রাত বাড়লেই এই রাস্তার দু’পাশেই চলে হেরোইনের কারবার। নিজস্ব চিত্র।
হেরোইনের খুচরো কারবারের হাত ধরে ফের দুষ্কৃতীরা সক্রিয় হচ্ছে বলে মনে করছেন বনগাঁর বক্সীপল্লি, সিকদারপল্লি ও সুভাষপল্লি এলাকার বাসিন্দারা। এ নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে এলাকায়। এক সময়ে বোমা-গুলি, একের পর এক খুনের ঘটনায় তটস্থ থাকতেন ওই তিন এলাকার বাসিন্দারা। গত ন’বছরে তল্লাট অনেকটাই শান্ত হয়েছে। কিন্তু তাল কাটল সোমবার। বক্সীপল্লির একটি গণশৌচাগারে বোমা বিস্ফোরণে রাজু রায় নামে এক বালকের প্রাণহানি ঘটেছে। আটটি বোমা উদ্ধার হয়েছে। এ সবের জেরে অতীতে আতঙ্কের স্মৃতি ফিরে আসছে অনেকের মনে।
বক্সীপল্লি, সিকদারপল্লি ও সুভাষপল্লি এলাকায় মানুষের নিরাপত্তা বাড়াতে সিসি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা করেছে বনগাঁ পুরসভা। পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘ওই তিনটি এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড়, রাস্তায় ঢোকা-বেরোনোর পথে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।’’ এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সুনসান পরিবেশ। অভিভাবকেরা ছোট ছেলেমেয়েদের বাড়ির বাইরে বেরোতে দিচ্ছেন না। এক মহিলার কথায়, ‘‘আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা চাই।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এখন সন্ধ্যার পর থেকে এলাকার পরিবেশ পাল্টে যায়। নিয়মিত গাঁজা-হেরোইনের ঠেক বসে। বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়ে। অনেকের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকে। মুর্শিদাবাদ, রানাঘাট, বসিরহাট থেকে এখানে হেরোইন নিয়ে আনা হয় বলে অভিযোগ। ১ নম্বর রেলগেট এলাকা থেকে সিকাদারপল্লি পর্যন্ত যশোর রোডের দু’পাশ হেরোইন কারবারিদের দখলে চলে যাচ্ছে বলেও জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। স্টেশন রোড এলাকাতেও কারবার চলে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। হেরোইনের নেশার টানে দূরদূরান্ত থেকে হাজির হয় অনেকে। মোবাইলে ফোন করে অর্ডার দিলেও কারবারিরা পৌঁছে দেয় মাদক-পুরিয়া।
এলাকার মানুষের অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতাদের মদতে হেরোইনের রমরমা কারবার চলছে। এ সব বন্ধ করতে পুলিশ উদাসীন। নজরদারি সে ভাবে দেখা যায় না। বাসিন্দারা প্রতিরোধ-প্রতিবাদ করারও সাহস পান না।
হেরোইন বিক্রি হয় দেশলাই কাঠির ওজন হিসাবে। একটি দেশলাই কাঠির ওজনের পরিমাণ হেরোইন বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়। আড়াইটি দেশলাই কাঠির ওজনের সমপরিমাণ হেরোইনের মূল্য ৬০০ টাকা। প্রচুর কাঁচা টাকা উড়ছে এই কারবারে। ওই টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে কারবারিদের মধ্যে রেষারেষি চলে। অভিযোগ, সে কারণেই আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা মজুত করে রাখে দুষ্কৃতীরা।
বক্সীপল্লি, সিকদারপল্লি-সহ বনগাঁ শহরের বিভিন্ন এলাকায় চলা হেরোইনের কারবার নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। বনগাঁ শহরের বাসিন্দা তথা বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়ার অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল নেতা ও পুলিশের প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া হেরোইনের রমরমা কারবার চলতে পারে না৷’’ সিপিএমের বনগাঁ শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুমিত কর বলেন, ‘‘আমরা খবর পেয়েছি, বনগাঁ শহর জুড়ে আবার সমাজবিরোধীদের দাপাদাপি শুরু হয়েছে। হেরোইনের কারবার-সহ চোরাচালান বাড়ছে। বক্সীপল্লি এলাকা দুষ্কৃতীদের অন্যতম বিচরণক্ষেত্র।’’ সুমিতের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের প্রত্যক্ষ মদতে বেআইনি কার্যকলাপ চলছে। বনগাঁয় তৃণমূলকে যাঁরা নেতৃত্ব দেন, তাঁরা সমাজসেবীর ছদ্মবেশে সমাজবিরোধী। ফলে পুলিশ-প্রশাসনও কিছু করছে না।’’
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেসের মানবাধিকার বিভাগের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বালকের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে বনগাঁ থানায় স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বনগাঁ শহরের বাসিন্দা তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি (গ্রামীণ) কৃষ্ণপদ চন্দ বলেন, ‘‘শাসকদলের একাংশের মদতে হেরোইন-সহ বিভিন্ন মাদকের করবার চলছে শহর জুড়ে। এদের মধ্যে প্রায়ই রেষারেষি, গোলমাল বাধে। এই সব কারবারিরা নিজেদের রক্ষা করতে বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করে। পুলিশের উচিত, বক্সীপল্লির মানুষ যাতে শান্তিতে থাকতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’’
যদিও তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘ ২০১১ সালের পর থেকে আমরা বনগাঁ শহরে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য, মাদক পাচার বন্ধ করে দিতে পেরেছিলাম। বিজেপি এখানে জেতায় দুষ্কৃতী ও মাদক কারবারিরা ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। পুলিশকে বলেছি, বেআইনি ভাবে মজুত আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা উদ্ধার করার পাশাপাশি হেরোইন কারবারিদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।’’
পুলিশ জানিয়েছে, হেরোইন কারবারিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। কারবারিদের নিয়মিত গ্রেফতারও করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy