Advertisement
২৪ জানুয়ারি ২০২৫
Calendar Controversy in TMC

কেবলই ছবি! অভিষেকের দফতর থেকে পাঠানো ক্যালেন্ডারে ‘কাঁচি’! বিধি বেঁধে দিলেন রাজ্য নেতৃত্ব

যে ক্যালেন্ডার নিয়ে ‘বিতর্ক’ তৈরি হয়, তাতে লেখা ছিল ‘সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস কর্তৃক প্রচারিত’। দলীয় স্তরে রাজ্য নেতৃত্বের বার্তা যে পৌঁছেছে, তা ক্যামাক স্ট্রিটের দেওয়ালও শুনতে পেয়েছে।

A new controversy has arisen within the TMC over the calendar

(বাঁ দিকে) প্রথমে পাঠানো ক্যালেন্ডার। পরিবর্তিত নকশা (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

শোভন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:৫৯
Share: Save:

নতুন বছরের প্রথম মাসেই ‘ক্যালেন্ডার-কাণ্ড’ তৃণমূলে, যা নিয়ে দলের অন্দরে আরও এক বার শিবির বিভাজনের বিতর্ক নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় শাসকদলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে শিবির বিভাজন নিয়ে দলের অন্দরে আলোচনা ছিলই। ক্যালেন্ডার-কাণ্ডকে সেই প্রেক্ষাপটেই দেখছেন তৃণমূলের নেতারা। বিশেষত, জেলা স্তরের নেতারা।

বিতর্কের কেন্দ্রে ছবি। কেবলই ছবি!

সূত্রের খবর, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতর থেকে ২০২৫ সালের ক্যালেন্ডার পাঠানো হয়েছিল দলের জেলা সভাপতিদের। সেই ক্যালেন্ডারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক দু’জনেরই ছবি রয়েছে। কিন্তু অভিষেকের ছবিটি তুলনায় মমতার থেকে মাপে বড়। কথায় বলে ‘ছবি কথা বলে’। বস্তুত, ক্যালেণ্ডারকেন্দ্রিক বিতর্ক বলছে, ছবি কেবলমাত্র ‘শুধু পটে লিখা’ নয়। বরং ছবির ‘পটবদল’ হতে পারে। হয়েছেও।

জেলায় জেলায় ক্যালেন্ডার পৌঁছনোর পরে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে বড়-ছোট ছবির খবর যায়। পত্রপাঠ পদক্ষেপ করা হয়। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে তৃণমূলের জেলা সভাপতিদের কাছে বার্তা যায়, ওই ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা যাবে না। তৃণমূলের একাধিক জেলা সভাপতি আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে অভিন্ন বার্তা এসেছিল রাজ্য নেতৃত্বের তরফে। বার্তার মোদ্দা কথা, ‘দিদি’ এই ছবি ব্যবহার করেন না। তাই এই ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা যাবে না।

যে ক্যালেন্ডার এবং তাতে ছাপা ছবি নিয়ে ‘বিতর্ক’, তাতে লেখা ছিল ‘সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস কর্তৃক প্রচারিত’। দলীয় স্তরে রাজ্য নেতৃত্বের বার্তা যে পৌঁছেছে, তা ক্যামাক স্ট্রিটের দফতরের দেওয়ালও শুনতে পেয়েছে। সূত্রের খবর, তার পরে নতুন একটি ক্যালেন্ডারের নকশা প্রস্তুত করা হয়। পরিবর্তিত নকশায় দেখা যায়, অভিষেকের ছবি প্রথম ক্যালেন্ডারে ছাপা তাঁর ছবির তুলনায় ছোট। শুধু আগের তুলনায় ছোট তা-ই নয়, মমতার ছবির থেকে সামান্য হলেও ছোট। সেই ক্যালেন্ডারও জেলায় জেলায় পাঠানো শুরু হয়েছে। দু’টি ক্যালেন্ডারের ছবিই আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে রয়েছে। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব পরিবর্তিত নকশায় আনুষ্ঠানিক সিলমোহর দিয়েছেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

প্রত্যাশিত ভাবেই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার জানিয়েছেন, তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। কিন্তু ‘বিড়ম্বনা’ বেড়েছে জেলা সভাপতিদের। শ্যাম রাখেন না কুল! দক্ষিণবঙ্গের এক জেলা সভাপতির কথায়, ‘‘আমার বাড়ির অফিসে তো প্রথম ক্যালেন্ডারটা ঝুলিয়েও ফেলেছিলাম। তার পর মেসেজ পেয়ে নামিয়ে রাখি।’’ তার পরে স্বগতোক্তির ঢঙে বলেন, ‘‘তার পরে কে ছবি তুলে কোথায় ছেড়ে দেবে! কেস খাই আর কি!’’

লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই তৃণমূলের সর্বোচ্চ স্তরে শিবির বিভাজন চোখে পড়ছিল। যার সূত্রপাত করেছিলেন স্বয়ং অভিষেকই। সংগঠন থেকে ‘ছোট বিরতি’ নিয়ে বিদেশে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন তিনি। ২১ জুলাই বার্ষিক সভায় অভিষেক থাকবেন কি না, তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছিল দলের মধ্যে। যদিও অভিষেক সেই মঞ্চে ছিলেন। এবং সেই মঞ্চ থেকেই ঘোষণা করেছিলেন, লোকসভা ভোটে ‘পারফরম্যান্স’-এর ভিত্তিতে তিন মাসের মধ্যে দলে রদবদল হবে। কিন্তু ছ’মাস কেটে গেলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। অভিষেক যদিও জানিয়েছিলেন, তিনি নির্দিষ্ট সময়েই তাঁর প্রস্তাব দলনেত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তারই মধ্যে দলে ‘অভিষেকপন্থী’ বলে পরিচিত একাধিক নেতাকে মুখপাত্রের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে শান্তনু সেন, নারায়ণ গোস্বামীদের। যে দুই নেতা দলের অন্দরে অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত। আবার কুণাল ঘোষের মতো নেতা, যিনি বছরখানেক আগেও অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত ছিলেন, তিনি শিল্পী বয়কট-বিতর্কে সরাসরি অভিষেকের বিপরীত অবস্থান নিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, কুণালকে দলের তরফে সেই অবস্থান থেকে সরে আসার বিষয়ে কোনও বার্তা দেওয়া হয়নি। কুণালকে ঠারেঠোরে সমর্থন করেছেন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনিও এক সময় অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত ছিলেন। কুণাল এবং ব্রাত্য অভিষেককে সম্বোধন করতেন ‘ক্যাপ্টেন’ বলে।

উল্লেখ্য, গত বছর জানুয়ারিতে যখন অভিষেক নিজেকে তাঁর লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে ‘সীমাবদ্ধ’ রেখেছিলেন, তখন দলের পাঁচ নেতা তাঁকে বোঝাতে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে তাপস রায় পরে বিজেপিতে যোগ দেন। বাকি চার জনের মধ্যে নারায়ণ শাস্তি পেয়েছেন। কুণাল এবং ব্রাত্য অভিষেকের উল্টো মেরুতে অবস্থান নিয়েছেন নির্দিষ্ট বিষয়ে। পাঁচ নেতার মধ্যে রইলেন পড়ে ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক। যিনি আবার তাঁর অভিনীত নাটক ‘বসন্ত বিলাপ’ দেখার জন্য কুণালকে সম্প্রতি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে তৃণমূলের সর্বোচ্চ স্তরে ভরকেন্দ্র বদলের যে ধারা দেখা যাচ্ছে, ক্যামাক স্ট্রিটের ক্যালেন্ডারে ‘কাঁচি’ তাতে নতুন সংযোজন বলেই মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, দলের মধ্যে অনুরণিত হচ্ছে সর্বোচ্চ নেত্রী মমতার ঘোষণা, ‘‘আমিই দলের চেয়ারপার্সন। আমি আরও ১০ বছর চালাব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Calender Abhishek Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy