Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Arsenic

অধরা সুরাহা,আর্সেনিক দূষণে জেরবার জেলা

আগে নলকূপের জল পানীয় হিসাবে ব্যবহার করতেন মানুষ। ফলে আর্সেনিক বিষ ঢুকেছে শরীরে। এখন অবশ্য গ্রামে গ্রামে পানীয় জলের গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

সীমান্ত মৈত্র 
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:২৮
Share: Save:

জলই জীবন। জলেই মত্যু।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় মোট ২২টি ব্লক। আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটি সূত্রের খবর, এর মধ্যে ২১টি ব্লকই কমবেশি আর্সেনিক প্রভাবিত। আর্সেনিক সমস্যা জেলায় নতুন নয়। আর্সেনিক বিষে মৃত্যু— নতুন নয় তা-ও। চলতি বছরেই এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ১৫ জন। লক্ষাধিক মানুষ এখনও আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত। প্রায় ১৫ হাজার মানুষ ভুগছেন আর্সেনিক দূষণ সংক্রান্ত নানা রোগে। সমস্যার যে কোনও চটজলদি সমাধান নেই তা মানছে প্রশাসন। তবে আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটির মতে, দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থার পাশাপাশি ছোট ছোট কিছু কাজ করা গেলে সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।

আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটির রাজ্য সম্পাদক অশোক দাস বলেন, ‘‘আর্সেনিক প্রবণ এলাকায় সরকারের প্রথম কাজ, মানুষকে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা।’’ কী ভাবে হবে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা? সরকার ভূগর্ভস্থ জলকে আর্সেনিক মুক্ত জলের জন্য ব্যবহার করছে। কিন্তু ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিকের পরিমাণ অনেক বেশি। একমাত্র ভূপৃষ্ঠস্থ জলকে আর্সেনিক মুক্ত জল হিসাবে ব্যবহার করলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব। কিন্তু সরকার তা না করাতে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে আর্সেনিক বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন।

আগে নলকূপের জল পানীয় হিসাবে ব্যবহার করতেন মানুষ। ফলে আর্সেনিক বিষ ঢুকেছে শরীরে। এখন অবশ্য গ্রামে গ্রামে পানীয় জলের গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। রয়েছে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের প্ল্যান্টও। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, গভীর নলকূপের জলেও উচ্চমাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে। জল নিয়মিত পরীক্ষাও হয় না। তাই বাড়ছে সমস্যা। আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটির তরফে অশোক বলেন, ‘‘অতীতে পিজি হাসপাতালে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল এখন আর তা নেই। রোগীদের শনাক্ত করে চিকিৎসা ওষুধ ও ভিটামিনের ব্যবস্থা করা হয় না। এসবের ফলেই মানুষ মারা যাচ্ছেন।’’

আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত হয়ে দুই ভাইকে আগেই হারিয়েছেন গাইঘাটা ব্লকের বাসিন্দা ভীম বিশ্বাস। ভীম নিজেও আক্রান্ত। তিনি এখন আর কাজ করতে পারেন না। শরীর খুবই দুর্বল। চর্মরোগ সারা শরীরে। মাঝে মধ্যেই জর হয়। ভীমের কথায়, ‘‘আগে বাড়ির সাধারণ নলকূপের জল পানীয় হিসাবে ব্যবহার করতাম। ওই জল খেয়েই আমাদের শরীরে আর্সেনিক বিষ ঢুকেছিল। আমি নিজেও ক্যানসারে আক্রান্ত। অস্ত্রোপচার করিয়েছি নিজের টাকায়। এখন স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ওষুধ খাই। টাকার অভাবে ভিটামিন প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে পারি না।’’

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ জ্যোতি চক্রবর্তী জানালেন, জেলায় ৩২৪ টি আর্সেনিক আয়রন ব্যাকটেরিয়া ও ম্যাগনেশিয়াম মুক্ত প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জ ও হাসনাবাদ ব্লকে প্রায় ১১ কোটি টাকা খরচ করে নোনা জল মিষ্টি জলে পরিণত করে তা আর্সেনিক মুক্ত করার ৩৩টি প্রকল্প হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্কুলে ২০৭টি প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে। চলতি বছরে গাইঘাটা ব্লককে আর্সেনিকমুক্ত হিসাবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে নৈহাটি থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গঙ্গার জল নিয়ে আনবার কাজ চলছে। ওই জল পরিস্রুত করে পানীয় হিসাবে গাইঘাটা দেগঙ্গা হাবড়া অশেকনগর বারাসত-সহ সাতটি পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হবে।

আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটির তরফে, জেলার বেশ কয়েকটি গভীর নলকূপের জল সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে তাতে আর্সেনিকের উপস্থিতি স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি। পাইপ লাইনের জলেরও একই অবস্থা। কমিটির দাবি, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মতে, প্রতি লিটার জলে ০.০১ মিলিগ্রামের বেশি আর্সেনিক থাকলে তা খাওয়া যায় না। রান্নার কাজেও ব্যবহার করা যায় না। এখানে ওই সীমা অতিক্রম করেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Arsenic drinking water Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy