দূষণ: গ্যাসের জেরে হলুদ হয়ে গিয়েছে গঙ্গার জল।
অজ্ঞতা আর আগুপিছু না ভেবে কাজ করায় নজির গড়ে ফেলল বেলুড় পুর প্রশাসন। সোমবার একটি কারখানার সিলিন্ডার থেকে ঝাঁঝালো গ্যাস বেরিয়ে এলাকা প্রায় গ্যাস চেম্বারের চেহারা নেয়। অভিযোগ, প্রশাসন এবং দমকল কোনও পরামর্শ ছাড়াই মাঠে নেমে বিপদ বাড়িয়েছে।
সিলিন্ডারের ফাটল আটকানো থেকে শুরু করে গঙ্গায় ফেলা ইস্তক, প্রশাসন এবং দমকল একের পর এক ভুল করে গিয়েছে বলে দাবি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের।
কারখানাটায় পরিত্যক্ত সিলিন্ডার কেটে লোহার পাত তৈরি হয়। সোমবার সকাল সাতটা নাগাদ একটি সিলিন্ডার কাটতে গেলে হিসহিস করে গ্যাস বেরিয়ে নিমেষে ছড়িয়ে পড়ে গিরিশ ঘোষ রোড এলাকায়। কী ভাবে এমন ঝুঁকি নিয়ে কাজ চলছিল, তার উত্তর দিতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে অবশ্য এ দিন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
রংবদল: গঙ্গায় ফেলে দেওয়া গ্যাস সিলিন্ডার পাড়ে আনার চেষ্টা করছে দমকল। হলুদ হয়েছে কচুরিপানা।
ঝাঁঝালো গন্ধ থেকে এলাকাবাসীর ধারণা, গ্যাসটি ক্লোরিন হতে পারে। বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন অন্তত ৭০ জন। সিলিন্ডারের মুখ আটকে সেটিকে সরাতে চার ঘণ্টারও বেশি সময় নেয় পুরপ্রশাসন এবং দমকল।
আরও পড়ুন: হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, তেতো হয়ে গেল ভাত
সকাল ন’টায় দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে .যায়। দমকল কর্মীরা সিলিন্ডারে জল ঢালতে শুরু করলে পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যায়। এক ঘণ্টা পরে সাবান ও মাটি দিয়ে সিলিন্ডারের ফুটো বন্ধ করে ঠিক হয় ঘুসুড়ি সরকারি আবাসনের পুকুরে সেটি ফেলা হবে। পরে আবার সিদ্ধান্ত হয়, জগন্নাথ ঘাটে গিয়ে সটান গঙ্গাতেই ফেলা হবে সেটি। এতে জীববৈচিত্র্যের উপরে কী প্রভাব পড়বে, তা কেউই ভাবেননি। এলাকার কাউন্সিলর সীমা ভৌমিকের স্বীকারোক্তি, ‘‘পরিস্থিতি দেখে আমরাই পুলিশকে বলি গঙ্গায় ফেলতে।’’ যদিও বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়ার প্রশ্ন, ‘‘পরিবেশ দফতরের পরামর্শ না নিয়ে কী ভাবে এই কাজ করা হল? এতে তো বিপদ বাড়ল!’’
অসুস্থ: অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতালের পথে। গ্যাস থেকে বাঁচতে মুখে কাপড়, গ্যাসমাস্ক।(খবর: কলকাতা) বেলুড়ে সোমবার।
গঙ্গাযাত্রাটাও মসৃণ ছিল না। সামনে পুলিশের গাড়ি, পিছনে দমকল ও অ্যাম্বুল্যান্স রেখে সিলিন্ডারটি নিয়ে যাওয়া হয়। লালাবাবু সায়র রোডে ঢুকতেই ফের গ্যাস বেরোতে শুরু করে। যে যে পাড়া দিয়ে সিলিন্ডারটি যায়, গ্যাস ছড়াতে থাকে। পুলিশ ও দমকল কর্মীদের ঘিরে শুরু হয় বিক্ষোভ, ধাক্কাধাক্কি। পড়ে গিয়ে এক দমকল কর্মীর মাথা ফাটে। তখন কেউ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পালানোর চেষ্টা করছেন, কারও শুরু হয়েছে বমি, শ্বাসকষ্ট। কেউ অচৈতন্য। গাছের পাতায় হলুদ ছোপ। যতক্ষণে সিলিন্ডার ফেলা হল গঙ্গায়, ততক্ষণে জোড়া দেওয়া ফাটল হাঁ! গঙ্গায় ফেলতেই জলের রঙ হলুদ। এক বার চেষ্টা হয়েছিল, তাকে পাড়ের দিকে সরিয়ে আনার। পারা যায়নি।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘পুরো কাজটাই বেআইনি। একেবারে অজ্ঞতার পরিচয়।’’ দমকলের অভিজ্ঞ অফিসারদেরও মত, ভেজা কাপড়ে সিলিন্ডারটি জড়িয়ে বড় জলের পাত্রে ফেলা উচিত ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy