Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

খেতের মাটি কেটে পাচার চলছে ডাম্পারে

সোমবার বিকেল ৩টে। উত্তর ২৪ পরগনার শাসন থানার কীর্তিপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোটপুল এলাকা। কাঁচকল-রাজারহাট রোডের এক দিকে বিশাল ভেড়ি, অন্য পাশে ইটভাটা। সেখানে গিয়ে মনে হল, যেন দক্ষযজ্ঞ চলছে। পেল্লায় আকারের যন্ত্র মাটি কেটে নিচ্ছে। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রায় ২০টি ডাম্পার এবং ‘শক্তিমান’ লরি। ভেড়ি বা নিচু জমি নয়, কৃষিজমি থেকেই মাটি কেটে বোঝাই করা হচ্ছে গাড়িতে।

অবাধ মাটি কাটা চলছে শাসন এলাকায়। পুলিশের গাড়ির সামনেই তা বোঝাই করা হচ্ছে লরিতে (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

অবাধ মাটি কাটা চলছে শাসন এলাকায়। পুলিশের গাড়ির সামনেই তা বোঝাই করা হচ্ছে লরিতে (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শাসন শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৫৪
Share: Save:

সোমবার বিকেল ৩টে। উত্তর ২৪ পরগনার শাসন থানার কীর্তিপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোটপুল এলাকা। কাঁচকল-রাজারহাট রোডের এক দিকে বিশাল ভেড়ি, অন্য পাশে ইটভাটা। সেখানে গিয়ে মনে হল, যেন দক্ষযজ্ঞ চলছে। পেল্লায় আকারের যন্ত্র মাটি কেটে নিচ্ছে। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রায় ২০টি ডাম্পার এবং ‘শক্তিমান’ লরি। ভেড়ি বা নিচু জমি নয়, কৃষিজমি থেকেই মাটি কেটে বোঝাই করা হচ্ছে গাড়িতে। শাসন থানার সামনে দিয়ে মাটি বোঝাই সেই ডাম্পার-লরি চলে যাচ্ছে বেলিয়াঘাটার ইটভাটায়। কোথাও কোনও বাধা নেই।

কৃষিজমির মাটি কোনও অবস্থাতেই কাটা যাবে না। এটাই নিয়ম। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) বিজিত ধর অবশ্য এ দিন বলেন, “কৃষিজমির মাটি কাটা যাবে না। অন্যত্র মাটি কাটতে গেলে কতটা মাটি কাটা হবে, তার তথ্য জানিয়ে সরকারকে রাজস্ব দিয়ে মাটি কাটার অনুমতি নিতে হয়।” শাসনের ছোট পুলে ঠিক কী হচ্ছে, সেই ব্যাপারে খোঁজখবর করা হবে বলে জানিয়েছেন বিজিতবাবু। এ সব নিয়ম-নীতি নিয়ে অবশ্য প্রায় নির্বিকার বারাসত ২ নম্বর ব্লকে শাসন এলাকার মাটি-মাফিয়ারা। নির্বিকার ভাবে চলা এমন ডাম্পারের তলায় চাপা পড়েই শাসন থানার কাছে গত সোমবারই মারা যান বাদুড়িয়ার যুবকা উত্তম বিশ্বাস। অবাধে মাটি কাটা ও নির্বিকারে ডাম্পার চালানোর প্রতিবাদে অবরোধ করেন এলাকার মানুষ। তারপর থেকে অবশ্য বন্ধ ছিল মাটি কাটার কাজ, ডাম্পারের অবাধ যাতায়াত। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, দু’দিন বন্ধ থাকার পরে ফের শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে মাটি কাটা। শাসন থানার সামনে পুলিশ অন্য গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করছে। অথচ, মাটি বোঝাই ডাম্পার পুলিশের সামনে দিয়েই সোজা বেরিয়ে যাচ্ছে। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, মাটি পাচারে ব্যবহৃত ডাম্পারগুলি রাখা থাকে শাসন থানার অদূরে। রাতের অন্ধকারে সেই সব গাড়ি পার্ক করার অসুবিধা কাটাতে থানার সামনেই একটি গাছে লাগানো হয় হ্যালোজেনের আলো। অভিযোগ, তাও ‘হুক’ করে।

বারাসত ২ ব্লকে ৭টি পঞ্চায়েতের পাঁচটিশাসন, ফলতি-বেলিয়াঘাটা, দাদপুর, কীর্তিপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকায় বেআইনি ভাবে মাটি কাটার কাজ চলে বলে অভিযোগ। শুধু ভেড়িই নয়, কৃষিজমির মাটি কাটা হয়। সে মাটি ব্লকের ইটভাটাগুলির একাংশ ছাড়াও, বসিরহাট, বাদুড়িয়ায় চলে যায়। মাটি পাচারের এই অভিযোগ শাসনে নতুন নয়। বাম আমল থেকেই অবৈধ ভাবে মাটি কাটা হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল নেতারা। অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য ও সিপিএমের বারাসত ২ নম্বর জোনাল কমিটির নেতা মহম্মদ কুতুবউদ্দিনের পাল্টা দাবি, “এই জমানায় কোটি-কোটি টাকার মাটি অবৈধ ভাবে কাটা হচ্ছে। বছরখানেক হল আমরা মাটি পাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ, এ সব নিয়ে প্রতিবাদ করে আর লাভ হয় না।”

কেন লাভ হয় না?

কুতুবুদ্দিনের দাবি, “মাটি পাচারের ব্যবসা এখন তৃণমূলের কিছু নেতা পরিচালনা করছেন। আর শাসক দলের উপরমহলের নেতা থেকে শুরু করে ভূমিসংস্কার দফতর, পুলিশ টাকার ভাগ পাচ্ছে।” টাকা নেওয়ার অভিযোগ মানেনি পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “মাটি কাটার বিষয় অভিযোগ জানানোর কথা ভূমি ও ভূমি সংস্কারের দফতরের। আর ডাম্পারের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” অভিযোগ মানেনি ভূমি সংস্কার দফতর।

অন্য দিকে, শাসক দলের তরফে বারাসত ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মেহেদি হাসান দাবি করেছেন, শাসনের কোনও এলাকাতেই অবৈধ ভাবে মাটি কাটা হয় না। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “সিপিএম নেতারা এসে দেখিয়ে দিন, কোথায় অবৈধ ভাবে মাটি কাটা হচ্ছে!” তা হলে ছোটপুলে কী ঘটছে? মেহেদি হাসানের বক্তব্য, “ওখানে ভেড়ির মধ্যে একটি ইটভাটা ছিল। ইটভাটা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বলে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে।” তা কি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে বলা হয়েছে? মেহেদির জবাব, “অতশত জানি না।”

অন্য বিষয়গুলি:

sasan arunaksha bhattacharya smuggling soil
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE