কোনও নেতা তোলাবাজি করলে তার দায় দল নেবে না। শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার দলীয় নেতা-বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে এ কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারের উন্নয়ন নিয়ে প্রচার না করে কিছু নেতা নিজের স্বার্থে দলকে ভাঙাচ্ছেন, সে কথা উল্লেখ করেও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা।
তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি, এ দিন মমতা দাঁড় করিয়ে ধমক দেন দলের কিছু নেতাকে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ না করলে দল থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে ধমক দেন বনগাঁর বিধায়ক ও পুরপ্রধানকে। সরকারি পরিষেবায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করার জন্য সন্দেশখালির এক নেতাকে কড়া ভর্ৎসনা করেন। এ দিন বৈঠকের পর দীর্ঘক্ষণ নেতারা ফের আলোচনা করেন জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে।
বৈঠকে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তেমন একাধিক নেতা-জনপ্রতিনিধির দাবি, সন্দেশখালির নেতা শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মমতা। তিনি জানান, শেখ শাহজাহান সরকারের দেওয়া বাস রুট বন্ধ করে দিয়েছে বলে তাঁর কানে এসেছে। সে কত বড় ‘মস্তান’ হয়েছে যে, সরকারের দেওয়া বাস রুট বন্ধ করে সেখানে অটো রিকশা চালানোর ব্যবস্থা করেছে, তার কৈফিয়ত চান দলনেত্রী। অবিলম্বে এ সব বন্ধ করার নির্দেশও দেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চার মাস আগে সন্দেশখালির ধামাখালি থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং পর্যন্ত বাস রুটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। শেখ শাহজাহানের নির্দেশে সেখানে বাস চলাচল বন্ধ করে অটো চালানো হচ্ছিল বলে অভিযোগ। এ নিয়ে স্থানীয় একটি পত্রিকায় খবর লেখায় শাহজাহানের সাঙ্গোপাঙ্গেরা এক সাংবাদিককে মারধর করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দলীয় সূত্রে খবর, এই ঘটনা দলের নেতাদের থেকেই জানতে পারেন মমতা। বাস মালিকদের তরফেও তাঁকে জানানো হয়। বৈঠকে উপস্থিত তৃণমূল নেতাদের কয়েক জনের দাবি, রীতিমতো ধমকের সুরে নেত্রী জানতে চান, কে শেখ শাহজাহান? শাহজাহান উঠে দাঁড়ালে নেত্রী তাঁকে জানান, দলে থেকে মস্তানি করা যাবে না। ভবিষ্যতে এমন হলে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।
শেখ শাহজাহান অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর তিরস্কারের কথা অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে পরে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ধামাখালি আর দক্ষিণ ২৪ পরগনার মধুখালির মধ্যে বাস পরিষেবা শুরু হবে ৭ জানুয়ারি। বাস এবং অটো দু’টোই যাতে চলে, উনি আমাকে তা দেখতে বলেছেন। এ ব্যাপারে আর কিছুই বলেননি।’’
দলীয় সূত্রের দাবি, এ দিন মমতার তিরস্কারের মুখে পড়েন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস এবং বনগাঁর পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য। তাঁদের দু’জনকে উঠে দাঁড়াতে বলেন মমতা। তাঁরা উঠে দাঁড়াতেই মমতা দু’জনকে নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল বন্ধ করতে বলেন। জানিয়ে দেন, এটাই তাঁর ‘শেষ ওয়ার্নিং’, এর পরে গণ্ডগোল করলে দু’জনকেই দল থেকে বের করে দেবেন। ওই দু’জনকে যাঁরা মদত দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে হুঁশিয়ারি দেন নেত্রী। দুই নেতাই মাথা নিচু করে বসে পড়েন।
বনগাঁর বিধায়ক ও পুরপ্রধানের বিরোধ মূলত বনগাঁ পুর এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা নিয়ে। এর আগেও দলের জেলা সভাপতি ওই দুই নেতাকে নিয়ে বৈঠক করেছেন গোলমাল মেটাতে। দলীয় সূত্রের দাবি, জেলার এক প্রভাবশালী নেতা শঙ্করবাবুকে মদত দিচ্ছেন। বৈঠকের পরে অবশ্য দুই নেতাই দাবি করেন, মমতা তাঁদের কোনও রকম কড়া কথা বলেননি। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘সতর্ক করা বা ভর্ৎসনা করার কোনও ঘটনা ঘটেনি।’’ শঙ্করবাবুর বক্তব্য, ‘‘নেত্রী আমাদের এক সঙ্গে উন্নয়নমূলক কাজ করার কথা বলেছেন।’’
সন্দেশখালি, হাড়োয়া ও মিনাখাঁয় মেছোভেড়ির টাকা নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না বলেও ওই সব এলাকার নেতাদের সতর্ক করেছেন তৃণমূল নেত্রী। দলের জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং জেলায় দলের পরিদর্শক নির্মল ঘোষের কথা শুনে চলার নির্দেশও দিয়েছেন সকলকে।
কেউ যাতে দলের উন্নয়নমুখী কাজকে ‘নিজের কাজ’ বলে চালানোর চেষ্টা না করেন, সে ব্যাপারেও মমতা হুঁশিয়ার করেছেন। দলের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, এ দিন বৈঠকে মূলত সংগঠন জোরদার করা এবং উন্নয়ন কর্মসূচি প্রচার করার উপরেই জোর দেন দলনেত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy