কর্মীদের নিজেই পরিবেশন শুরু করলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
খাওয়া-দাওয়ার এলাহি আয়োজন দেখে বিয়ের অনুষ্ঠান বলে ভ্রম হতেই পারে। মাঠের একটা বড় অংশ জুড়ে বিশাল মণ্ডপ। তার নীচে ভোজের ঢালাও আয়োজন। শুধু বসে নয়, ব্যবস্থা রয়েছে বুফেরও। অপেক্ষার কোনও বালাই নেই। খেতে ইচ্ছে হলে থার্মোকলের থালা নিয়ে সাজিয়ে রাখা নানা পদের দিকে এগিয়ে গেলেই হল। ভাত, ডাল, সব্জি, ডিমের তরকারি থেকে শেষ পাতে মিষ্টিমুখেরও আয়োজন। মিষ্টিতেও বৈচিত্র্য, রসগোল্লা থেকে পানতুয়া সবই রয়েছে। যার যেটা পছন্দ।
রবিবারের দুপুরে বনগাঁ শহরের খেলাঘর ময়দানে এমনই ভুরিভোজের সাক্ষী থাকলেন হাজার দশেক তৃণমূল নেতা কর্মী। এমন আয়োজন নতুন না হলেও এ দিনের ভোজসভার অভিজ্ঞতাটা অবশ্য কর্মীদের কাছে ছিল একেবারেই অন্যরকম। কারণ প্রেক্ষিতটাও যে একেবারেই ভিন্ন। এ দিনের আমন্ত্রণ এসেছিল যে একেবারে ‘দিদি’র কাছ থেকে। আয়োজনও ‘দিদি’র নিজের টাকায়। শেষ পাতে রসগোল্লা মুখে তুলতে তুলতে এক কর্মী বললেন, “ভাবতেই পারছি না দিদির টাকায় খাচ্ছি। দিনটার কথা জীবনেও ভুলতে পারব না।’’ ‘দিদি’ মানে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বনগাঁ লোকসভার উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মমতা ঠাকুরের বিপুল জয়ে বেজায় খুশি হয়ে বনগাঁ লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের নেতা কর্মীদের জন্য এদিন মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগত খরচে ভুরিভোজের আয়োজন করেছিলেন। এর মধ্যে পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রের কর্মীদের (বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ, বাগদা, গাইঘাটা ও স্বরূপনগর) খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল বনগাঁর খেলাঘর মাঠে। কল্যাণীতেও এ দিন খাওয়ানোর ব্যবস্থা হয়েছিল কল্যাণী ও হরিণঘাটা কেন্দ্রের কর্মীদের।
বনগাঁয় এই বিপুল আয়োজন গুরুভার যাঁর কাধে ছিল দলের সেই জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক শনিবার রাত থেকেই তাঁবু ফেলেছিলেন শহরে। যেখানে খাওয়ানো হবে সেই জায়গা ঘুরে দেখা থেকে ব্যানার, ফেস্টুনে কী লেখা হবে, কোথায় কোথায় তা টাঙানো হবে সবেতেই তাঁর উপস্থিতি। রাত জেগে কাজে দেখা গিয়েছে বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ককেও। সকালেও অক্লান্ত তিনি মাঠে জলের ব্যবস্থা করতে। দুপুর বারোটা থেকেই দূরদুরান্ত থেকে গাড়ি করে কর্মীরা আসতে শুরু করেন। খাওয়াদাওয়া শুরু হতেই তার তদারকিতে নেমে পড়েন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। ছিলেন জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ, বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজি দাস, বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক সুরজিত্ বিশ্বাস, বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান জ্যোত্স্না আঢ্য। টেবিলে টেবিলে ঘুরে বিয়ে বাড়ির বরকর্তার মতোই সকলে ঠিকমতো খাচ্ছেন কি না জনে জনে চলছিল জিজ্ঞাসা। এক সময় খাবার পরিবেশনে হাত লাগান খাদ্যমন্ত্রীও।
দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ এসে পৌঁছন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী। বললেন, “সকলে আজ একত্রিত হয়েছেন। গেট টুগেদার করছেন। আমি রাজ্য দলের পক্ষ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা দিতে এসেছি।” কিছুক্ষণ থেকে তিনি কল্যাণী রওনা দেন। তবে কোনওখানেই ভোজে অংশ নেননি তিনি। দিনের শেষে স্বস্তির চিহ্ন বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়কের চোখে-মুখে। বললেন, “এত বড় দায়িত্ব। দিদি খাওয়ালেন আমাদের মাধ্যমে। সব কিছু ভালভাবেই মিটেছে।” বিশ্বজিত্বাবু বলেন, “দিদি ছবি আঁকা আর বই বিক্রির টাকা থেকে এদিন কর্মীদের খাওয়ালেন। এমন অভিজ্ঞতা অতীতে কখনও হয়নি।” এক সময় মাইক ধরে জ্যোতিপ্রিয়বাবুর ঘোষণা, “ভোটের ফল ঘোষণার দিনই দিদি আমাকে বলেছিলেন তিনি নিজের টাকায় সব কর্মীকে খাওয়াতে চান। সেই মতো তিনি ব্যবস্থাও করেছেন।” এক সময় উপস্থিত সংবাদিকদের উদ্দেশ্যেও তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘না খেয়ে গেলে টিফিন বক্সে খাবার বাড়িতে স্ত্রী-মায়ের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে’।
তবে ভুরিভোজের আনন্দেও ছিল সতর্কবার্তা। জেলা সভাপতি সকলকে সর্তক করে দিয়ে বলেন, “সামনেই জেলার ২৩টি পুরসভার ভোট। কঠিন লড়াই না হলেও লড়াই করতে হবে। আপনারা তার জন্য প্রস্তুতি নিন। জমি ছাড়া যাবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy