মাটি বোঝাই ডাম্পারের ধাক্কায় দশ বছরের এক স্কুলছাত্রের জখম হওয়াকে ঘিরে শনিবার সকালে স্রেফ খেপে গেল উত্তর ২৪ পরগনার শাসন। এলাকা দিয়ে নিয়মিত মাটি পাচারের ডাম্পার চলাচল বন্ধ করার দাবিতে সরস্বতী পুজো বন্ধ করে এলাকার ছাত্রছাত্রী এবং মহিলারা কাঠের গুঁড়ি ফেলে পথ অবরোধ শুরু করেন। অবরোধ তুলতে গেলে পুজো মণ্ডপের বাঁশ খুলে পুলিশের উপরে চড়াও হয় পড়ুয়াদের একাংশ। মহিলারা ঝাঁটা এবং লাঠি নিয়ে পুলিশকর্মীদের মারধর করেন বলে অভিযোগ। পুলিশ গাড়ি ফেলে পালায়। জনতা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। ঘণ্টা দেড়েক অবরোধের পরে শাসন থানার আইসি-র প্রতিশ্রুতিতে অবরোধ ওঠে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ শাসনের সোনাকাটারিতে পাড়ার পুজোমণ্ডপে সরস্বতী পুজোয় অঞ্জলি দিতে বেরিয়েছিল পূর্ব বারাসত হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রাজকিশোর মণ্ডল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুজোমণ্ডপে দাঁড়ানো বছর দশেকের ছেলেটিকে সজোরে ধাক্কা মেরে পালায় মাটি বোঝাই ডাম্পার। রাজশেখর বারাসত জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা সঙ্কটজনক।
এমনিতেই মাটি-পাচারের ডাম্পার এলাকা দিয়ে যেতে দেওয়া হবে না বলে শাসনের কিছু গ্রামে স্থানীয় ভাবে প্রতিবাদ সংগঠিত হচ্ছে গত কয়েকমাস ধরে। গ্রামবাসীর বক্তব্য, ধানি-জমির মাটি কাটা নিষিদ্ধ। কিন্তু সরকারি বিধির তোয়াক্কা না করে তাঁদের এলাকায় মাটি কাটার যন্ত্র এবং ডাম্পার ঢুকিয়ে নিয়মিত মাটি কেটে নিচ্ছে পাচারকারীরা। গ্রামের রাস্তা দিয়ে নিত্যদিন মাটি বোঝাই ডাম্পার যাতায়াত করায় তাঁদের মাটির বাড়ি ধসে পড়ছে। ঘটছে দুর্ঘটনা। অথচ, পুলিশ সব জেনেও কোনও ব্যবস্থা নেয় না বলে ক্ষোভ এলাকাবাসীর। তাঁদের অভিযোগ, শাসন থানার প্রায় গায়েই এই মাটি পাচারে জড়িত ডাম্পারগুলি রাতে রাখা হয়। সেগুলি ধরা তো দূর, উল্টে ডাম্পারচালকদের সুবিধা করতে সেখানে ‘হুক’ করে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে পুলিশেরই একাংশের মদতে।
পুজো মণ্ডপের সামনে এ দিন দুর্ঘটনার পরে বেলিয়াঘাটা থেকে রাজারহাট যাওয়ার রাস্তায় শুরু হয় অবরোধ। দুর্ঘটনাস্থল থেকে বড়জোর দু’কিলোমিটার দূরে শাসন থানা। সেখান থেকে পুলিশকর্মীরা এসে অবরোধ তুলতে বললে আগুনে পেট্রোল পড়ে। পুলিশকর্মীদের দাবি, ছাত্রছাত্রীদের একাংশ পুজোমণ্ডপের বাঁশ খুলে তাড়া করে তাঁদের। ঝাঁটা-লাঠি নিয়ে চড়াও হন মহিলারা। এলাকার মহিলাদের চিৎকার করতে শোনা যায়, “কত বার পুলিশকে বলেছি, ‘এত স্কুল আছে, এই রাস্তা দিয়ে মাটি বোঝাই ডাম্পার যাওয়া বন্ধ করুন’। অথচ, চোখের সামনে পুলিশ মাটি পাচারের গাড়ি থেকে টাকা নেয়। আমাদের জীবনের কি দাম নেই!” অবরোধে সামিল ছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা তথা স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্য জয়দেব ঘোষ। তিনি বলেন, “ঘনবসতি এলাকা দিয়ে মাটি বোঝাই ডাম্পারের যাতায়াত বন্ধ না হলে, সমস্যা হচ্ছে। এতে জনরোষ বাড়ছে। কিন্তু কেউই সে সব গ্রাহ্য করছে না।”
পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন শাসন থানার আইসি নাসিম আখতার। আইসি জনতাকে অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করেন। জনতা দাবি করে, মাটির ডাম্পার ওই এলাকা দিয়ে চলবে না। আই সি ডাম্পার চলাচলে নিয়ন্ত্রণের মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ উঠে যায়। পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করেননি আইসি। তবে উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “এই মাটি কাটা নিয়ে জেলা পুলিশকে কোনও অভিযোগ জানানো হয়নি।” তা হলে কি ঘটনায় পুলিশের কোনও দায় নেই? অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের জবাব, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মাটি বোঝাই ডাম্পারের চলাচলের উপরে নজরদারি চালাব। এ দিন বাচ্চাটিকে ধাক্কা মারায় অভিযুক্ত চালকের খোঁজ চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy