ছেলের সঙ্গে সুলেখা ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।
হঠাৎই একদিন অ্যাকাউন্টে ঢোকে দশ লক্ষ টাকা। ব্যাঙ্কের মেসেজ পেয়ে অবাক হাসনাবাদের রামেশ্বরপুর গ্রামের বাসিন্দা সুলেখা ঘোষ। কিছু বুঝে ওঠার আগে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে জানা যায়, দেশের অন্যত্র হওয়া কোনও বড় প্রতারণার টাকা ঢুকেছিল ওই অ্যাকাউন্টে। তদন্তের স্বার্থে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অ্যাকাউন্ট। ওই ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত আধার নম্বর ব্যবহার করে অন্য অ্যাকাউন্ট খোলার পথও আপাতত বন্ধ।
এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়েছেন সুলেখা। আট বছরের ছেলেকে নিয়ে একাই থাকেন বিধবা। ব্যাঙ্কে জমানো কিছু টাকা ছিল। কিন্তু অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই টাকা মিলছে না। সরকারি প্রকল্পের আর্থিক সুবিধাও পাচ্ছেন না। ছেলেকে নিয়ে ঠোঙা তৈরি করে কোনও রকমে দিন কাটছে বছর পঁয়তাল্লিশের মহিলার।
সুলেখা জানান, ২০২০ সালের ২২ এপ্রিল একটি এসএমএস আসে। তাতে লেখা ছিল, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ লক্ষ টাকা ঢুকেছে। এরপরে মধ্যপ্রদেশের ভোপাল সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চ থেকে তাঁর অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করে দেওয়া হয়।
সুলেখা হিঙ্গলগঞ্জের যে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কে তাঁর অ্যাকাউন্ট ছিল, সেখানে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে একই কথা জানানো হয়। তারপর থেকে প্রায় দেড় বছর বন্ধই পড়ে রয়েছে সুলেখার অ্যাকাউন্ট। অভিযোগ, বার বার ওই ব্যাঙ্কের শাখায় অনুরোধ করে, লিখিত আবেদন দিয়েও সমস্যার সমাধান হয়নি। ২ সেপ্টেম্বর আরও একবার ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের কাছে লিখিত ভাবে অ্যাকাউন্ট খোলার আবেদন করেছেন সুলেখা। খোঁজ নিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তারা জানতে পেরেছেন, কোনও ব্যাঙ্ক জালিয়াতির টাকা ওই অ্যাকাউন্ট-সহ দেশের বিভিন্ন শহরের বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। সেই ঘটনার তদন্তের স্বার্থে ভোপাল পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা সুলেখার আধার কার্ড নম্বর-সহ অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করে দেয়। এ ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের কিছু করার নেই বলেই জানান কর্তারা। আপাতত নিজের আধার কার্ড দিয়ে নতুন অ্যাকাউন্টও খুলতে পারবেন না সুলেখা।
তিন বছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় সুলেখার স্বামীর। স্বামীর জমানো প্রায় দেড় লক্ষ টাকা ছিল ওই অ্যাকাউন্টে। সেই টাকা তুলতে পারছেন না সুলেখা। বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু অ্যাকাউন্ট না থাকায় সেই টাকাও মিলছে না। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের জন্যও আবেদন করতে পারছেন না। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আপাতত ঠোঙা তৈরি করে আর মেয়েদের সাহায্যে কোনও রকমে দিন কাটছে মা-ছেলের।
সুলেখা জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পরে ছেলের পড়াশোনার জন্য একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে মাসে ২ হাজার টাকা করে পেতেন। সে জন্য সুলেখা ও তাঁর ছেলের একটি যৌথ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল অন্য একটি ব্যাঙ্কের হাসনাবাদ শাখায়। কিন্তু সেটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে ওই টাকাও আর তুলতে পারছেন না।
সুলেখা বলেন, “যে ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে এত জটিলতা, সেই টাকা আমার চাই না। আমার যে জমানো টাকা ছিল, সেটা অন্তত তুলতে দেওয়া হোক। নতুন অ্যাকাউন্টও খোলা যাচ্ছে না। বলছে, অ্যাকাউন্ট খুললে সেটাও ফ্রিজ হয়ে যাবে। নতুন অ্যাকাউন্ট হলে অন্তত সরকারি প্রকল্পের কিছু টাকা মিলত। যা পরিস্থিতি, তাতে তদন্ত শেষ হতে কত বছর লাগবে জানি না।”
হাসনাবাদের বিডিও মুস্তাক আহমেদ বলেন, “আমরা দেখছি কী ভাবে এই পরিবারকে সাহায্য
করা যায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy