খোঁজা হচ্ছিল ‘সামরিক প্রধান’-কে। তাকে পাওয়া গেল না। তবে তাকে খুঁজতে গিয়ে হাতে এসে গেল ‘অর্থমন্ত্রী’, যে কি না সামরিক প্রধানের ‘মুক্তিদাতা’-ও!
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত কওসর ওরফে বোমা মিজানই ছিল কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর মূল লক্ষ্য। কিন্তু তার সন্ধানে নেমে এসটিএফ পেয়ে গেল জঙ্গি সংগঠন জেএমবি (জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ)-র ছয় চাঁইকে, যাদের অন্যতম আনোয়ার হোসেন ওরফে ফারুক।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এই ফারুকের নেতৃত্বেই জেএমবি জঙ্গিরা ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে গুলি করে, গ্রেনেড হামলা চালিয়ে প্রিজন ভ্যান থেকে কওসর-সহ তাদের তিন নেতাকে ছিনিয়ে নিয়েছিল। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও এ দিন ঢাকায় জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে ধরা পড়া আনোয়ার হোসেন ফারুকই ত্রিশালে আসামি ছিনতাইয়ের হোতা জামাই ফারুক। সেই হামলায় এক পুলিশ নিহত হন। ফারুক সে হিসেবে কওসরের মুক্তিদাতা। জেএমবি-র তহবিলের বিষয়টিও সে-ই দেখাশোনা করত। এ বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশ পুলিশ ত্রিশালের প্রিজন ভ্যান আক্রমণ মামলায় ফারুক-সহ ১১ জঙ্গির বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে।
এসটিএফের এক তদন্তকারী অফিসার মঙ্গলবার বলেন, ‘‘কওসর আর পালাতে পারবে না। ওকে আমরা এ বার ধরবই।’’ গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ফারুকের ধরা পড়াই এই আত্মবিশ্বাসের কারণ। তা ছাড়া, এসটিএফ এখন সোমবার ধরা পড়া ইউসুফ গাজীর স্ত্রী আয়েষার খোঁজে অভিযান শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি-র নারী জঙ্গি বাহিনী তৈরি হয়েছিল আয়েষারই তত্ত্বাবধান ও প্রশিক্ষণে। সম্প্রতি বাংলাদেশে জেএমবি-র নারী বাহিনীর বেশ কয়েক জন পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। ধৃতদের অনেকে পশ্চিমবঙ্গে এসে আয়েষার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি।
ত্রিশালে হামলার পর থেকেই ফারুক বাংলাদেশে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’। তার জন্য বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০ লক্ষ টাকা (ভারতীয় মুদ্রায় ২৫ লক্ষ টাকার বেশি) ইনামও ঘোষণা করা হয় দু’বছর আগে। সে ক্ষেত্রে ওই ইনামেরও দাবিদার কলকাতা পুলিশ। ত্রিশালের ওই হামলায় কওসর ছাড়াও সালাউদ্দিন সালেহান ওরফে সানি ও রাকিবুল হাসানকে মুক্ত করেছিল ফারুক ও তার দল। রাকিবুল পরে পুলিশের গুলিতে মারা যায়।
খাগড়াগড়ের ঘটনার পরে বাংলাদেশ পুলিশ জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে জেএমবি-র সন্দেহভাজন ফেরারদের একটি তালিকা তুলে দেন। কলকাতা পুলিশের দাবি, ফারুক পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি-র প্রধান। তা হলে এনআইএ-র ‘ওয়ান্টেড লিস্ট’-এ ফারুকের নাম নেই কেন?
দিল্লি থেকে এনআইএ-র এক শীর্ষকর্তা এ দিন ফোনে বলেন, ‘‘আমরা ফারুকের নাম জানতাম। কিন্তু খাগড়াগড়় তদন্তে ওর নাম পাইনি। ও ভারতে আছে বলেও আমরা জানতাম না।’’ ওই অফিসারের বক্তব্য, ‘‘এখন মনে হচ্ছে, খাগড়াগড়ের ঘটনায় ফারুকের কোনও না কোনও ভূমিকা ছিলই।’’ এনআইএ-র আর এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘ওই ছ’জনকেই হেফাজতে নিতে আমরা আদালতে আবেদন করব। তখন ফারুককে জেরা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে।’’
ওই অফিসার জানান, ইউসুফ, কালাম ও রফিককে গ্রেফতার করার জন্য কলকাতা পুলিশ ১৪ লক্ষ টাকা ইনাম পাবে কি না, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ‘‘আগে আমরা হেফাজতে পেয়ে নিশ্চিত হই যে এরাই তারা, তার পর ইনামের প্রসঙ্গ।’’ এসটিএফের এক কর্তা এ দিন জানান, খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় ইউসুফ গাজীর নাম প্রধান কুশীলব হিসেবে উঠে আসে। তবে সংগঠনে ইউসুফের জায়গা ফারুকের নীচে। ওই গোয়েন্দা-কর্তা জানান, ফারুকের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ল্যাপটপে এমন একটি ফাইল আছে, যেটা সাধারণ ভাবে খোলা সম্ভব নয়, ওটির সঙ্কেত ভেদ করার চেষ্টা চলছে।
তদন্তে জানা গিয়েছে, জবিরুল ইসলামের নেতৃত্বে উত্তর-পূর্ব ভারতে জেএমবি-র স্লিপার সেলে ১০-১২ জন সদস্য আছে। জবিরুলের সঙ্গে কওসরের নিয়মিত যোগাযোগও ছিল। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, কাছাড় জেলার গুমড়ায় রীতিমতো ঘাঁটি গেড়েছিল জেএমবি। সেখানে জবিরুলের আশ্রয়দাতা আজিজুর রহমানকেও এ দিন অসম পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy