Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

এক হয়ে কাজ না করলে দরজা খোলা: অভিষেক

পরের মাসে পঞ্চায়েতের উপ-নির্বাচন। আগামী বছর বিধানসভার ভোট। তার আগে দলের সব স্তরের কর্মীকে এক হয়ে কাজ করার বার্তা দিলেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং তা না করলে দরজা যে খোলা রয়েছে, সে কথাও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।  ছবি: সুজিত মাহাতো।

মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুজিত মাহাতো।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:৩৩
Share: Save:

পরের মাসে পঞ্চায়েতের উপ-নির্বাচন। আগামী বছর বিধানসভার ভোট। তার আগে দলের সব স্তরের কর্মীকে এক হয়ে কাজ করার বার্তা দিলেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং তা না করলে দরজা যে খোলা রয়েছে, সে কথাও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার বিকেলে পুরুলিয়া মফস্সল থানার রায়বাঘিনি ময়দানে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ও পুরসভায় তৃণমূলের নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের এক কর্মশালায় মূল বক্তা ছিলেন দলের তরফে পুরুলিয়ার পর্যবেক্ষক অভিষেক। এ দিন সেখানেই গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ বা সমস্ত শাখা সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন তৃণমূলের যুবরাজ।

জেলায় জেলায় শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন নয়। গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে বহু জায়গায় সংঘর্ষ ও রক্তপাত হয়েছে। পুরুলিয়ায় সে ভাবে সংঘর্ষ না হলেও দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চোরাস্রোত আছেই। অগস্ট মাসের শেষে দলের জেলা কোর কমিটি, বিভিন্ন ব্লকের সভাপতি ও কার্যকরী সভাপতি এবং পুর-এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নাম কলকাতা থেকে জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো ঘোষণা করার পর থেকেই দলের অন্দরে দ্বন্দ্ব আরও বেড়েছে। দুর্গাপুরের কর্মিসভায় দলনেত্রী যে কোর কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন, সেই কমিটিতে আলোচনা না করেই জেলার নতুন কোর কমিটি ও ব্লক সভাপতিদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী। সম্প্রতি ঝালদা ২ ব্লক সভাপতির অপসারণ চেয়ে দলের জেলা অফিসে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন সেখানকার কর্মীরা। ‘আদি ও পুরাতন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের আর্তনাদ’— এই স্লোগান সামনে রেখে বৈঠক করেছেন বিরোধী গোষ্ঠীর নেতারা।

দলের নিচুতলার এই ক্ষোভের কথা অভিষেকের কানে পৌঁছেছে কিনা, জানা যায়নি। কিন্তু এ দিনের কর্মিসভায় অভিষেক তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলেছেন, ‘‘শান্তিদাকে আগেও বলেছি, আবার বলছি, আমার কাছে যেন কোনও অভিযোগ না আসে। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি না থাকে। মানিয়ে নিতে অসুবিধে হলে তৃণমূল কংগ্রেস করতে হবে না।’’

যেহেতু তিনি পুরুলিয়ার দায়িত্বে রয়েছেন, তাই এ বার অভিষেকের লক্ষ্য, বাঘমুণ্ডি, জয়পুর ও বান্দোয়ান বিধানসভা কেন্দ্র (এর কোনওটাই তৃণমূলের নয়) দখল করা। বাঘমুণ্ডি জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর খাসতালুক। বিধায়কও তিনি। বান্দোয়ান ও জয়পুর যথাক্রমে সিপিএম ও কংগ্রেসের দখলে। এ দিন অভিষেকের বক্তৃতাতেও উঠে এসেছে সেই প্রসঙ্গ।

তিনি বলেন, ‘‘২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে। মনে রাখবেন আপনারা যে প্রতীকে জয়ী হয়েছেন, তা কলুষিত হলে আপনারা কেউ-ই জিতবেন না! সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করুন। এই জেলায় ৯টি বিধানসভা আসন রয়েছে। ৬টিতে আমরা এখন রয়েছি। পরের বার জেলার সব আসন ৫০ হাজার ভোটে জিতে নেত্রীর পায়ে উপহার দিতে হবে!’’ ওই তিনটি আসন নেওয়ার লক্ষ্যে প্রতি মাসে পুরুলিয়ায় এসে ব্লকের বুথ স্তরের কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করবেন বলেও জানিয়েছেন অভিষেক।

তাঁর মতে, নিচুতলার কর্মীরা দলের সম্পদ। অভিষেকের সুরেই এ দিন মঞ্চ থেকে জেলা পরিষদ সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো থেকে শান্তিরাম মাহাতো বা বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি, সকলেই কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘মনে রাখবেন দল থাকলে আমরা রয়েছি। দল না থাকলে আমরা কেউ নই।’’

দলের সবাইকে সরকারের কাজ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথাও বারবার উল্লেখ করছেন অভিষেক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রচারের কাজ হচ্ছে না। দু’লক্ষ চার হাজার কোটি টাকার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জেলা থেকে ব্লক ছুটে বেড়াচ্ছেন। কোনও মুখ্যমন্ত্রী কি এ ভাবে বাজার, হাসপাতাল পরিদর্শন করেন? তিনি একটি আন্দোলনের নাম। কিন্তু বিরোধীদের একটাই কাজ— কী করে মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তি নষ্ট করা যায়।’’

এর পরেই তিনি উপস্থিত জন প্রতিনিধিদের বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর কাজ মানুষের দরজায় দরজায় নিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে অভিষেকের দাবি, ‘‘বিরোধীদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। রাজনৈতিক ভাবে তারা আমাদের মোকাবিলা করতে পারছে না। সিপিএম পকেটে ঢিল নিয়ে পথে নেমেছে বাংলাকে অশান্ত করতে। আর কংগ্রেস সম্পর্কে যত কম কথা বলা যা, ততই ভাল!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE