসসি-ই ‘যোগ্য’দের চিহ্নিত করার পথ বন্ধ করেছে। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক সোমবার হাওড়ার আমতায় প্রচারে গিয়ে অভিযোগ করেছেন, ‘‘মামলা করে সিপিএম ২৫ হাজার শিক্ষকের চাকরি খেয়েছে। সাথ দিয়েছে বিজেপি। দোসর হয়েছে কংগ্রেস। কারও চাকরি যেতে দেব না। যোগ্যদের চাকরি বাঁচাতে আইনি পথে যত দূর যেতে হয় যাব।’’ অভিষেকের দাবি, এক দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরি দিচ্ছেন। অন্য দিকে সিপিএম আর বিজেপি তা নিয়ে নিচ্ছে। তৃণমূল যোগ্য প্রার্থীদের পাশে দাঁড়াবে বলেও ফের জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
নিয়োগ-দুর্নীতির মামলায় অন্যতম আইনজীবী এবং সিপিএম সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘দুর্নীতি করে অযোগ্যদের নিয়োগ করা হয়েছে বলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন যোগ্য চাকরি-প্রার্থীরা। ওঁরা (তৃণমূল) দুর্নীতি করবেন আর দেখেও সবাই চুপ করে থাকবে, এ তো অদ্ভুত আবদার! দুর্নীতি, কেলেঙ্কারি করে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে যে ভাবে ধ্বংস করে ফেলা হল, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও লড়াই করা, আমাদের সামাজিক কর্তব্য। দুর্নীতি প্রকাশ্যে আনা আমাদের দায়িত্ব।’’
মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম ও ভগবানগোলায় নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিনও নাম না করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু এবং বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন চাকরি ‘খাওয়া’র অভিযোগে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘চাকরি যাচ্ছে, ওরা হাসছে! বোমা ফাটানোর নাম করে গরিব ছেলেমেয়েদের চাকরি খেয়ে নিচ্ছে। ১০০ দিনের টাকা দেয় না। বাড়ির টাকা দেয় না। রেশনের টাকা দেয় না।’’ সেই সঙ্গেই তিনি বলেছেন, ‘‘শিক্ষকদের চাকরি চলে গিয়েছে। ভুল থাকলে শুধরে নেব। তাই বলে তুই চাকরি খাবি? তুই তো বিজেপির মেশিনে ঢুকে গিয়ে নিজে বেঁচেছিস, তোর লোকজনদের বাঁচিয়েছিস!’’
হুগলির বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে ধনেখালির মদমোহনতলায় নির্বাচনী সভায় গিয়ে চাকরি বাতিলের দায় মুখ্যমন্ত্রীর উপরেই চাপিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এ দিনের মন্তব্য নিয়ে তিনি কিছু বলবেন না। তবে বিরোধী দলনেতা হিসাবে চান, মন্ত্রিসভা ভেঙে যাক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরি কেন করেছিলেন? যাঁরা অযোগ্য, ওএমআর শিটে শূন্য-এক-দুই-তিন রয়েছে, যাঁরা মূলত টাকার বিনিময়ে চাকরি কিনেছেন। পার্থ, ভাইপো-বাহিনী এঁদের সাথে ছিলেন। সাথে সাথে বেশ কিছু তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা, এখানে যেমন বিধায়কের ভাগ্নি চাকরিগুলো পেয়েছেন।’’
বিরোধী দলনেতার দাবি, চাকরি যাওয়ার জন্য বিরোধী বা আইনজীবীরা দায়ী নন। প্রত্যেকে অযোগ্যদের চাকরি পাওয়ার বিরোধিতা করেছেন। যোগ্যদের প্রতি তাঁদের সহানুভূতি রয়েছে, আগামী দিনেও থাকবে। তাঁদের পক্ষের আইনজীবীরা কখনও যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি বাতিলের কথা বলবেন না। শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘এসএসসি চেয়ারম্যান সাংবাদিক সম্মেলন করে বলছেন, ‘আমরা তো যোগ্যদের তালিকা দিয়েছিলাম’! হাই কোর্টের রায়ের ২৪৪ নম্বর অনুচ্ছেদে দেখবেন, যোগ্যদের তালিকা দেওয়া হয়নি। পুরো ওএমআর নষ্ট করা হয়েছে। এই দায়িত্ব কাকে দেওয়া হয়েছিল? বালাজি সলিউশন নামক সংস্থাকে। সেই সংস্থার মালিক কে? ইনি কী কাজ করেন? বাড়ি বানান। তাঁকে দিয়েছে ওএমআর নষ্ট করার জন্য!’’ ওই সংস্থাকে ২০১৯ সালে দেওয়া এসএসসি-র এই সংক্রান্ত চিঠির প্রতিলিপিও দেখিয়েছেন শুভেন্দু।
শুভেন্দুর আরও দাবি, সংবাদমাধ্যমে তিনি জেনেছেন, ‘কালীঘাটের কাকু’ নির্দেশ দিয়েছিলেন, ফোনে যাঁর যাঁর কাছে নথি আছে, তা যেন তাঁরা মুছে ফেলেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘পাঁচ-ছয় হাজার অযোগ্যকে বাঁচাতে গিয়ে অন্যান্য চাকরিপ্রার্থীদের বিড়ম্বনায় ফেলেছেন। এর জন্য যদি কেউ দায়ী থাকেন, তিনি হলেন ২০২২ সালের ৫ মে মন্ত্রিসভার বৈঠকে পৌরহিত্য করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!’’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম দাবি করেছেন, ‘‘সব জায়গায় যত অপরাধী আছে, রাজ্য সরকার তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। ওএমআর শিট নষ্ট করে, পুড়িয়ে ফেলে এখন যোগ্যদের কথা বলে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে! মুখ্যমন্ত্রী এবং গোটা মন্ত্রিসভা এর জন্য দায়ী। এই ভাবে সরকার চলতে পারে না!’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়েরও দাবি, ‘‘মেনুকার্ড দেখে অর্ডার করার মতো করে চাকরি দেওয়া হয়েছে! এই অস্থিরতার দায় রাজ্য সরকার এবং তৃণমূলকেই নিতে হবে।’’
শুভেন্দুর মন্তব্য নিয়ে ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্র অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘উনি (শুভেন্দু) আগে বলুন, ওঁর কত জন আছেন?’’ আর বিরোধীদের বিঁধে তৃণমূলের রাজ্য নেতা কুণাল ঘোষের দাবি, ‘‘বিরোধীরা ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে। যোগ্য প্রার্থীরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, সরকার আন্তরিক চেষ্টা চালাচ্ছে। তাতে বাধা তৈরি করছে বিরোধীরা।’’ তবে তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের শুনানি নিয়ে দলের কোনও বক্তব্য নেই। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা সরকার বা কমিশনের বক্তব্য আদালতে জানাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy