যে কোনও বিল নিয়ে তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেশের রাষ্ট্রপতিকে। এমনটাই জানাল সুপ্রিম কোর্ট। কোনও বিল ফেলে রাখতে হলে তার কারণ জানাতে হবে। সাধারণত, কোনও রাজ্যের আইনসভায় বিল পাশ হলে তা সম্মতির জন্য রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়। রাজ্যপাল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, রাজ্যপালের কাছ থেকে এই ধরনের বিল এলে রাষ্ট্রপতি অনির্দিষ্ট কালের জন্য তা ফেলে রাখতে পারবেন না। ভারতীয় সংবিধানে বিল নিয়ে মতামত জানানোর জন্য রাষ্ট্রপতিকে কোনও সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে। বিল হাতে পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। যদি বেশি সময় লাগে, সে ক্ষেত্রে তার কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। তামিলনাড়ু সরকারের একটি মামলায় এই মন্তব্য করেছে শীর্ষ আদালত। রাষ্ট্রপতিকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার এই রায় দেশে প্রথম।
তামিলনাড়ুর আইনসভায় পাশ হওয়ার পর ১০টি বিল সে রাজ্যের রাজ্যপাল আরএন রবি আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ওই বিলগুলি রাজ্যপাল পাঠিয়ে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের জন্য। এই সংক্রান্ত মামলায় রাজ্যপালের আচরণকে ‘বেআইনি’ বলে উল্লেখ করেছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ। আদালতের মন্তব্য, ‘‘এটা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া দরকার, কোনও সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও কাজ না করলে আদালত সেখানে হস্তক্ষেপে বিরত থাকবে না।’’ এই সংক্রান্ত রায় আদালত জানিয়েছে গত মঙ্গলবার। শুক্রবার রায়ের প্রতিলিপি আদালতের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
ভারতীয় সংবিধানের ২০১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির কাছে কোনও বিল গেলে তিনি দু’টি কাজ করতে পারেন। হয় ওই বিলে সম্মতি জানানো, অথবা তা নাকচ করে দেওয়া। কিন্তু সংবিধানে রাষ্ট্রপতির এই কাজের জন্য কোনও সময়সীমা জানানো হয়নি। এর ফলে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে বার বার সংঘাতের আবহ তৈরি হয়। আদালত জানিয়েছে, রাজ্যপাল যদি রাষ্ট্রপতির কাছে কোনও বিল পাঠান এবং রাষ্ট্রপতি যদি তা অনির্দিষ্ট কালের জন্য আটকে রাখেন, রাজ্য সরকার চাইলে তার বিরুদ্ধে আদালতে যেতে পারবে।
রাষ্ট্রপতির সম্মতি ছাড়া কোনও বিল আইনে পরিণত হতে পারে না। ফলে আইনে পরিণত করার আগে যে কোনও বিল সঠিক ভাবে ‘বিবেচনা’ করা প্রয়োজন। আদালত জানিয়েছে, এই ‘বিবেচনা’কে কঠোর সময়সীমার মধ্যে বেঁধে ফেলা কঠিন। সিদ্ধান্ত নিতে রাষ্ট্রপতির সময় লাগতেই পারে। আদালত সে বিষয়ে অবগত। কিন্তু তা রাষ্ট্রপতির ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অজুহাত হতে পারে না। কোনও যুক্তি বা ব্যাখ্যা ছাড়া বিলের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির বিলম্ব সাংবিধানিক নীতি লঙ্ঘনের সমান। একে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর জন্য ক্ষতিকারক বলেও উল্লেখ করেছে আদালত। বলা হয়েছে, অকারণে দেরি করার কোনও জায়গা থাকতে পারে না রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রেও।