Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

হিঙ্গলগঞ্জে নিজের বাড়িতে খুন শিক্ষিকা

সকাল ৭টায় পাঠশালা শুরু। কিন্তু অনেক ক্ষণ কাটলেও শিক্ষিকা না আসায় বাড়িতে খোঁজ নিতে গিয়ে কচিকাঁচারা দেখে, মেঝেতে পড়ে ‘দিদিমনি’র রক্তাক্ত দেহ। মাথা, সারা শরীরে ক্ষত। বালিশ-বিছানায় রক্ত। দেওয়াল-জানলায় রক্তের ছোপ। উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ থানার কনকনগরে সোমবার সকালে এই অবস্থায় মেলা দেহটি ফুলরেণু সরকারের (৪২)। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। রিপোর্ট মিললে শিক্ষিকার উপরে অত্যাচার হয়েছিল কি না, তা জানা যাবে বলে জানান এসডিপিও (বসিরহাট) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০২:৪৮
Share: Save:

সকাল ৭টায় পাঠশালা শুরু। কিন্তু অনেক ক্ষণ কাটলেও শিক্ষিকা না আসায় বাড়িতে খোঁজ নিতে গিয়ে কচিকাঁচারা দেখে, মেঝেতে পড়ে ‘দিদিমনি’র রক্তাক্ত দেহ। মাথা, সারা শরীরে ক্ষত। বালিশ-বিছানায় রক্ত। দেওয়াল-জানলায় রক্তের ছোপ।

উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ থানার কনকনগরে সোমবার সকালে এই অবস্থায় মেলা দেহটি ফুলরেণু সরকারের (৪২)। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। রিপোর্ট মিললে শিক্ষিকার উপরে অত্যাচার হয়েছিল কি না, তা জানা যাবে বলে জানান এসডিপিও (বসিরহাট) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশের অনুমান, প্রবল আক্রোশের বশে হামলা চালানো হয়েছে। বার বার আঘাত করা হয়েছে মহিলার মুখে। হাতের উপরের অংশে কামড়ের দাগ মিলেছে।

বেলুড় মঠ ও মিশনের শাখা সান্ডেলের বিল রামকৃষ্ণ সেবাসঙ্ঘের গদাধর পাঠশালায় ছোটদের পড়াতেন ফুলরেণুদেবী। একটি অর্থলগ্নি সংস্থায় এজেন্টের কাজও করতেন। থাকতেন পাঠশালা থেকে শ’তিনেক মিটার দূরে নিজের বাড়িতে। সকালে বাড়িতে গিয়ে পড়ুয়ারা দেখে, সামনের দরজা বন্ধ। কিন্তু এক পাশের দরজা খোলা। দরজা ঠেলে ঢুকে দিদিমনিকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পড়ুয়ারা খবর দেয় মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী দেবব্রতানন্দকে। পুলিশ যায়। আসেন শিক্ষিকার স্বামী, ছেলে এবং অন্য আত্মীয়েরা।

নিহত মহিলার স্বামী দীনবন্ধু সরকার কাজ করেন বেলুড় মঠের হস্টেলে। ছুটিছাটায় আসেন স্ত্রী-র কাছে। দম্পতির বছর বাইশের একমাত্র ছেলে শঙ্কর পড়াশোনার সূত্রে থাকেন কলকাতায়। দিন কয়েক আগে তিনি এসেছিলেন বাড়িতে। ফেরেন রবিবার। দীনবন্ধু মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন। তারই মধ্যে জানান, প্রায় প্রতিদিনই রাত ৮টা নাগাদ স্ত্রী-র মোবাইলে ফোন করেন তিনি। রবিবারও করেছিলেন। কিন্তু ফোন বেজে যায়। তিনি বলেন, “কেন এমন হল বুঝতে পারছি না!” শঙ্কর বলেন, “মা প্রায়ই বলত, কিছু লোক চায়, আমরা এলাকা ছেড়ে চলে যাই। তারা কারা জানতে চাইলে, চুপ থাকত।” ফুলরেণুর বাপেরবাড়ির দাবি, পুকুরের মাছ চুরি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা কিছু আত্মীয়ের সঙ্গে কিছু দিন আগে সরকার পরিবারের মনোমালিন্য হয়েছিল। মিটেও গিয়েছিল। এই খুনের সঙ্গে তার কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা বুঝতে পারছেন না তাঁরা।

পড়শিরা জানান, রবিবার সন্ধ্যায় ফুলরেণু দোকান-বাজার করেছেন। ওই শিক্ষিকা কিছু দিন ধরেই বলছিলেন, তাঁর বাড়ি থেকে হাঁস-মুরগি চুরি যাচ্ছে। বাড়িতে কে বা কারা ঢিলও মেরেছে বহু বার। তার সঙ্গে এই কাণ্ডের সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা নিয়ে জল্পনার পাশাপাশি সিআইডি-তদন্তের দাবি তোলেন তাঁরা। স্বামী দেবব্রতানন্দও বলেন, “খুবই নম্র, ভদ্র স্বভাবের ছিলেন শিক্ষিকা। কেন এই খুন, সিআইডি দেখুক।”

পুলিশের অনুমান, একতলার কাঠের দরজার খিল ভেঙে ভিতরে ঢুকেছিল আততায়ী বা আততায়ীরা। খাটের উপরেই হামলা করা হয় ফুলরেণুদেবীর উপরে। তিনি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ধস্তাধস্তি হয়। ঘরের নানা জায়গায়, জানলার লোহার রডে রক্তমাখা হাতের ছাপ মিলেছে। ঘরে একটি বড় ভাঙা টর্চ মিলেছে। সেটি ওই শিক্ষিকার বলেই জানান তাঁর স্বামী। মহিলা ওই টর্চ দিয়ে পাল্টা ঘা মারায় সেটি ভেঙেছে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, শিক্ষিকার বাড়ি তুলনায় নির্জন এলাকায়। আশপাশে বাড়ি নেই। সেই জন্যই মহিলার চিৎকার কেউ শুনতে পাননি। ঘরের জিনিসও নাড়াচাড়া করা হয়নি। জিনিস খোওয়া গিয়েছে বলেও মনে হচ্ছে না। আলমারি বন্ধ ছিল। সব দেখে পুলিশের অনুমান, এই খুনের পিছনে পুরনো শত্রুতা থাকার সম্ভাবনা অনেকটাই।

অন্য বিষয়গুলি:

fulrenu sarkar teacher murder kanaknagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy